ইরানে মেট্রোরেলে যাত্রার অভিজ্ঞতা

বাংলাদেশ যখন মেট্রোরেলের যুগে প্রবেশ করলো তখন মনে পড়ে গেল প্রবাস জীবনের দীর্ঘ সময় পার করা ইরানের ইস্পাহান শহরের মেট্রোরেল যাত্রার স্মৃতি।
প্রতিদিন সকালে উঠে, হাসপাতালে ডিউটিতে যোগ দিতে আমার দ্রুত সময়ের বাহন ছিল মেট্রোরেল। মেট্রোরেলের নিয়মিত যাত্রী হওয়ায় একটি ডিজিটাল কার্ড কিনে নিয়েছিলাম। এছাড়াও এই একটি কার্ড দিয়ে মেট্রোরেলসহ শহরের ভেতরে যাতায়াতের সকল বাসের ভাড়াও কার্ড পাঞ্চ করে পরিশোধ করা সম্ভব ছিল। ইরানে একজন নগরবাসীর জন্য একটি কার্ড থাকা অনেক জরুরী ।
কার্ডে একবার রিচার্জ করলে দীর্ঘদিন রিচার্জ করার প্রয়োজন পড়েনা। যেহেতু ইরানে বর্তমানে মেট্রোরেলের ভাড়া ২৫ হাজার রিয়াল যা বাংলাদেশি টাকায় কনভার্ট করলে দাঁড়ায় মাত্র ৭ টাকা। যাদের ডিজিটাল কার্ড থাকেনা তাঁদের জন্য ভাড়া কিছুটা বেশি নেওয়া হয় যাতে কার্ড কেনার প্রতি যাত্রীদের আগ্রহ বাড়ে। সবচেয়ে ভাল লাগার বিষয় হচ্ছে, কার্ড একবার পাঞ্চ করে একটি নির্দিষ্ট ভাড়ায় শহরের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে যাওয়া যায়। কাছের যাত্রী বা দূরের যাত্রী সবার জন্যই এক ভাড়া।
ইরানের প্রায় প্রধান সব শহরগুলোতে জনসাধারণের জন্য মেট্রোরেল সুবিধা রয়েছে। মেট্রোরেলের লাইনগুলো বেশিরভাগ জায়গায় মাটির নিচ দিয়ে করা। রাজধানী তেহরানের রেলটি মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় পাতাল রেল হিসেবে পরিচিত। শহরের মাঝে এক স্টেশন থেকে আরেক স্টেশনের দূরত্ব চার-পাঁচ মিনিটের এবং যাত্রার মাঝে স্টেশনে যাত্রী উঠা-নামার জন্য এক মিনিটের মত যাত্রা বিরতি থাকে তবে যাত্রী সংখ্যা বেশি হলে সেক্ষেত্রে কিছুটা দেরী করেন চালক।

প্রত্যেকটি স্টেশন অনেকটা সাজানো এবং স্টেশনে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা লক্ষণীয়। যাত্রীদের বসার জন্য আলাদাভাবে চেয়ারের ব্যবস্থাসহ যাত্রীদের জন্য ডিজিটাল বক্স থেকে খাবার কেনা, বইকেনাসহ অনেক সুবিধা রয়েছে। সাথে ময়লা ফেলার জন্য আলাদা ডাস্টবিন রয়েছে। এর পাশাপাশি নিরাপত্তার জন্য প্রত্যেক স্টেশনে আলাদা পুলিশ রুম রয়েছে।
আরেকটি বিষয় না বললেই নই, স্টেশনগুলোতে বয়স্ক এবং প্রতিবন্ধীদের উঠানামার জন্য লিফটেরও ব্যবস্থা রয়েছে।
ট্রেনের প্রতি বগিতে ডিজিটাল স্ক্রীনে স্টেশনের নাম দেখানো হয়ে থাকে । সাথে স্পিকারে স্টেশনের নাম জানিয়ে যাত্রীদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে সহায়তা করা হয়।
এছাড়া প্রত্যেকটি ট্রেনের প্রথম একটা বা দুইটা বগি মহিলা যাত্রীদের জন্য সংরক্ষিত এবং সেখানে পুরুষ যাত্রীদের প্রবেশ নিষেধ। ইরানের সবজায়গায় বাসগুলোতেও নারীদের জন্য বাসের সামনে অথবা পেছনে আলাদাভাবে বাসের অর্ধেক অংশ সংরক্ষিত থাকে। এর ফলে নারীরা যাতায়াত পথে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।

ইরানে মেট্রোরেলে যাত্রা করে মনে হতো, বাংলাদেশে কবে মেট্রোরেলে যাত্রা করতে পারবো। এই যাত্রা নিয়ে কথা বলতে বলতে আমিও আমার সেই ভাবনার গন্তব্যে পৌঁছে গেলাম, এখন বাংলাদেশেই মেট্রোরেলে যাতায়াতের সুযোগ হবে। দেরিতে হলেও মেট্রোরেল বাংলাদেশের জন্য একটি বড় পাওয়া। এগিয়ে যাক আমার স্বদেশ এই কামনা।