অনেক শারীরিক সমস্যার সমাধানে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম
যোগব্যায়ামের ক্ষেত্রে শ্বাস-প্রশ্বাসের নানা অনুশীলন করা হয়৷ আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যাও নাক দিয়ে নিঃশ্বাস নেওয়ার গুরুত্ব আবিষ্কার করছে। জার্মানির এক চিকিৎসক সেই গবেষণার ফল রোগীদের উপর প্রয়োগ করে সুফল পাচ্ছেন।
ডাক্তার হিসেবে টোমাস ভাইস প্রতিদিন রোগী দেখা শুরু করার আগে সচেতনভাবে শাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করেন৷ তিনি বলেন, ‘অতীতে শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ে আমার অনেক সমস্যা হয়েছে৷ আমি ভাবতাম, বিষয়টি রহস্যময় ও আধ্যাত্মিক৷ কিন্তু আচমকা বিষয়টি নিয়ে গভীর চর্চা করে বুঝলাম, যে আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের এই দিকটা, অর্থাৎ আমাদের কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন আমাদের শরীরের নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে।’
স্ট্রেস মস্তিষ্কের অত্যন্ত পুরানো এমন এক কাঠামোর উপর প্রভাব ফেলে, যা আমাদের লড়াই অথবা পালানোর জন্য প্রস্তুত করে৷ ক্রমাগত চাপের মুখে পড়লে শরীর শ্বাস-প্রশ্বাসে রদবদল করে প্রতিক্রিয়া দেখায়৷ দ্রুত ও সংক্ষিপ্ত শ্বাস-প্রশ্বাস প্রায় চোখেই পড়ে না৷ সেই অবস্থাকে ক্রনিক হাইপারভেন্টিলেশন বলা হয়৷ প্রায় অবচেতনে সেই প্রক্রিয়া স্বংয়ক্রিয়ভাবে ঘটে৷
এমন সব সংযোগের বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এখনো পাওয়া যায় নি। তা সত্ত্বেও টোমাস ভাইস নিশ্চিত, যে নির্দিষ্ট কিছু শারীরিক সমস্যা ভুল শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে সম্পর্কিত৷ যেমন স্টেফানি কেক নামের এক রোগী মাথা ঘোরার সমস্যায় ভুগছেন৷ তিনি বলেন, ‘আমার আসলে কী হয়েছে, তা কেউ জানতে পারে নি৷ ভেবেছিল সাইকোসোমেটিক্সের সমস্যা৷ কিন্তু তাতে আমার কোনো লাভ হয় নি৷ ড. ভাইসকে খুঁজে পেয়ে আমি সত্যি খুব খুশি।’
রোগ নির্ণয়ের বিস্তারিত প্রক্রিয়ার পাশাপাশি রোগীরা শ্বাস-প্রশ্বাসের বিশেষ ট্রেনিং পান৷ তথাকথিত ক্যাপনোমিটার দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা পর্যবেক্ষণ করে সচেতনভাবে তারা সেটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন৷ ড. ভাইস বলেন, ‘শরীরে ভেজিটেটিভ স্নায়ুতন্ত্রের উপর প্রভাব বিস্তার করতে হলে এমন এক ভাষার প্রয়োজন, যা শরীরের খুব নিবিড়ে থাকবে, এমনকি প্রাণীরাও তা বুঝতে পারবে৷ সে কারণে আমরা মাসাজ, উত্তাপ, খাদ্য ও পানীয় নিয়ে কাজ করি৷ এভাবে অবচেতন এই স্নায়ুতন্ত্রকে বুঝিয়ে দেই, আতঙ্কের কোনো কারণ নেই, সব ঠিক আছে।’
সিওটু মাত্রা বাড়াতে রোগীরা নাক দিয়ে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের যাবতীয় গুরুত্ব শেখেন। ড. টোমাস ভাইস বলেন, ‘নাকের মধ্য দিয়ে অনেক কম বাতাস যায়। সে কারণে মানুষ হিসেবে আমরা নাক দিয়ে নিঃশ্বাস না নেবার চেষ্টা করি।’
রোগীরা যাতে শারীরিক কসরতের ক্ষেত্রে মুখের বদলে শুধু নাক দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস নেন, সেই লক্ষ্যে বিশেষ ট্রেডমিলের উপর তাদের অনুশীলন করতে হয়। ভ্যাকুয়ামের এক বস্তা তাদের শরীরের ওজন ধরে রাখে৷ মাধ্যাকর্ষণ ও গতি ধাপে ধাপে নিয়ন্ত্রণ করা যায়৷ যতটা সম্ভব নাক দিয়ে নিঃশ্বাস নেওয়ার সীমা কিন্তু অতিক্রম করা হয় না।
টোমাস ভাইস তাঁর কাজের বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। এখনো পর্যন্ত শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ে খুব কম গবেষণা হয়েছে। তিনি এখনো পর্যন্ত তাঁর ব্রিদিং ও রিল্যাক্সিং থেরাপির মাধ্যমে প্রায় ১০ হাজার রোগীকে সাহায্য করতে পেরেছেন। অবশ্যই শুধু শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সব রোগের চিকিৎসা সম্ভব নয়৷ ড.ভাইস বলেন, ‘কোনো টিউমার, পা ভাঙা বা ফুসফুসের প্রদাহের ক্ষেত্রে সেটা কাজ করে না৷ তবে কঠিন বিঘ্নের ক্ষেত্রে অবশ্যই কার্যকর হয়৷ মাথাব্যথা, ফাইব্রোমায়ালজিয়া সিন্ড্রোম, ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম, মাথাঘোরা এবং দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ার মতো সমস্যার উন্নতির ক্ষেত্রে শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে স্পষ্ট উন্নতি সম্ভব৷ কখনো খুব কম সময়ের মধ্যেই উপকার পাওয়া যায়।’
সঠিকভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার বিষয়টি আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যায় সবে আবিষ্কার করা হচ্ছে।