যেভাবে ভয়াবহ সাইবার হামলা ঠেকালেন কিছু তরুণ
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2017/05/14/photo-1494775774.jpg)
ক্ষতিকর সফটওয়্যার ব্যবহার করে চালানো সাইবার হামলা ঠেকাতে বিশ্বের অন্তত ৯৯টি দেশের বাঘা বাঘা তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা যখন হিমশিম খাচ্ছিলেন, ঠিক সেই সময়ে ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের কিছু তরুণ গবেষক। তাঁদের তৎপরতায় বড় ধরনের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে হাজার হাজার প্রতিষ্ঠান।
স্থানীয় সময় শনিবার সাইবার হামলা ঠেকানোর পথ বের করেন ওই তরুণরা।
এর আগে শুক্রবারের ওই হামলায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হাসপাতাল, ব্যাংক, সরকারি সংস্থাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নেটওয়ার্ক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। ওই হামলা যুক্তরাজ্যে স্বাস্থ্যব্যবস্থার অনলাইন কার্যক্রমকে তছনছ করে দেয়। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশের কম্পিউটার ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ে। ক্ষতিকর সফটওয়্যার প্রবেশ করিয়ে অর্থ আদায় করাই ছিল ওই হামলার প্রধান উদ্দেশ্য। সে জন্য হামলাটিকে র্যানসমওয়্যার (মুক্তিপণের জন্য ক্ষতিকর সফটওয়্যার ব্যবহার) বলা হয়েছে।
সেই হামলা থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে বাঁচাতে যুক্তরাষ্ট্রের ২০ জন নিরাপত্তা প্রকৌশলীর সাহায্য দেন যুক্তরাজ্যের যুবক। অনলাইনে ‘ম্যালওয়ারটেক’ ছদ্মনামে থাকা ওই যুবককে অভিনন্দন জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা কেন্দ্র ও অন্য কয়েকটি সংগঠন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তথাকথিত ‘কিল সুইচ’ নামের একটি অপশন ব্যবহার করে বিশাল হামলা ঠেকিয়ে দেন যুবকটি। শুরুতে অনেকটা না জেনেই এই অপশনটি ব্যবহার করেছিলেন তিনি। পরে সেই অপশনটিই বিশাল কার্যসম্পাদনের রসদ জোগায়।
বিশ্বজুড়ে থাকা সাইবার নিরাপত্তা কমিউনিটিগুলোর একটি হলো ম্যালওয়্যারটেক। এটি বিভিন্ন নিরাপত্তা কোম্পানি বা ব্যক্তিগত কাজ করে থাকে যার মাধ্যমে বিভিন্ন হামলা প্রতিহত করা হয়। এই কমিউনিটির সদস্যরা প্রায়ই তাদের বিভিন্ন তথ্য টুইটারে প্রকাশ করে। প্রতিহিংসামূলক আক্রমণ থেকে রক্ষা কিংবা গোপনীয়তার স্বার্থে এই কমিউনিটির সদস্যরা প্রায়ই ছদ্মনাম ব্যবহার করে।
শনিবার ব্লগে দেওয়া পোস্টে ম্যালওয়্যারটেক ছদ্মনাম ব্যবহারকারী যুক্তরাজ্যের যুবক জানান, শুক্রবার এক বন্ধুর সঙ্গে দুপুরের খাবার খাওয়ার পর তিনি র্যানসামওয়্যারে আক্রান্ত হয়েছে গোটা যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থা। বিষয়টি তাঁর কাছে ‘বড় কিছু’ মনে হলো।
পুরো ঘটনাটির সমাধানে ওই যুবক ক্ষতিকর সফটওয়্যারের একটি নমুনা বিশ্লেষণ করতে শুরু করলেন। তিনি লক্ষ করে দেখেন যে, ওই সফটওয়্যারের কোডে একটি গোপন ওয়েবসাইটের অ্যাড্রেস (ডোমেইন) ছিল। সেই ডোমেইনটি নিবন্ধিত ছিল না। বিষয়টি বুঝতে পেরে তিনি সঙ্গে সঙ্গেই ডোমেইনটি নিবন্ধন করেন, যে ধরনের কাজ তিনি আগেও করেছিলেন। সাধারণ ক্ষতিকর সফটওয়্যার শনাক্ত করা কিংবা বিস্তার বন্ধ করতে তিনি এ ধরনের কাজ অতীতে করেছিলেন।
অন্যদিকে পৃথিবীর আরেক প্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের বাসিন্দা ২৮ বছর বয়সী প্রকৌশলী ড্যারেন হিউসও বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করছিলেন। তিনি বলেন, নির্মাতারা ম্যালওয়্যার সফটওয়্যারে কিল সুইচ নামের একটি অপশন রেখে দিয়েছিল, যা দিয়ে সাইবার হামলা থামানো যায়। তিনি সেটির স্ক্রিনশট নিয়ে বিষয়টি টুইটারে শেয়ার করেন। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই কাকতালীয়ভাবে ম্যালওয়্যারটেকের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হয়।
যোগাযোগ করে ওই দুজনই বুঝতে পারেন যে, ওই ডোমেইন নামটি নিবন্ধন এবং হামলাটি ম্যালওয়্যাটেকের সার্ভারে নির্দেশ করে দিলেই কিল সুইচটি অন হয়ে যাবে। যথারীতি এই কাজটি তাঁরা করলেন। এভাবেই প্রতিহত করা হলো বিশাল র্যানসমওয়্যার হামলা।