জঙ্গলকাব্য
সিলেটের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান প্রকৃতিপ্রেমী আর ভ্রমণপিয়াসীদের জন্য আদর্শ স্থান বলা চলে। আমরা চলছি আজ লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের দিকে, ঘড়ির কাঁটায় সকাল ৮টা। আমরা রওনা দিয়েছি সিলেট শহরের প্রাণকেন্দ্র বন্দর বাজার থেকে। স্নিগ্ধ সকালে মহাসড়ক পেরিয়ে চলছি। ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে আমরা এসে পৌঁছালাম লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের প্রবেশদ্বারে। টিকেট কেটে পদব্রজে প্রবেশ করলাম ভেতরে। প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে দেখা পেলাম আকাশছোঁয়া গাছের সারি।
পাহাড়ি টিলার মাঝ দিয়ে এ বনে চলার পথ। বনের ভেতর দিয়েই বয়ে গেছে বেশ কয়েকটি পাহাড়ি ছড়া। আমরা দেখা পেলাম তেমনই একটি ছড়ার। আমরা এগিয়ে যেতে লাগলাম। কিছুদূর চলার পর দেখা পেলাম ঢাকা-সিলেট রেললাইন। এর পরেই মূলত জঙ্গলের শুরু। আমরা রেললাইনের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুললাম। আমরা মূল সড়ক ছেড়ে জঙ্গলের ভেতরে প্রবেশ করলাম। সাইরেনের মতো এক ধরনের শব্দ কানে আসছিল। উদ্যানে বেড়ানোর তিনটি পথ দেখতে পেলাম আমরা। উদ্যানের ভেতরে একটি খাসিয়াপল্লিও আছে। প্রথম পথটির শুরু রেললাইন পেরিয়ে হাতের বাঁ দিক থেকে। পথের শুরুতে উঁচু গাছগুলোতে দেখা মিলতে পারে কুলু বানরের। নানা রকম গাছগাছালির ভেতর দিয়ে তৈরি করা এ পথে চলতে চলতে জঙ্গলের নির্জনতায় শিহরিত হবেন যে কেউ। নির্দেশনা অনুযায়ী চলতে চলতে এই পথ শেষ হবে ঠিক শুরুর স্থানে। আর এক ঘণ্টার পথ হেঁটে একটু ভেতরে গেলে শুরুতেই চোখে পড়বে বিশাল গন্ধরুই, ঝাওয়া, জগডুমুর, কাঁঠালচাঁপা, লেহা প্রভৃতি গাছ। পথের পাশে থাকা ডুমুরগাছের ফল খেতে আসে উল্লুক, বানর ও হনুমান ছাড়াও বনের বাসিন্দাসহ আরো অনেক প্রাণী। ঘুরতে ঘুরতে আমরা একসময় পৌঁছে গেলাম খাসিয়াদের বসতি মাগুরছড়াপুঞ্জি। এ পুঞ্জির বাসিন্দারা মূলত পান চাষ করে থাকেন। ১৯৫০ সালের দিকে বন বিভাগ এ পুঞ্জি তৈরি করে। এসব আমরা জানতে পারলাম পার্কের মধ্যে থাকা তথ্যকেন্দ্র থেকে। পথেই দেখা মিলল বিশাল বাঁশবাগান। এখানে নানা ধরনের বানরের খেলা দেখে মজা পাবে যেকোনো পর্যটক। পথের শেষে দেখতে পেলাম বনের অন্যতম আকর্ষণ উল্লুক পরিবারের। এরা বনের সবচেয়ে উঁচু গাছগুলোতে দলবদ্ধভাবে বাস করে। এ বন এতই ঘন যে মাটিতে সূর্যের আলো পড়ে না বললেই চলে। প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করে আমরা ফিরলাম আগের পথেই। এ যাত্রা বেশ আনন্দেরই ছিল।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে যেতে ট্রেন হচ্ছে সবচেয়ে ভালো মাধ্যম। ঢাকা থেকে ট্রেনে করে শ্রীমঙ্গল যেতে কমলাপুর কিংবা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে উপবন, জয়ন্তিকা, পারাবত অথবা কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনকে বেছে নিতে পারেন আপনার ভ্রমণসঙ্গী হিসেবে। শ্রেণিভেদে জনপ্রতি ট্রেনে যেতে ভাড়া ২৬৫ থেকে এক হাজার টাকা। ট্রেনে যেতে সময় লাগে পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা। বাসে করে ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গল যেতে ফকিরাপুল অথবা সায়েদাবাদ থেকে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা ভাড়ায় হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, সিলেট এক্সপ্রেস, এনা ইত্যাদি নন-এসি বাস পাওয়া যায়। বাসে যেতে সময় লাগে চার ঘণ্টার মতো। শ্রীমঙ্গলে পৌঁছে সেখান থেকে আপনার চাহিদা অনুযায়ী কোনো গাড়ি নিয়ে যেতে পারবেন লাউয়াছড়া উদ্যানে।
ইজিবাইক/ সিএনজি/ জিপ/ মাইক্রোবাস যেকোনো কিছুতেই যাওয়া যায়। যাওয়া-আসা ও সেখানে ঘুরে বেড়ানোর সময়সহ রিজার্ভ নিলে সিএনজি অটোরিকশা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা নেবে। আর আপনি চাইলে দিনে এসে দিনেই ফিরে যেতে পারবেন লাউয়াছড়া উদ্যান থেকে। আর থাকতে চাইলে শ্রীমঙ্গল শহরে গিয়ে থাকতে হবে।