ঘুরতে ঘুরতে জব্বার সওদাগরের বলীখেলায়
চট্টগ্রাম বাণিজ্যিক নগরী বা বন্দর নগরী যাই বলি না কেন বাংলাদেশের অন্যান্য শহরে তুলনায় এটি আলাদা এক শহর। এ শহরের আছে আলাদা এক ইতিহাস।আর এ ইতিহাসের অন্যতম অংশ বলীখেলা। তাই আসা যাক বলি খেলার কথায়, প্রতিবছর চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে ১২ বৈশাখ বা ২৫ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয় এই বলীখেলা। যা চট্টগ্রামে ভাষাতে জব্বারের বলীখেলা নামে সুপরিচিতি লাভ করেছে শত বছর ধরে।
জব্বারের বলীখেলা
১৯০৯ সালে দিকে চট্টগ্রামে বদরপতি এলাকার ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর এই বলীখেলার শুভ সূচনা করেছিলেন। আবদুল জব্বার মারা যাওয়ার পরে জব্বারের বলীখেলা নামে এই প্রতিযোগিতাটি পরিচিত লাভ করে।যা অতি জনপ্রিয় ও ঐতিহাসিক বলীখেলা হিসেবে বিবেচিত হয় দেশ-বিদেশে।
যা দেখবেন
এই জব্বারের বলীখেলা কেন্দ্র করে ঐতিহ্যবাহী লালদীঘি মাঠে তৈরি করা হয় ১২ ফিট বাই ১২ ফিটের চুতুর্ভুজ আকৃতির বলীখেলার মঞ্চ। মাটি থেকে তিন বা চার ফুট উপরে বালি দিয়ে তৈরি করা হয় এই মঞ্চটি। মঞ্চের চারদিকে রশি দিয়ে বেড়া দেওয়া থাকে। যাতে করে সাধারণ দর্শক এই বলীখেলাটি দেখতে পাই। প্রতিবছর দেশ বিদেশ থেকে নতুন নতুন বলীরা এই জব্বারের বলীখেলায় অংশগ্রহণ করে। তার মধ্যে ১০ বছরে শিশু থেকে আশি বছরে উপরে বলীরাও বলী ধরতে লালদীঘি মাঠে আসেন। যা নিজ চোখে না দেখলে বুঝা যাবে না কী রকম দৃশ্য পরিণত হয় এই মাঠটিতে। এই বলীখেলাকে কেন্দ্র করে লালদীঘি ময়দানের আশপাশে প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বৈশাখী মেলা বসে। তাতে নিত্য নতুন গ্রামের মাটির তৈরি জিনিসপত্র, গাছের তৈরি করা খাট -পালং, কুটিরশিল্প জিনিস, বেতের তৈরি জিনিসসহ নানা রকমে সদাই পাতি নিয়ে আসে সারা দেশ থেকে দোকানিরা। বলীখেলা শেষে মেলা থেকে বাসাবাড়ি নিত্য প্রয়োজনী জিনিসপত্র কিনতে ভিড় করে মানুষজন। যা চট্টগ্রামে সবচেয়ে বড় বৈশাখী মেলা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। আর বলীখেলা হয় একদিন কিন্তু মেলা চলে তিন দিনব্যাপী লালদীঘির চারপাশের এলাকাজুড়ে।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে আসার জন্য এসি বা ননএসি বাস আছে। খুব সহজে আপনি চাইলে চট্টগ্রাম আসতে পারেন। ভাড়া ৬০০ টাকা থেকে এক হাজার ৫০০টাকা মধ্যে। বাসে এলে আপনাকে নামতে হবে দামপাড়া বাস কাউন্টার বা বিআরটিসি বাস কাউন্টারে।সেখান থেকে সিএনজি বা রিকশাতে করে যেতে পারবেন জব্বারের বলীখেলা দেখতে। সিএনজি বা রিকশাভাড়া নেবে ৫০ থেকে ৮০ টাকা।
আবার ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে ট্রেনে করে চট্টগ্রাম আসা যাবে। সকালে থেকে রাত পযর্ন্ত বিভিন্ন সময়ে ট্রেন আছে। আছে এসি ও ননএসি ট্রেন । আপনি চাইলে যেকোনো ট্রেনে আসতে পারবেন চট্টগ্রামে। ট্রেনগুলো হলো সূবর্ণা এক্সপ্রেস, সোনা বাংলা, মহানগর গোধূলী, চট্টলা এক্সপ্রেস, নিশিতা এক্সপ্রেস। ভাড়া ৪০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা। তবে ট্রেনের কেবিন ভাড়া আলাদা। আপনাকে কথা বলে নিতে হবে। তবে ঢাকা থেকে ট্রেনে করে এলে চট্টগ্রাম রেল স্টেশন থেকে জব্বারের বলীখেলা মাঠ খুব কাছে। তাই আপনি চাইলে হেঁটে চলে যেতে পারবেন নিউমার্কেট কোতোয়ালির সামনে দিয়ে লালদীঘির মাঠ। সময় লাগে ১৫-২০ মিনিট। ঢাকা শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানে আসতে পারবেন চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। সেখান থেকে কার বা সিএনজিতে করে লালদীঘিপাড়ে বলীখেলা দেখতে আসতে পারবেন। কার বা সিএনজি ভাড়া ৪০০ থেকে ৮০০টাকা হবে।
খাবার-দাবার
চট্টগ্রাম শহরে বেশ কিছু ভালো মানের হোটেল আছে খাবার দামও তেমন বেশি না। আপনি চাইলে কম টাকাতে খাবার খেতে পারবেন। লালদীঘির আশপাশেসহ, নিউমার্কেট, রেলস্টেশন এলাকা, হাজারীগলি, তিনপুলের মাথাতে বিভিন্ন রকমে খাবার দোকান পাওয়া যাবে।
থাকার হোটেল
স্টেশন রোডে অনেক ভালো আবাসিক হোটেল আছে। হোটেল আল ফয়সাল, লাভ লেইন, হোটেল টাওয়ার ইন, জুবলী রোড়, হোটেল ফেভার ইনসহ দামপাড়া বাস কাউন্টারে পাশে জিওসি মোড় হোটেল মেরিডিয়ান, হোটেল ওয়েল পার্ক, হোটেল সিলমুন আপনি চাইলে হেঁটেও চলে যেতে পারবেন হোটেলগুলোতে। এই হোটেলগুলো কাছাকাছি হলো লালদীঘিরপাড় আপনি ঘুরতে ঘুরতে ঐতিহাসিক জব্বারের বলীখেলায় চলে যেতে পারবেন। হোটেল ভাড়া ৮০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০০০ টাকা।