যেভাবে এআই কাজে লাগাচ্ছে জার্মানির হামবুর্গ প্রশাসন
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে অনেক কাজ সহজ হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া সময়ও বাঁচছে। সম্প্রতি অ্যাপল তাদের নিজস্ব এআই সিস্টেম নিয়ে এসেছে। এদিকে, জার্মানির হামবুর্গের স্থানীয় প্রশাসন তাদের নিজস্ব এআই সিস্টেম পরীক্ষা করে দেখছে৷ ফলে ১০০ পাতার কোনো লেখা থেকে এক পাতার সারসংক্ষেপ পাওয়া সম্ভব হচ্ছে।
চ্যাটজিপিটির কারণে আজকাল জাহাজের একটি ছবি তোলার পরই আপনার স্মার্টফোন ট্যুর গাইডে পরিণত হচ্ছে৷ এটা এমনকি কথাও বলতে পারে। একটা অপরিচিত ছবি, প্রায় যেকোনো ভাষায় একটি প্রশ্ন - এবং আপনার স্মার্টফোন কাজ শুরু করে দেয়। কারণ, ব্যাকগ্রাউন্ডে একটি এআই প্রোগ্রাম ইন্টারনেটে উত্তর খোঁজা শুরু করে। প্রায় দুই বছর আগে এআই আরও একধাপ এগিয়ে যায়। এআই এখন শুনতে, ছবি তৈরি ও চাহিদা অনুযায়ী টেক্সট লিখতে পারে। সময়ের সঙ্গে স্মার্টফোন ব্যক্তিগত সহকারী হয়ে উঠছে।
এতদিন অ্যাপল এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে ছিল। তবে ২০২৪-এর গ্রীষ্মে তারা নিজেদের এআই প্ল্যাটফর্ম চালু করেছে ৷ এআই দিয়ে যা করা সম্ভব তার অনেককিছু এতে আছে। যেমন লিখিত টেক্সট থেকে ছবি তৈরি করা যেতে পারে। একটি গল্প থেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশ তুলে পরামর্শ দিতে পারে এআই।
ইমোজির ক্ষেত্রেও একই কথা। চ্যাটের উপর নির্ভর করে ইমোজি তৈরি করা যায়। তাই এগুলোকে জেন-মোজি বলা হচ্ছে।
হামবুর্গের এআই সেন্টার এর অ্যালোইস ক্রিটিল বলেন, ‘গত দুই বছরের সবচেয়ে বড় উদ্ভাবন হলো, আমাদের আর সিস্টেমের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে না, বা সেগুলোর ব্যবহার শিখতে হবে না। কারণ, এখন এআই সিস্টেমই আমাদের সঙ্গে মানিয়ে চলছে।’
অ্যাপল তার কনসেপ্টকে বলছে ‘অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স'- এক ধরনের ব্যক্তিগত সহকারী, যেটি আপনার গত সপ্তাহের চ্যাটের সঙ্গে আজকের অ্যাপয়েন্টমেন্টের সম্পর্ক গড়ে ধারণা দিতে পারে যে, আজ সন্ধ্যায় আপনি কনসার্টে যাওয়ার সময় পথে যানজটে পড়বেন।
এটি মেসেজ, ইমেল, ইন্টারনেট ও আপনার নিজস্ব ক্যালেন্ডার থেকে তথ্য সংগ্রহ করে। অনেকটা স্মার্টফোনে কো-পাইলট থাকার মতো। ক্রিটিল বলেন, ‘‘এই ট্রেন্ড চলতেই থাকবে৷ আমাদের দক্ষতা বাড়ায় এমন কো-পাইলট ও অ্যাসিস্টেন্স সিস্টেমের সংখ্যা আরও বাড়বে।’’
অনেক সময় ও শক্তি ক্ষয় হয়, এমন একঘেয়েমিপূর্ণ কাজের ক্ষেত্রে এগুলো সহায়ক হতে পারে। তবে নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। কারণ, ব্যবহারকারীরা তাদের ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ারের বিষয়ে ‘হ্যাঁ' বলতে পারেন।
অ্যাপলের দাবি, তাদের এআই সিস্টেম ব্যবহার নিরাপদ এবং এতে গোপনীয়তা বজায় থাকবে - এমনকি জটিল কাজ সম্পাদন করতে ক্লাউড ব্যবহার হলেও। হামবুর্গের সেন্টার ফর আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের গবেষকেরা পরবর্তী প্রজন্মের পার্সোনাল এআই নিয়ে কাজ করছেন। এটি আশেপাশের পরিবেশ সম্পর্কে জানতে ও কোনো কিছু চিনতে স্মার্টফোনের ক্যামেরা ব্যবহার করতে সক্ষম হবে। যেমন এটি বলতে পারবে, আপনি আপনার চশমাটি কোথায় রেখেছেন।
ক্রিটিল বলেন, ‘‘ধরুন, আমি একটি শহরে হাঁটছি, কিংবা কোনো বাধা ছাড়াই ঢোকা যায় এমন সাবওয়ে খুঁজছি। এ ক্ষেত্রে এআই আমাকে সাহায্য করতে পারে, অনেকটা দ্বিতীয় এক জোড়া চোখের মতো, আমাকে বলতে পারে, আমাকে কোথায় যেতে হবে।’’ এটি অনেকটা পকেটে ব্যক্তিগত ভার্চুয়াল সহকারী রাখার মতো হবে।
হামবুর্গের স্থানীয় সরকার নিজেদের তৈরি একটি জেনারেটিভ এআই প্রোগ্রাম পরীক্ষা করে দেখতে একটি পাইলট প্রকল্প শুরু করেছে। এই লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল, বা এলএলএম, প্রশাসনিক কাজের জন্য তৈরি। এর নাম এলএলমইন, প্রায় ৪০০ কর্মী এটি ইতোমধ্যে ব্যবহার করছে।
হামবুর্গের আইটি ও ডিজিটাইজেশন অফিসের কর্মী আনিকা বুজে বলেন, ‘প্রশাসক হিসেবে আমাদের অনেক দীর্ঘ লেখা পড়তে হয়৷ এলএলমইন এর কারণে কাজটা দ্রুত হয়। আমরা এতে ১০০ পাতা দিলে এআই আমাকে সেখান থেকে এক পাতার সারসংক্ষেপ করে দেয়। ফলে আমি বাকি সময়টা মানুষকে সেবা দিয়ে কাটাতে পারছি।’’
অ্যাপলের নতুন এআই এর মতো এলএলমইন নির্দিষ্ট কিছু তথ্য পড়তে পারে। তবে একটি বড় পার্থক্য আছে- হামবুর্গের প্রোগ্রামটি সব কম্পিউটারে কাজ করে, আর অ্যাপলের সিস্টেমটি শুধু সর্বাধুনিক স্মার্টফোনে কাজ করে। এ ছাড়া এখনও সব দেশে এটি কাজ করছে না। জার্মানিতে আসবে ২০২৫ সালে।