উদ্বোধনের অপেক্ষায় প্রথম ‘প্রজাপতি পার্ক’

এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে পাওয়া গেছে ৩০৪ প্রজাতির প্রজাপতি। এর মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ক্যাম্পাসেই দেখা মিলেছে ১০৪ ধরনের। এ বিশাল প্রজাপতির সমাহার নিয়ে গড়ে উঠছে ‘প্রজাপতি পার্ক ও গবেষণা কেন্দ্র’। এ ধরনের উদ্যোগ বাংলাদেশে এই প্রথম। আর্থিক সংগতির অভাব, তবু থেমে নেই কাজ। প্রতিনিয়তই প্রজাপতি নিয়ে গবেষণার নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে।
দেশের প্রথম এই ‘প্রজাপতি পার্কের’ উদ্বোধন হতে যাচ্ছে আগামীকাল শুক্রবার। এদিন ষষ্ঠ প্রজাপতি মেলারও উদ্বোধন করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রের দক্ষিণ দিকে প্রায় তিন একর জায়গাজুড়ে এ পার্ক ও গবেষণাকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। গত বছরের ৫ ডিসেম্বর এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম।
প্রজাপতি মেলার আহ্বায়ক ও বিশিষ্ট প্রজাপতি গবেষক অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন জানান, এ পার্কে মূলত প্রজাপতি গবেষণা ও সংরক্ষণে কাজ করা হবে। পাশাপাশি বিপন্নপ্রায় ও পাহাড়ি অঞ্চলের প্রজাপতির কৃত্রিম প্রজনন উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে প্রজাতিগুলো ধরে রাখার চেষ্টা করা হবে। সে সঙ্গে নতুন প্রজাতির প্রজাপতি উদ্ভাবনে গবেষণা করা হবে।
গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় ভবন নির্মাণ ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি ক্রয় না করতে পারায় এবার শুধু প্রজাপতি পার্ক উদ্বোধন করা হবে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক মনোয়ার। তিনি জানান, পার্ক ও গবেষণাকেন্দ্রের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তিন একর জমি দিয়েছে এবং প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন পাঁচ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছে। তবে পূর্ণাঙ্গ পার্ক ও গবেষণাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার জন্য প্রায় ২০ লাখ টাকা প্রয়োজন।
ভালো পৃষ্ঠপোষক পেলে আগামী বছরই গবেষণাকেন্দ্রের উদ্বোধন করা যাবে বলে আশা করছেন এ প্রজাপতি গবেষক। সে সঙ্গে দেশের ভালো ভালো প্রতিষ্ঠানকে এর পৃষ্ঠপোষকতায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
মেলা ও পার্ক তৈরির প্রস্তুতি
গতকাল বুধবার সরেজমিনে প্রজাপতি পার্কে গিয়ে দেখা গেছে, ৮-১০ জন শ্রমিকের একটি দল দ্রুত কাজ শেষ করতে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। সেখানে প্রজাপতির জন্য তিনটি বিশাল আকৃতির গোলাকার ঘর (প্রজাপতি হাট) নির্মাণ করা হয়েছে। লোহার পাইপ ও অ্যাঙ্গেল ব্যবহার করেই মূলত এ ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। এ তিনটি ঘরের সব কটিই আবার প্লাস্টিকের জাল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে, যাতে ভেতরের প্রজাপতি বেরিয়ে যেতে না পারে।
অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন জানান, গোলাকার ঘর তিনটিও তিন আকৃতির। এর মধ্যে ছোট ঘরটিতে ছোট আকৃতির প্রজাপতি, যেগুলো ঘাসজাতীয় গাছে বাস করে, তাদের রাখা হবে। মাঝারি আকৃতির ঘরে রাখা হবে মাঝারি আকারের প্রজাপতি, যেগুলো ছোট ছোট গাছে আবাস গড়ে তোলে। আর বড় আকৃতির ঘরটিতে পাহাড়ি অঞ্চলের তথা বড় আকৃতির প্রজাপতি রাখা হবে। ঘরগুলোতে সেসব প্রজাপতির উপযোগী গাছ, খাবার, ঝর্ণার ব্যবস্থা করা হয়েছে কৃত্রিমভাবে। এখানে প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার প্রজাপতি রাখা যাবে।
প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ১৭ শিক্ষার্থী প্রজাপতি গবেষণা ও সংরক্ষণে অধ্যাপক মনোয়ারের সঙ্গে কাজ করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনোয়ার হোসেন জানান, ১৯৯৬ সাল থেকে নিবিড়ভাবে প্রজাপতি গবেষণায় কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। এ পর্যন্ত বাংলাদেশে পাওয়া ৩২৫ প্রজাতির প্রজাপতির মধ্যে ২৭০টি শনাক্ত করেছেন। এ ছাড়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গবেষণার মাধ্যমে আটটি নতুন প্রজাতির প্রজাপতি আবিষ্কার করেছেন। তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দেশে প্রথমবারের মতো নির্মিত হচ্ছে এ প্রজাপতি পার্ক ও গবেষণাকেন্দ্র।
মনোয়ার হোনের তাঁর প্রাত্যহিক জীবনের একটি বড় অংশ কাটান এই প্রজাপতি গবেষণায়। ছুটে চলেন নিত্যনতুন জাত আবিষ্কারে।