বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের স্থানান্তর

পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ার কারণে নিরক্ষীয় অঞ্চলের শৈবালসহ বিভিন্ন জীববৈচিত্র্যের প্রতিকূল হয়ে উঠেছে পরিবেশ। ওই অঞ্চলের সমুদ্রে আবাস হারাচ্ছে জলজ প্রাণিকুল। এই পরিপ্রেক্ষিতে নিরক্ষীয় অঞ্চলের সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য সরে যাচ্ছে মেরু অঞ্চলের দিকে। সম্প্রতি গবেষকরা এই তথ্য জানিয়েছেন।
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির সঙ্গে জীববৈচিত্র্যের সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা করেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের একদল গবেষক। গত সপ্তাহে বিজ্ঞান সাময়িকী সায়েন্সে এ বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে জীববৈচিত্র্যের স্থানান্তর সংক্রান্ত দুটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
সায়েন্সে প্রকাশিত নিবন্ধের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে সামুদ্রিক শৈবালসহ বিভিন্ন উদ্ভিদ এবং প্রাণিকুলের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের গবেষক কার্টিস ডয়েচ বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে সাগরের পানির তাপমাত্রা বাড়ে। নিরক্ষীয় অঞ্চলের উষ্ণতার কারণে সাগরের প্রাণিকুলের খাবার ও অক্সিজেন চাহিদা বাড়ে। কিন্তু শীতল পানির চেয়ে উষ্ণ পানিতে অক্সিজেন থাকে কম। একই সঙ্গে উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে প্রাণিকুলের আবাসও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই সাগরের প্রাণিকুল অপেক্ষকৃত শীতল পানির দিকে যায়। প্রাণীকুলের গন্তব্য হয় মেরুর দিকে।
গবেষকরা বলেন, উষ্ণতার বৃদ্ধির কারণে নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে সাগরের প্রাণিকুলের মেরুর দিকে যাত্রায় অনেক প্রাণী প্রজাতি বিপন্ন হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে। অপরিচিত পরিবেশে অনেক প্রাণী প্রজাতি বড় প্রাণীর শিকারের পরিণত হয়।
গবেষণায় রাখা প্রাণী প্রজাতির মধ্যে ছিল আটলান্টিক সাগরের পাথুড়ে কাকড়া, সমুদ্রতীরবর্তী ঝিনুক জাতীয় প্রাণী, কড মাছ, ভূমধ্যসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরের উন্মুক্ত পরিবেশে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, ইল সহ নিরিক্ষীয় অঞ্চলের বিভিন্ন প্রাণীপ্রজাতি। গবেষকরা বলেন, ২০১০ সালের মধ্যে এসব প্রাণী প্রজাতির অর্ধেক নিরিক্ষীয় অঞ্চল থেকে মেরুর দিকে চলে যাবে।
অপর গবেষণাটি করা হয় সাগরের উদ্ভিদ প্রজাতির ওপর। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে নিরিক্ষীয় অঞ্চলের সাগরের উদ্ভিদ প্রজাতিতে নেতিবাচক প্রভাব দেখা যায়। উষ্ণতার কারণে সাগরের উদ্ভিদের বাইরের অংশের রং সাদা হয়ে যায়। এর এই অঞ্চলের উদ্ভিদ প্রজাতির বিপন্ন হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।
গবেষকরা বলেন, প্রাণীকুল ঠাণ্ডা পানিতে গিয়ে যেমন বিপন্নের ঝুঁকিতে পড়বে একই ভাবে ঝুঁকিতে পড়বে উদ্ভিদ প্রজাতি। কারণ নিরিক্ষীয় অঞ্চলের উদ্ভিদপ্রজাতির জন্য প্রয়োজন নির্দিষ্ট পরিমাণ সূর্যের আলো। মেরুর দিকে উদ্ভিদ প্রজাতির বিস্তৃতি হলে যথেষ্ট পরিমাণ সূর্যের আলো পাবে না। এই কারণে অনেক প্রজাতি হারিয়ে যাবে।
গবেষকরা আরো বলেন, নিরিক্ষীয় অঞ্চলের সব প্রাণী ও উদ্ভিদ প্রজাতিই মেরুর দিকে চলে যাবে না। বড় বড় প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদ এখনেই থেকে যাবে।