গন্তব্য সিলেটের পামবাগান
নগর সভ্যতায় যাচ্ছে দিন, কমছে আয়ু। তাই আসছে পূজার ছুটিতে ঘুরে আসতে পারেন সিলেট শহর থেকে খানিক দূরে পামবাগান থেকে। পামবাগান যাওয়ার উদ্দেশ্যে বন্দরবাজার, মিরাবাজার, শিবগঞ্জ, টিলাগড় পেরিয়ে আমরা মেজরটিলার দিকে যাচ্ছিলাম। অবশেষে আমরা পৌঁছালাম খাদিমপাড়ার মুখে।
এবার কোন দিকে যাব, পথের ঠিকানা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। পরে নিরুপায় হয়ে এলাকাবাসীর কাছে জানতে চাইলাম, পামবাগানটা কোন দিকে। বলা হলো, সামনের পথ ধরে কিছুদূর এগিয়ে গেলেই দেখা পাব পামবাগানের। তবে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করতে হবে। তা না হলে প্রবেশ করা সম্ভব নয়। যা-ই হোক, আমরা চললাম এগিয়ে। এসে পৌঁছালাম গন্তব্যস্থানে, কিন্তু প্রবেশদ্বার তো বন্ধ। মনে মনে ভাবতে লাগলাম, কী করা যায়। আশপাশের বাসার মানুষজনকেও দেখা যাচ্ছে না। কিছু সময় পর এক বয়োজ্যেষ্ঠ লোকের দেখা পেলাম। তাঁর কাছেই জানতে চাইলাম, কীভাবে প্রবেশ করব পামবাগানে। তিনি বললেন, আগে নিয়মিত গেট খোলা থাকত। কিন্তু এখন থেকে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ বন্ধ করা হয়েছে।
বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি বললেন, কিছু সময় অপেক্ষা করেন, দারোয়ান সামনে হয়তো কোথাও গিয়েছে; সে এলে তাকে বলেই ঢুকতে পারবেন। অল্প সময়ের মধ্যে দারোয়ান এসে হাজির। সবাই অনুরোধ করার পর একটি শর্তে প্রবেশ করতে দিলেন সবাইকে। সবাই খুশিমনে সম্মুখ পানে এগিয়ে যেতে লাগলেন। সামনে ছোট একটি পুলের দেখা পেলাম। নিচ দিয়ে শোঁ শোঁ শব্দ করে প্রবাহিত হচ্ছে জলধারা। এই জলধারাগুলোকে সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় ছরা বলে। বেশ ভালোই লাগল অনেক দিন পর ছরার দেখা পেলাম।
আমরা এগিয়ে চললাম পামবাগানের দিকে। দুটি পথ আছে সামনের দিকে যাওয়ার জন্য। একটি সমতলভূমি, আরেকটি অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় মানুষের জন্য টিলা বেয়ে যাওয়া। আমার সঙ্গে আরেকটি গ্রুপও টিলা বেয়ে যেতে লাগল পামবাগানের পথে। বেশ ভালোই লাগছিল পথে বেয়ে চলতে। দূর থেকেই পামবাগানের দৃশ্য দেখতে পারছিলাম। টিলা থেকে অসাধারণ লাগছিল পামবাগানকে। বিশাল বিস্তৃত পামবাগানটির যত দূর চোখ যায় শুধু পামগাছের সারি। আমরা এসে পৌঁছালাম বাগানের পথে। পাশেই দেখা পেলাম একটি চা বাগানের। চা গাছে নতুন পাতা গজিয়েছে, তাই সজীব পাতা আলোকিত করছে চারপাশ। ওপরে চমৎকার নীল আকাশ আর নিচে বিশাল সবুজ এই বাগান দেখলে মনে হয় যেন হাতে আঁকা কোনো ছবি। কথায় কথায় জানতে পারলাম, এই পামবাগানটি ব্যক্তিমালিকানাধীন। আরেকটু সামনে এগিয়েই দেখা পেলাম জলাশয়ের। সেই জলাশয়ের আবদ্ধ জলে পামবাগানের প্রতিচ্ছবি এককথায় অপূর্ব। সারি সারি পামগাছের ফাঁকে সূর্যদেবের লুকোচুরি খেলা। গাছে গাছে পাম ফল ধরেছে। আমরা বাগানের এক মাথা থেকে অন্য মাথায় ঘুরে দেখতে লাগলাম। পাখির কিচিরমিচির শব্দ অন্যরকম পরিবেশ তৈরি করেছে। মুগ্ধতার শেষ এখানেই নয়। আরেকটু সামনে এগিয়েই দেখতে পেলাম বালির পাহাড়। নানা রঙের বালির টিলা এটি। গোলাপি, হলুদ, বাদামি, কমলা, সাদা রঙের বালি স্তরে স্তরে সেজে জন্ম দিয়েছে এই টিলার। আমরা একের পর এক ছবি তুলতে লাগলাম। দেখতে দেখতে গোধূলি বেলা চলে এলো। এবার আমাদের বাড়ি ফেরার পালা। আমরা ফিরে চললাম আমাদের ডেরার পানে।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সিলেটে যাওয়ার সরাসরি বাস রয়েছে। কিছুক্ষণ পরপরই ছাড়ে বাসগুলো। ফকিরাপুল, সায়েদাবাদ আর মহাখালী থেকে বাস পাবেন। ট্রেনে যেতে চাইলে কমলাপুর থেকে যেতে পারেন। প্রতিদিন সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে পারাবত আর দুপুর ২টায় জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ছেড়ে যায় সিলেটের উদ্দেশে। বুধবার ছাড়া প্রতিদিন রাত ৯টা ৫০ মিনিটে ছাড়ে উপবন এক্সপ্রেস। এরপর সিএনজিচালিত অটোরিকশা করে চলে যান খাদিমনগরে। খাদিমনগরের ২ নম্বর গেটের ভেতর দিয়ে প্রবেশ করে চার-পাঁচ মিনিট হাঁটলেই পেয়ে যাবেন। তা ছাড়া সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ পেরিয়ে টিলাগড় ইকোপার্কের মধ্য দিয়ে এগিয়ে গেলেই পামবাগান যাওয়ার রাস্তা।