মেকসেলারেশন-২০১৫ : যন্ত্র প্রকৌশলীদের মিলনমেলা

গত ২৮ আগস্ট শুক্রবার গাজীপুরের ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি) ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংভিত্তিক বিজ্ঞান প্রতিযোগিতামূলক উৎসব মেকসেলারেশন-২০১৫। একদিনের এ উৎসবে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দলে দলে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা যোগ দেন। তাই উৎসবটি এককথায় পরিণত হয়েছিল যন্ত্র প্রকৌশলীদের এক মিলনমেলায়।
আইইউটির মেকানিক্যাল অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ গত বছর থেকে এ উৎসব আয়োজন করে আসছে। মূলত বাংলাদেশে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের গবেষণা ও আবিষ্কারকে একটি প্রতিযোগিতামূলক রূপ প্রদান এবং মানুষের কাছে প্রকৌশলবিদ্যার এই বিশেষ শাখার বিভিন্ন সম্ভাবনাময় চিত্র তুলে ধরতেই গত বছর থেকে উৎসবটি আয়োজন করা শুরু হয়। তবে শুধু মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্রদের নিয়েই উৎসবটি থেমে থাকেনি। অন্যান্য বিষয়ে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীদের জন্যও বিভিন্ন ইভেন্টে অংশগ্রহণ করার সুযোগ ছিল। এ ছাড়া বিভিন্ন স্কুল-কলেজ থেকে আসা বিজ্ঞানমনস্ক খুদে শিক্ষার্থীদেরও দেখা যায় উৎসবটি উপভোগ করতে।
মেকসেলারেশনের দ্বিতীয়বারের এই আসর নিয়ে আয়োজক কমিটির সহসভাপতি আসিফুর রহমান মিহাল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বাংলাদেশের ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরে মেকানিক্যাল বেশ পিছিয়ে রয়েছে অন্যগুলোর তুলনায়। অথচ এ জায়গায় আমাদের সবচেয়ে বেশি উন্নতি করার সুযোগ রয়েছে। বিজ্ঞান উৎসবগুলোতে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রতিযোগিতাগুলো আগে ছিল না। তাই বাংলাদেশে শুধু মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দেওয়াই ছিল আমাদের মূল উদ্দেশ্য। তবে আমরা অন্যান্য বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীদের জন্য অংশগ্রহণের সুযোগ রেখেছি। এমনকি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ করে দিয়েছি এবার। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, প্রকৌশলবিদ্যার এই অবহেলিত শাখাটি নিয়ে যাতে সবার মাঝে আগ্রহ জন্মে।’
বাংলাদেশে মেকানিক্যাল কিংবা অটোমোবাইল শিল্পে সম্ভাবনার কথা বলতে গিয়ে মিহাল আরো বলেন, ‘এই দেশে কলকারখানা গড়ে উঠছে; কিন্তু যন্ত্র নিয়ে গবেষণা বাড়ছে না। এ ছাড়া অটোমোবাইলেও আমরা পিছিয়ে আছি। কিন্তু আমাদের দেশের মেধা কাজে লাগাতে পারলে এই সেক্টরটিতে আমরা অনেক এগোতে পারব, যেভাবে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত এগিয়েছে। মেকসেলারেশনের দুটি আসরে শিক্ষার্থী এবং আগ্রহী মানুষের বিপুল সাড়া থেকে একটি জিনিস পরিষ্কার হয়েছে, যন্ত্র প্রকৌশল নিয়ে মানুষের আগ্রহ রয়েছে। এখন প্রয়োজন শুধু একটা প্ল্যাটফর্মের।’
মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের সর্ববৃহৎ এই মিলনমেলায় অংশগ্রহণ করে প্রায় ৪০টি স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী। প্রতিযোগিতা হয়েছে মোট ছয়টি ইভেন্টে। ইভেন্টগুলো হচ্ছে যথাক্রমে রোবটিক্স (লাইন ফলোয়ার), বিজনেস আইডিয়া, ক্যাড কম্পিটিশন, প্রোজেক্ট শোকেসিং, মেকানিক্যাল অলিম্পিয়াড এবং সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতা।
ইভেন্টগুলোর মধ্যে প্রজেক্ট শোকেসিং এবং সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় জুনিয়র আর সিনিয়র দুটি লেভেলে। অর্থাৎ জুনিয়র লেভেলে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও অংশগ্রহণ করে। আর সিনিয়র লেভেলে ছিল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। তবে এ দুটি ছাড়া আর বাকি চারটি ইভেন্টই বরাদ্দ ছিল শুধু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্য।
বিজনেস আইডিয়া প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয় আইইউটির দল ‘ব্লু ব্যারেল’ এবং রানার্সআপ হয় একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘দ্য ঈগলস’। ক্যাড কম্পিটিশনে প্রথম স্থান লাভ করেন বুয়েটের মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম এবং দ্বিতীয় স্থান পান আইইউটির ফাহরিয়াল আলম।
ইঞ্জিনিয়ারিং অলিম্পিয়াডে প্রথম হয়েছেন বুয়েটের জি এম নাজমুল কাদের। আর দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছেন আইইউটি থেকে। তাঁদের নাম যথাক্রমে তানভির মেহেদী ও আবদুল্লাহ আল সাইদ।
রোবটিক্স প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দল ‘অপটিমিস্টিক’। দ্বিতীয় হয়েছে আইইউটির ‘ফ্ল্যাশ’ এবং তৃতীয় হয়েছে ডুয়েট থেকে আসা দল ‘রোব এক্সপ্রেস’।
সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতায় জুনিয়র লেভেলে চ্যাম্পিয়ন দল ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ এবং সিনিয়র লেভেলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ।
প্রতিযোগিতা শেষে শুক্রবার সন্ধ্যায় পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পর্দা নামে এই বিজ্ঞান উৎসবের। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য প্রফেসর ড. এম এইচ খান। এ ছাড়া বিশেষ অতিথি ছিলেন আইমেক যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধি ডেভিড হাউ।
অনুষ্ঠানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইইউটির উপাচার্য প্রফেসর ড. এম ইমতিয়াজ হোসেন। প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের জন্য ছিল সর্বমোট এক লাখ ২৫ হাজার টাকার পুরস্কার।
এ উৎসবের অনলাইন পার্টনার ছিল এনটিভি বিডি ডটকম।