সোশ্যাল মিডিয়া পরিষেবায় বিভ্রাটের জন্য জাকারবার্গের দুঃখ প্রকাশ
দীর্ঘ বিভ্রাটের পর অবশেষে (বাংলাদেশ সময়) আজ মঙ্গলবার ভোর থেকে স্বাভাবিক হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক পরিষেবা। চলছে হোয়্যাটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার ও ইনস্টাগ্রামও। এমন বিভ্রাটের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন ফেসবুকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ।
পরিষেবা পুনরায় চালু হওয়ার পর আজ (বাংলাদেশ সময়) ভোরের দিকে এক ফেসবুক পোস্টে জাকারবার্গ বলেন, ‘ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়্যাটসঅ্যাপ ও মেসেঞ্জার অনলাইনে ফিরতে শুরু করেছে। আজকের বিভ্রাটের জন্য দুঃখিত। নিজেদের পছন্দের মানুষজনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে আপনারা আমাদের পরিষেবাগুলোর ওপর কতটা নির্ভর করেন, তা আমি জানি।’
যদিও ফেসবুকের প্রধান প্রযুক্তিবিষয়ক কর্মকর্তা বলেছেন, পরিষেবা পুনরায় চালু হলেও, শতভাগে ফিরতে কিছুটা সময় লাগতে পারে।
ঠিক কী কারণে এমন বিভ্রাটের মুখে পড়তে হয়েছিল, সে বিষয়ে ফেসবুকের পক্ষ থেকে এখনও বিস্তারিত জানানো হয়নি। তবে একটি মহলের দাবি, ডিএনএস সংক্রান্ত সমস্যা হয়েছিল। এর ফলেই ছয় ঘণ্টার মতো ব্যাহত হয় ফেসবুক, হোয়্যাটসঅ্যাপ ও ইনস্টাগ্রামের পরিষেবা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফেসবুকের কর্মীদের উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ওই কর্মীদের ধারণা, অভ্যন্তরীণ ভুলের জন্যই বন্ধ হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মটি। ইন্টারনাল কমিউনিকেশন টুল এবং অন্যান্য প্রযুক্তির বিভ্রাট হয়েছিল বলে তাঁরা জানান।
অন্যদিকে, একাধিক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ বলছেন, অনিচ্ছাকৃত ভুলে কিংবা ক্ষতি করার জন্য এমনটা করা হয়ে থাকতে পারে।
সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি বলছে, ২০০৮ সালের পর এত দীর্ঘ সময় ফেসবুকের সার্ভার ডাউন থাকেনি কখনও। সে বছর প্রায় ২৪ ঘণ্টা অফলাইনে ছিল ফেসবুক। সে সময় ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল প্রায় আট কোটি। বর্তমানে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩০০ কোটি।
তবে, সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে—২০১৯ সালে ফেসবুক ও এর অন্যান্য অ্যাপে সমস্যা হওয়ার কারণে বিশ্বব্যাপী গ্রাহকেরা ১৪ ঘণ্টার বেশি সময় অ্যাপগুলো ব্যবহার করতে পারেননি।
কী কী ক্ষতি হয়েছে?
সম্প্রতি দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, ফেসবুকের অভ্যন্তরীণ নথিতে দেখা গেছে যে, কোম্পানিটি তার পণ্যের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকলেও সম্ভাব্য ক্ষতি মোকাবিলায় তেমন কিছুই তারা করে না।
সিবিএসের ‘সিক্সটি মিনিটস’ অনুষ্ঠান গত রোববার ফ্রান্সেস হাউজেন নামের এক ‘হুইসেলব্লোয়ার’ বা সতর্ককারীর সাক্ষাৎকার সম্প্রচার করে, যিনি ওই শো-তে ফেসবুক সম্পর্কে তাঁর অভিযোগগুলো তুলে ধরেন।
আজ মার্কিন সিনেট উপকমিটির সামনে হাউজেন সাক্ষ্য দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তবে, ফেসবুক বলছে হাউজেনের অভিযোগ বিভ্রান্তিকর।
এমনিতেই ‘হুইসেলব্লোয়ার’-এর ধাক্কায় জর্জরিত ফেসবুক। এর মধ্যেই গতকাল পরিষেবা ব্যাহত হওয়ায় বড়সড় ক্ষতির মুখে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মটি। ফেসবুকের শেয়ার পড়েছে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ। এর ফলে গত বছর নভেম্বরের পর এক দিনে সবচেয়ে বড় পতনের সাক্ষী হলো ফেসবুক। সেইসঙ্গে ফেসবুকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা জাকারবার্গের ব্যক্তিগত সম্পতিও কমেছে। ব্লুমবার্গ বিলিওনেয়ার্স ইনডেক্স অনুযায়ী, কয়েক ঘণ্টায় জাকারবার্গের ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমাণ কমে গেছেন ৬০০ কোটি মার্কিন ডলারের মতো। এর জেরে বিশ্বের ধনাঢ্য ব্যক্তির তালিকায় অবনমন হয়েছে জাকারবার্গের।