ঐতিহাসিক মুর্শিদাবাদ ভ্রমণ
পৃথিবী একটু উদার হয়ে আমাদের স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দিলেই অনেকে নানা জায়গায় ছুটে যেতে চাইবেন খুব স্বাভাবিক। কিন্তু পুরো পৃথিবীব্যাপী এমন একটা মহামারি শেষেই খুব দূরে কোথাও ছুটে যাওয়াটা ঠিক হবে বলে মনে হয় না। তাই সব কিছু একটু স্বাভাবিক হলে ঘুরে আসতে পারেন আমাদের খুব কাছের পলাশীর প্রান্তরে, আম্রকাননে, বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা, মীরজাফর আর জগৎ শেঠদের ইতিহাসের নগরী মুর্শিদাবাদ থেকে, যা আমাদের একদম কাছেই। ২৩ জুন ঐতিহাসিক পলাশী দিবসকে স্মরণে তাই এই আয়োজন।
বেশ ঝটিকা একটা অভিযানই সেরে ফেলতে পারেন ঐতিহাসিক ও নান্দনিক এই ভ্রমণ। অল্প সময়ের এই ভ্রমণে যা যা দেখতে, ছুঁতে, উপভোগ আর উপলব্ধি করতে পারবেন, সেসবের অন্যতম হলো—
হাজারদুয়ারীর প্রাসাদ : ব্রিটিশ শাসনের সময় বাংলার ঐতিহাসিক স্থাপনা। যা আজ এত বছর পরও সেসব দিনের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। হাজারদুয়ারী এমন একটি স্থাপনা, যা দূর থেকে দেখে মনে হয় হাজার দুয়ারের সম্মিলনে বোধহয় এই প্রাসাদ! এমনকি এই প্রাসাদের ভেতরের সব কিছুই আকর্ষণীয় ও নান্দনিক। তবে হাজারদুয়ারী শুক্রবার বন্ধ থাকে, এটা মনে রাখতে হবে।
গোলাপ গার্ডেন : নবাবের অবসর ও বিলাসী বিকেল কাটানোর একটি অনিন্দ্য সুন্দর জায়গা। শত রকমের গোলাপের অবাক করা আয়োজন আর বিশাল এক বাগান, তার রং, রূপ, গন্ধ যেন আজও নবাবের অপেক্ষায় প্রহর গোনে প্রতিদিন!
নবাবের বাগানবাড়ি : নবাব! সত্যিই নবাব, নইলে কি অবসর কাটাতে কেউ এত বিশাল আয়োজনের বাগানবাড়ি বানিয়ে রাখেন! কী বিশাল সেই বাগানবাড়ির আয়তন, প্রবেশপথ, বাড়ি, বারান্দা, আসবাব, সাজসজ্জা, আর দিঘি! দেখে দেখে সেখান থেকে ফিরতে মন চায় না সত্যি। ইচ্ছে হয় নিজেকেই নবাব সাজিয়ে সেখানেই থেকে যাই!
মীরজাফরের বাড়ি : নবাবের বাগানবাড়িতে গিয়ে যে অনুভূতি হয়েছিল, এখানে ঠিক তার উল্টো। মীরজাফরের বাড়ির গেট দেখেই ঘৃণায় চোখমুখ কুঁকড়ে যায়! ভেতরে গিয়ে বাংলার বড় বিশ্বাসঘাতকের আবাস দেখতে আর ইচ্ছে হয় না! শুধু আফসোস হয়, ইশ মীরজাফর যদি না থাকত, তবে আজও হয়তো বাংলার নবাবদের রাজত্ব শেষ হতো না। হয়তো এখনো সেই সুসময় চলত সারা বাংলায়!
এরপর একে একে দেখতে পারেন নবাবের কন্যাদের সমাধিক্ষেত্র, নবাবের পারিবারিক মসজিদ, মীরজাফরের মসজিদ, বিশাল আমবাগান, মাঝে একটু ছুঁয়ে দেখতে পারেন ঐতিহাসিক ভাগীরথী নদীর পানি। এসব দেখতে দেখতেই দুপুর গড়িয়ে যাবে। একটু বিশ্রাম নিয়ে দুপুরের আহার করে চলে যেতে পারেন ইমামবাড়া, কাটরা মসজিদ, লালদিঘী, কাশিমবাজার, জগত শেঠদের স্মৃতি দেখতে। সন্ধ্যার আগে আগে কিছু সময় গাছের ছায়ায় বসে থাকতে পারেন ভাগীরথী নদীর তীরে। ফিরতি পথে হাতে সময় থাকলে উপভোগ করতে পারেন সেই সময়ের রাজাদের নানা কীর্তিকলাপ ও নানা শিল্প-সংস্কৃতির স্মৃতি।
চলার পথে নানা জায়গায় আরো কিছু জিনিস চোখে পড়বে, যেখান থেকে চাইলেও নিজেকে উপেক্ষা করে ফিরিয়ে আনতে পারবেন না। পুরোনো স্থাপনার প্রতিটি ইট, পাথর, খসে পরা পলেস্তারা, জং ধরা কার্নিশ, ভাঙা বারান্দা, ক্ষয়ে যাওয়া ছাদ সব যায়গায় ইতিহাসের অনেক অজানা গল্প লুকিয়ে আছে। যারা কথা বলতে চায়, কিন্তু আমাদের ব্যস্ততায় বলার সুযোগ পায় না। তাই এরপর একবার শুধু ওদের ইতিহাস খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে, শুনতে, বুঝতে, ভাবতে আর স্পর্শ করে অনুভব করতে যাব, বেশ সময় নিয়ে।
এই হলো ঐতিহাসিক মুর্শিদাবাদের সংক্ষিপ্ত ছবি। অল্প সময়ে যেটুকু দেখেছি, অনুভব আর উপলব্ধি করেছি। ২৩ জুন পলাশী দিবস। সেই দিবসের স্মরণে স্মৃতির অ্যালবাম ঘেঁটে লেখা।
যেভাবে যেতে পারেন : সবচেয়ে সহজ আর কাছের হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনা মসজিদ সীমান্ত দিয়ে যদি যেতে পারেন। এখান থেকে এক থেকে দেড় ঘণ্টার মধ্যেই পৌঁছে যাওয়া যায় মুর্শিদাবাদে। আর দর্শনার গেদে দিয়ে ট্রেনে রানাঘাট নেমে, ট্রেন বদলে চলে যেতে পারেন মুর্শিদাবাদ। কলকাতা থেকে ট্রেন বা বাস দুভাবেই যেতে পারেন। থাকা-খাওয়া সাধ্যের মধ্যেই হয়ে যাবে।