জলবাজার ভিমরুলির পথে
ভেসে চলেছে পেয়ারাভর্তি অগণিত ছোট ছোট নৌকা। পাইকারি দরে পেয়ারাগুলো কেনাবেচা চলছে নৌকার মধ্যেই। দূর থেকে পাইকাররা আসছেন নৌকায়, পেয়ারা কিনে চলেও যাচ্ছেন। সবুজ-হলুদ রঙের কাঁচা-পাকা পেয়ারা নিয়ে বিক্রেতারা যাচ্ছেন পাইকারদের নৌকার কাছে। এ যেন জলনগরীতে এক সবুজ-হলুদের হলিখেলা। এমন দৃশ্য দেখা যাবে ভিমরুলি পেয়ারার হাটে। ঝালকাঠি ও পিরোজপুর জেলার সীমানায় ছোট-বড় খালের মোহনায় গড়ে উঠেছে এই জলবাজার। স্থানীয় গ্রাম ভিমরুলির নামে এ বাজারের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ভিমরুলি বাজার’।
ভাসমান এত বড় বাজার দেশের আর কোথাও চোখে পড়ে না। স্থানীয় ভাষায় এ বাজারকে বলা হয় ‘গোইয়ার হাট’। ভিমরুলি বাজারের প্রাণকেন্দ্রে খালের ওপরের ব্রিজটিতে দাঁড়িয়ে পাখির চোখে দেখা যাবে সমগ্র বাজারকে। কিছু ছবি তুলে নেওয়ার এটাই উৎকৃষ্ট জায়গা। এখান থেকেই দেখা যাবে পেয়ারানির্ভর জনপদের ব্যস্ততার দৃশ্য। কেউ কেউ খুচরা বিক্রির উদ্দেশ্যে নৌকা চালিয়ে যাচ্ছে দূরের হাটে। কেউ বা করছে পেয়ারা রপ্তানির ব্যবস্থা। কেউ দিচ্ছে নৌকার জোগান। দুটি টাকা বেশি দামের আশায় চাষিরা এক পাইকার থেকে নৌকা ভেড়াচ্ছে অন্য পাইকারের কাছে। এ যেন জলরঙের ক্যানভাসে আঁকা সত্যিকারের অপরূপ বাংলার প্রতিচ্ছবি।
ভিমরুলি বাজার মেলে সকাল ৯টার দিকে আর বাজারের রসদ জোগাতে পেয়ারাচাষিদের কাজ শুরু হয় খুব ভোরে। সূর্যের আলো ফোটার আগেই নাওকোন্দা (তালগাছের নৌকা) নিয়ে বাগানে হাজির হয় তাঁরা। আকাশে সামান্য আলো দেখা দিলেই পেয়ারা নিয়ে রওনা হয় বাজারে।
অসংখ্য পেয়ারা বাগান থেকে পেয়ারা নিয়ে ডিঙিনৌকাগুলো ভিড় করে ভিমরুলি বাজারে। বেচাকেনার মহড়া চলে পাইকার-আড়তদার ও বিক্রেতার মধ্যে। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি চলে এই কর্মযজ্ঞ। পাইকারের মাধ্যমে এই পেয়ারা চলে যায় ঢাকাসহ প্রত্যেক বড় শহরে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকাররা এ বাজার থেকে পেয়ারা সংগ্রহ করেন। এ অঞ্চলে উৎপাদিত পেয়ারা রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও।
স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যমতে, এ অঞ্চলে এক থেকে দশ একরের বাগান রয়েছে। যার মধ্যে কৃত্তিপাশা, ভিমরুলি, শতদাসকাঠি, খাজুরা, মিরাকাঠি, ডুমুরিয়া, জগদিশপুর, খোদ্রাপাড়া, পোষন্ডা, হিমানন্দকাঠি, বেতরা ও আটঘর কুড়িয়ানা গ্রামের পেয়ারাই এই হাটে বেশি বিক্রি হয়।
এই হাট নিজ চোখে দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে আসে অগণিত দর্শনার্থী। ভাসমান বাজার দেখার পাশাপাশি সবুজ প্রকৃতিকে উপভোগ করার সুযোগ আছে এখানে। এ অঞ্চলেই রয়েছে কিছু জমিদারবাড়ি, গুটিয়া মসজিদ, মাধব রাজার দুর্গাসাগরসহ একাধিক ভ্রমণকেন্দ্র। তাই তো কাছের মানুষ, মনের মানুষ নিয়ে ভ্রমণপিপাসুরা ছুটে যাচ্ছেন এই অপরূপ জনপদে।
যেভাবে যাবেন
ভিমরুলি বাজার দেখতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই সকাল ৯টার আগে সেখানে উপস্থিত হতে হবে। ঢাকা সদরঘাট থেকে রাতের লঞ্চে বারিশাল যেতে পারেন। লঞ্চে ডাবল কেবিন দুই হাজার টাকা। ডেকে ২০০ টাকা। খুব সকালে বরিশাল নথুল্লাবাদ থেকে মাহিন্দ্রায় যেতে হবে বনারিপাড়া। মাহিন্দ্রায় জনপ্রতি ভাড়া ৩০ টাকা। সেখান থেকে ট্রলারে করে ভিমরুলি বাজার। এ ছাড়া সায়েদাবাদ বা গাবতলি থেকে সরাসরি স্বরূপকঠির বাসে যাওয়া যাবে বানারিপাড়া পর্যন্ত। বাসভেদে ভাড়া ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা।
ভিমরুলিতে থাকার জায়গা নেই, তাই বরিশাল বা স্বরূপকাঠির আবাসিক হোটেলে থাকতে পারবেন। চাইলে রাতে লঞ্চে ঢাকায় ফিরতে পারবেন। খাবারের জন্য স্থানীয় ছোট হোটেলের মোটা চালের ভাত আর নদীর তাজা মাছ পাবেন। চাইলে একদিনের ট্যুর দিতে পারেন এই জলবাজারে।