যে গোপন স্থানগুলো গুগল আর্থে নেই বা ঝাপসা করা
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2016/01/26/photo-1453811510.jpg)
গুগল আর্থ সেবার মাধ্যমে আপনি এখন ঘরে বসেই চলে যেতে পারেন চীনের মহাপ্রাচীর দেখতে অথবা ঘুরে আসতে পারেন নিউইয়র্কের কোনো অলিগলি থেকে। মোটকথা গোটা দুনিয়া এখন চলে এসেছে হাতের আঙুলের নিচে।
তবে আপনি এটা কি জানেন? পৃথিবীর এমনও কিছু অংশ আছে যেগুলো আপনি চাইলেও গুগল আর্থের মাধ্যমে দেখতে পাবেন না। কারণ সেগুলো দেখাতে চায়না গুগল।
সমালোচকরা বলেন, গোপন নগরী এবং ভিনগ্রহের বা আনআইডেন্টিফায়েড ফ্লাইং অবজেক্ট (ইউএফও) বিষয়ে পরীক্ষা চালানো হয়েছে এমন জায়গাগুলো অস্পষ্ট করে বা ঘোলা করে রাখে গুগল আর্থ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে গুগল আর্থ থেকে তো এসব স্থান পুরোপুরি মুছেই ফেলা হয়েছে।
নিউজ ডটকম ডটএইউ এসব স্থানের একটি তালিকা তৈরি করেছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেসব স্থান সম্পর্কে।হার্প সাইট, ওয়াশিংটন-ওরেগন সীমান্তে অবস্থিত :
বিতর্কিত হাই ফ্রিকোয়েন্সি অ্যাকটিভ অরোরাল রিসার্চ প্রোগ্রাম বা হার্প হলো তেমনই একটি স্থান যেটি গুগল আর্থে গিয়ে আপনি দেখতে পাবেন না।
২০১৪ সালে আয়োনোস্ফিয়ার নামে পরিচিত বায়ুমণ্ডলের একটি স্তর নিয়ে একটি আঞ্চলিক গবেষণা বন্ধ করে দেয় মার্কিন বিমান বাহিনী। ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকরা বলছেন, সম্ভবত হার্প থেকে আবহাওয়াকে নিয়ন্ত্রণ করার কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হতো। আবার কেউ কেউ বলছেন, এটা ছিল ইউএফও বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র। ২০১০ সালে ভেনিজুয়েলার নেতা হুগো শ্যাভেজ অভিযোগ করে বলেন, হাইতির ভূমিকম্পের জন্য হার্প বা এর কোনো পরীক্ষা দায়ী।
মার্কিন বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, ইউনিভার্সিটি অব আলস্কা এবং ডিফেন্স অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রোজেক্ট এজেন্সি যৌথভাবে হার্প প্রতিষ্ঠা করেছিল। এই হার্পের পুরো এলাকাটিই গুগল আর্থে দেখায় না।
গোপন শহর, রাশিয়া :
রাশিয়ার সাইবেরীয় তুন্দ্রা অঞ্চলের একটি এলাকা গুগল আর্থে দেখা যায় না। আপনি যদি গুগল আর্থে এই স্থানটি খুঁজতে যান তাহলে সেখানে মিলবে ঘন অস্বচ্ছ একটি ছবি।
এই এলাকাটির নাম এগভেকিনট। বার্লিন প্রণালি পার হয়ে আলাস্কা যাওয়ার পথে এটির অবস্থান। ১৯৮৬ সালে রাশিয়ার অধিবাসীরা বলতেন, এখানে বেশকিছু শহর আছে যেখানে ১০ লাখ মানুষ বাস করে। কেউ কেউ বলেন, তুন্দ্রা অঞ্চলের এই শহরগুলো রাশিয়ার গোপন নগরী। এ ছাড়া এই স্থানগুলোকে রাডার স্টেশন বা মিসাইল আটকের স্থান বলেও ধারণা করা হয়। আবার কেউ কেউ বলেন, গুগল আর্থে এই অঞ্চলের যে অস্পষ্ট ছবিটি দেখা যায় সেটি আসলে দেশের অন্য কোনো স্থানের ছবি। এখানে এনে বসানো হয়েছে।
পোর্টলাওইস কারাগার, আয়ারল্যান্ড :
আয়ারল্যান্ডের পোর্টলাওইস কারাগারে থাকেন দেশটির সবচেয়ে দুর্ধর্ষ অপরাধীরা। যদিও এটির ছবি গুগল আর্থে অস্পষ্ট করা নেই। তবু কাছ থেকে দেখলে বোঝা যায়, আশপাশের অঞ্চলগুলোর সাথে এর ছবির রঙে মেলে না। এর কারণ হলো, গুগল আর্থে কারাগারের যে ছবিটি দেওয়া হয়েছে সেটি কারাগারের বর্তমান ছবি নয়। পুরোনো একটি ছবি এখানে ব্যবহার করা হয়েছে যাতে কারাগারের ছবি দেখে অপরাধীদের কেউ পালানোর পরিকল্পনা করতে না পারে।ফারো দ্বীপপুঞ্জ, ডেনমার্ক :
ডেনমার্কের অংশ হলেও ফারো দ্বীপপুঞ্জ সায়ত্ত্বশাসিত। উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে আইসল্যান্ড ও নরওয়ের মাঝখানে অবস্থিত এই ১৮টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত দ্বীপপুঞ্জটি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার একটি সামরিক ঘাঁটিও এখানে ছিল। এসব কিছু নিয়েই গুগল আর্থ থেকে হারিয়ে গেছে ফারো দ্বীপপুঞ্জ। তবে কী কারণে এটি অদৃশ্য করে রাখা হয়েছে সে সম্পর্কে কিছু জানাতে পারেননি কেউ।শাজহলোমবাট্টা তেল শোধনাগার, হাঙ্গেরি :
গুগল ইমেজ থেকে বা গুগল আর্থ থেকে হাঙ্গেরির শাজহলোমবাট্টা তেল শোধনাগারের ভবন ও মাঠের ছবি মুছে দিতে অনুরোধ করে শোধনাগার কর্তৃপক্ষ। তবে কী কারণে এটা করা হয়েছে তা জানা যায়নি। এ ছাড়া কেনই বা ছবির বদলে সবুজ রং দিয়ে স্থানটি ঢেকে দিতে বলা হয়েছে তারও কোনো ব্যাখ্যা নেই।
কাঙটেগা, নেপাল :
হিমালয়ের প্রধান শৃঙ্গগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে কাঙটেগা। এর উচ্চতা ছয় হাজার ৭৮৩ মিটার। গুগল আর্থে এটিকে কালো রং করে রাখা হয়েছে। তবে এখানেও একই অবস্থা। কালো রং করে রাখার কারণ কেউ জানে না। অবশ্য অনেকে এটিকে যান্ত্রিক ত্রুটি বলে মনে করেন।
ভলকেল বিমান ঘাঁটি, নেদারল্যান্ডস :
নেদারল্যান্ডসের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাড লবার্সের মতে, ভলকেল বিমানঘাঁটিতে যুক্তরাষ্ট্রের ২২টি পরমাণু বোমা সংরক্ষণ করে রাখা আছে। এমনকি ১৯৪৫ সালে হিরোশিমায় নিক্ষেপ করা বোমার চাইতে চারগুণ বেশি শক্তিশালী বোমা রয়েছে এখানে। ১৯৬০ সাল থেকেই এগুলো এখানে রাখা রয়েছে। এই ভলকেল ঘাঁটিটিও গুগল আর্থে লুকিয়ে রাখা হয়েছে।
কেওয়ি বাঁধ, দক্ষিণ ক্যারোলিনা :
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ক্যারোলিনার কেওয়ি লেকে অবস্থিত কেওয়ি বাঁধটি অস্পষ্ট করে রেখেছে গুগল। এটির আনুমানিক দৈর্ঘ্য প্রায় ২৬ মাইল আর প্রস্থ তিন মাইল।
জলবিদ্যুত ছাড়াও পারমাণবিক স্টেশনের জন্য লেক কেওয়ি ঠান্ডা পানির একটি বিরাট উৎস। ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকরা মনে করেন এই কারণেই গুগল থেকে কেওয়ি লেকের ছবি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।