ভ্রমণ
চার হাজার টাকায় ফ্যাশনের শহরে
দিল্লির ফ্যাশন আর গুলমার্গের আবহাওয়া নাকি কেউ ঠিক ধরতে পারে না, কখন-কীভাবে যে তার পরিবর্তন হয়! তাই দিল্লিকে বলা হয় ফ্যাশনের শহর।
কলকাতা থেকে দিল্লি ট্রেনে কীভাবে যাবেন
অনেকেই এটা নিয়ে কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকেন। যেটা প্রস্তুতিতে কিছুটা বাধার সৃষ্টি করে। রাজধানী এক্সপ্রেসের টিকেট কাটতে গিয়ে, কী করবেন এটা ভেবে? কারণ ট্রেনের ভাড়া দুই হাজার ৮০০ টাকা! আর প্লেনের ভাড়া চার হাজার টাকা মাত্র! এখন কী করবেন?
ভেবে দেখুন, যদি ট্রেনে যান, তাহলে কলকাতায় গিয়ে একদিন থাকতে হবে, সে ক্ষেত্রে একটি স্ট্যান্ডার্ড রুম নিতে হবে অন্তত দুই হাজার ৩০০ থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকায়, পরিবার নিয়ে একদিনের খাওয়া অন্তত এক হাজার টাকা, ট্যাক্সি ভাড়া আর অন্যান্য মিলে আরো প্রায় ৫০০ টাকা তো লাগবেই। তাতে করে ট্রেনে গেলে ট্রেন ভাড়া, একদিন কলকাতার রুম ভাড়া, খাওয়া আর লোকাল ট্রান্সপোর্ট খরচে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা খরচ হয়ে যাবে।
কলকাতা থেকে দিল্লি প্লেনে যেতে সময় লাগে মাত্র দুই ঘণ্টা, যেখানে ট্রেনে ১৬-১৮ ঘণ্টা লাগবে।
অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল থেকে টার্মিনাল-৩
রাত হোক বা দিন, ঠিক দুই ঘণ্টা পরে কলকাতা থেকে প্লেনে দিল্লি পৌঁছাবেন। ভেবে নিতে পারেন যে এই প্লেন থেকে নেমে, একই জায়গা থেকে শ্রীনগরগামী বিমান ধরতে হবে বুঝি? আর সেই ফাঁকে একটু কিছু খাবার ব্যবস্থা করতে হবে সবার জন্য, তা ছাড়া আমাদের বাঙালির পেট কি আর বার্গারে ভরে? ভেবে রাখতে পারেন, এখান থেকে তো ভেতরে ঢোকার ব্যাপার নেই, বাইরে তো যেতেই পারে যে কেউ। তাই বাইরে গিয়ে সবাই মিলে পেট পুরে দিল্লির কাবাব-বিরিয়ানি খেয়ে তারপর ফের এয়ারপোর্টে ঢুকতে পারেন।
কিন্তু বিমান থেকে নেমে বেল্ট থেকে লাগেজ নিতেই নতুন জটিলতায় পড়বেন। আপনি নামবেন অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরে আর আপনাদের পরের ফ্লাইট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর টার্মিনাল-৩ থেকে। তো সেটা কোথায়? ভাববেন, হবে হয়তো এটারই পাশে বা ডানে-বামে কোনো লাগোয়া এয়ারপোর্ট বা এক্সটেনশন থেকে, যেমনটা আমাদের দেশে সাধারণত হয়ে থাকে। কিন্তু না, খোঁজ নিয়ে জানতে পারবেন, টার্মিনাল-৩ প্রায় আট কিলোমিটার দূরে অবস্থিত! আর যেতে হবে বাসে করে বা ট্যাক্সিতে। ইনফরমেশনে খোঁজ নিয়ে জেনে নেবেন শুধু টার্মিনাল ৩-এ যেতে এয়ারপোর্টের ব্যবস্থাপনায় আলাদা বাস আছে।
প্রায় ২০ মিনিটের সেই বাস জার্নিটা দারুণ লাগবে। যদি অফ পিক আওয়ার হয় তো একদম ফাঁকা দিল্লির ঝকঝকে রাস্তা, রাতের দিল্লি হলে দুই পাশের আলোতে রাস্তা চিকচিক করে হাসবে যেন! নীরব রাতের ভেজা রাস্তায় খুব দ্রুতগতিতে বাস পৌঁছে যাবে দিল্লির টার্মিনাল-৩ বিমানবন্দরে। সেখানে নেমে আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নেবেন। আর আগে থেকে ভেতরে না ঢুকে, বাইরে থেকে খাবার খেয়ে নিতে পারেন। এরপর খাবার কিনে নিয়ে তারপর ভেতরে ঢুকতে হবে।
দিল্লি এয়ারপোর্টের খাবার-দাবার
হাতে পর্যাপ্ত সময় যদি থাকে, তবে মনের মতো খাবার খুঁজে নিতে পারেন পাশের কেএফসিতে। প্রায় ২১০ টাকা করে বাসমতি চালের অন্য রকম বিরিয়ানি, সঙ্গে দারুণ স্বাদের চিকেন আর কোমল পানীয় তো আছেই বিশাল আকৃতির। দিনের ক্ষুধার তৃপ্তি মেটাতে এটা নিতে পারেন নিশ্চিন্তে। আরো অনেক আইটেম তো আছেই, পছন্দ করে নিতে পারেন স্বাদ আর সাধ্যের মধ্যে। পাসের ফাস্টফুডের দোকান থেকে প্যাটিস, নুডলস, সঙ্গে পানি নিতে পারেন। যেকোনো খাবার একজনের ৬৫ টাকার পাওয়া যায় সেখানে।
খাওয়া শেষ করে এয়ারপোর্টে ঢোকার মুখেই পড়বে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কাঠের চরকা, সেটার ছবি তুলে ভেতরে ঢুকেই তো হাঁ হয়ে যাবেন। এতো ঝকঝকে, তকতকে, ঝলমলে আর সুবিশাল এয়ারপোর্ট দেখে আপনি অবাক হয়ে যাবেন। অপূর্ব সেই এয়ারপোর্ট।
দু-এক ঘণ্টা পুরো এয়ারপোর্টের এ মাথা থেকে ও মাথা করে কেটে যাবে অনায়াসে আপনার। এরপর নতুন বোর্ডিং পাস নিয়ে আপনাকে মূল এয়ারপোর্টে প্রবেশ করতে হবে।
এবার তো ভেতরে ঢুকে একেবারে তাজ্জব বনে যাবেন! ভেতরে ঢুকে দেখে মনে মনে বলবেন, এটা যদি এয়ারপোর্ট হয় তো এতক্ষণ যেখানে ছিলাম, সেটা তো বারান্দা মাত্র! চলন্ত সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আবার ওপরে উঠে টিকেট দেখে চলে যাবেন আপনার নির্ধারিত গেটে, যেখান থেকে আপনার বিমান ছাড়বে।
গেট আছে ১ থেকে ৬০। একদিকে হাঁটা, বাম পাশ ধরে, আর ডান দিকে ১ থেকে ৩০ পর্যন্ত গেট। হাঁটা শুরু করতেই অদ্ভুত অদ্ভুত বিস্ময় সামনে আসতে লাগবে এক এক করে। এটা বিমানবন্দর নাকি কোনো সুবিশাল সুপারমার্কেট, বুঝতে বেশ কিছু সময় লাগবেই। কী নেই সেখানে, সব ব্র্যান্ডের কাপড় থেকে শুরু করে জুতা, পারফিউম, ব্যাগ, খাবারের দোকান, নানা রকম রঙিন পানীয়, বইয়ের দোকান, সিডি থেকে শুরু করে নানা রকম নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস সবকিছুই আছে।
আরাম-আয়েশ
এসব থেকেই আমার কাছে যে জিনিসটা বড় বিস্ময় হয়ে দেখা দেবে, সেটা হলো প্রায় ৫/৭ কিলোমিটার হাঁটার পুরোটা পথ কার্পেটে মোড়ানো, সেটাও একই রকম কার্পেট, নিখুঁত, পরিচ্ছন্ন। আর আছে প্রতিটি গেটের কাছে বসার চেয়ারের পাশাপাশি ভীষণ আরামদায়ক ঘুমানোর ব্যবস্থা। অনেকেই দেখলাম, সেখানে দিব্ব্যি ঘুমোচ্ছে, ব্যাগপত্র কাছে রেখেই। নিশ্চয়ই এখানে হারানোর বা চুরির ভয় নেই।
আর আছে হাঁটার কষ্ট দূর করতে চলমান রাস্তা, প্রতিটি গেটের কাছে, মাঝে বা পাশেই। আপনার হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে? ওখানে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লেই চলে যাবেন পরের গেটের কাছে! আরো আছে বিমানবন্দরের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার জন্য ছোট ছোট গাড়িও! তবে সেটা সবার জন্য কি না বা পেইড কি না, সেটা জানা হয়নি। যাই হোক না কেন, সুবিধাটা তো আছে অন্তত।
এভাবে কিছুটা হেঁটে, কিছুটা চলমান রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকে পৌঁছে যাবেন আপনাদের নির্ধারিত বিমান ছাড়ার গেটে। সেখানে গিয়েই ঘুমানোর চেয়ার খুঁজে নিতে পারেন। সঙ্গে সঙ্গে ঘুমের আয়োজন সেরে নিতে পারেন নিশ্চিন্তে! তবে সাবধান, রাতের বা ভোরের আলো প্লেন হলে কিন্তু সর্বনাশ হতে পারে আরামে ঘুমিয়ে থেকে! তবে ঠিক ততক্ষণই ঘুমোতে পারেন, যতক্ষণ প্লেন ছাড়ার ঘোষণা না আসে। যদি প্লেন হয় একদম ভোরে বা সকালে জেগে থেকে দেখতে পারেন, অপূর্ব ভোরের আলো ফুটতে শুরু করা, পূর্বের আকাশে লালের রোশনাই, সঙ্গে গোলাপি-বেগুনি আভা, সূর্য দেব ঘুম থেকে উঠি, উঠি করছে...