জীবনের ৩৭তম বসন্তে মুশফিকুর রহিম
সাজানো গোছানো টেকনিক, পরিপাটি ব্যাটিং শৈলি আর নিশ্ছিদ্র ডিফেন্স- ক্রিকেট ব্যাকরণের সব শট খেলার সহজাত সামর্থ্যের অধিকারী তিনি। বলছি ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিমের কথা। সময়ের প্রবাহতায় যিনি আজ দেশের অন্যতম সেরা, সফল ও স্বার্থক উইলোবাজ। মিস্টার ডিপেন্ডেবল খ্যাত এই ক্রিকেটার ৩৬ বসন্ত পেরিয়ে ৩৭-এ পা দিলেন আজ।
ধৈর্য, অধ্যবসায় ও একাগ্রতার প্রতিমূর্তি মুশফিকুর রহিম। উইকেটরক্ষক এই ব্যাটার বর্তমানে দলের ব্যাটিংয়ের অন্যতম স্তম্ভ। নিজ গুণে ব্যাট হাতে বাইশগজে ভরসার অন্য নাম হয়ে উঠেছেন মুশফিক। দলকে এখনও বড় কোনো শিরোপা জেতাতে না পারওে দেশের ক্রিকেটে মুশফিকের অবদান কম নয়।
১৯৮৭ সালের ৯ মে বগুড়ায় জন্মগ্রহণ করেন মুশফিক। তিনি বগুড়া জিলা স্কুল এবং বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) ছাত্র ছিলেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক, স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। ইতিহাসের ছাত্র মুশফিকুর রহিম এখন একই বিদ্যাপীঠ থেকে এম.ফিল করছেন। তার ইচ্ছে ভবিষ্যতে পিএইচডি করবেন। মুশফিক গবেষণা করতে চান উপমহাদেশের ক্রিকেট ইতিহাস নিয়ে। ঘরোয়া ও বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে নিজেকে প্রমাণ করে ২০০৫ সালে ইংল্যান্ড সফরের জাতীয় দলে প্রথম সুযোগ পান মুশফিক। ইংল্যান্ডের মাটিতে সেটি ছিল বাংলাদেশের প্রথম সফর।
লর্ডসে সিরিজের প্রথম টেস্টে তিনি খুব একটা সাফল্য পাননি। নিজের অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৯ রানেই প্যাভিলিয়নে ফিরে যান। অবশ্য সে ইনিংসে বাংলাদেশ মাত্র ১০৮ রানে অলআউট হয়েছিল। দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি করেন মাত্র ৩ রান। তবে শুরুটা ভালো না হলে ১৭ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে অনেক অর্জন নিজের ঝুলিতে পুরেছেন মুশফিক।
সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৪৬১টি ম্যাচ খেলে ১৪,৯৬৮ রান করেছেন মুশফিক। টেস্টে ১০টি ও ওয়ানডেতে ৯টি সেঞ্চুরি রয়েছে মুশফিকের। এখনও টি-টোয়েন্টিতে শতকের দেখা পাননি এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার। মুশফিকের ক্যারিয়ারে তিনটি ডাবল সেঞ্চুরি রয়েছে। তার নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের মতো দলের বিপক্ষে টেস্ট জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। কলোম্বোর পি সারা ওভালে বাংলাদেশের শততম টেস্টে তার নেতৃত্বে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ ঐতিহাসিক জয় পেয়েছে।
২০০৬ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে মুশফিক বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সেই দলে ছিলেন সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালের মতো খেলোয়াড়রা। সেই টুর্নামেন্টের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে ছিল বাংলাদেশ। এরপর ২০০৯ সালের জিম্বাবুয়ে সফরে মুশফিক বাংলাদেশ দলের সহ-অধিনায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন।
২০১০ সালের ২১ জানুয়ারি ভারতের বিপক্ষে হোম সিরিজের প্রথম টেস্টে মুশফিক তার ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি করেন। ২০১১ সালে বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পান মুশফিক। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এশিয়া কাপে রানার্সআপ হয়েছিল। তিনি ২০১৪ সাল পর্যন্ত দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।