পূজার ছুটিতে
জল ও জঙ্গলের কাব্য
আপনি কুঁড়েঘরে বসে ফিরে যাবেন ছোটবেলার ফেলে আসা দিনগুলোতে। কেউ বা বিলের ধারে চেয়ারে বসে রোমন্থন করবেন শৈশবে মাছ ধরার সেই মধুর স্মৃতি। আর এ সবই হবে গাজীপুরের পুবাইলের অসাধারণ সুন্দর প্রাকৃতিক রিসোর্ট ‘জল ও জঙ্গলের কাব্য’তে।
এখানে নেই কোনো আধুনিক অট্টালিকা বা দামি রেস্টুরেন্ট। জল ও জঙ্গলের কাব্যতে প্রবেশ করলে আপনার মনে হবে আপনি এক আলাদা জগতে প্রবেশ করেছেন, যে জগৎ আপনাকে দেবে অন্য রকম প্রশান্তি এবং ভালো লাগার অনুভূতি।
জল ও জঙ্গলের কাব্যে প্রবেশ করলে আপনি একেবারে গ্রামের আবহ ফিরে পাবেন। যেখানে নেই কোনো কৃত্রিমতা। এখানে প্রকৃতিকে নিজের মতো করে বেড়ে উঠতে দেওয়া হয়েছে।
জল ও জঙ্গলের কাব্যতে খাবার-দাবার
জল ও জঙ্গলের কাব্যতে ঢুকলে আপনাকে প্রথম দেওয়া হয় লেবুর শরবত। শরবত খাওয়ার পর আপনাকে নিয়ে যাওয়া হবে আপনার জন্য নির্ধারিত জায়গায়। এখানকার স্পটগুলো বিভিন্ন জেলার নাম দ্বারা নামকরণ করা হয়েছে। কিছু করা হয়েছে তালপাতা বা গোল পাতা নামে। স্পটে বসার জায়গা হলো বাঁশ ও মুলিবেড়া দিয়ে তৈরি ঘর। যা চারিদিক দিয়ে খোলা। যার দরুন আলো-বাতাস সুন্দরভাবে চলাচল করতে পারে। এখানে আছে বিছানাপত্র এবং বসার জন্য সোফাসেটের মতো আরামদায়ক চেয়ার। আপনার স্পটটির চারিদিকে আছে বিস্তৃত জলাভূমি। আছে নৌকায় চড়ার ব্যবস্থা। স্পটটিতে আসার পর আপনাকে সকালের নাশতা দেওয়া হবে। সে কী নাশতা, রাজকীয় ব্যাপার। মুরগির ঝালফ্রাই, বুটের ডাল সঙ্গে গিলা-কলিজা দেওয়া, সবজি, পরোটা, চালের রুটি, চিতই পিঠা, সুজি, ধনেপাতার চাটনি, মিনারেল ওয়াটার ইত্যাদি। খাবারের স্বাদের কথা কী আর বলবো। নাশতা করে আপনি চলে যেতে পারেন চা খেতে। সঙ্গে বাউল গ্রুপের গান শুনতে শুনতে চা বা কফি খেতে পারেন। আরা গাছের নিচে বসে জারি সারি লালন ভাওয়াইয়া শুনতে পারেন। এরপর আপনি গান শুনতে থাকবেন আর পুকুর থেকে জাল ফেলে মাছ ধরা হবে। জালে অনেক মাছ ধরা পড়ল, সেখান থেকে বড় বড় চারটা মৃগেল মাছ নিলেন আপনি।
যেগুলোর ওজন ৩০ কেজির মতো, সেগুলো রেখে বাকি মাছ ছেড়ে দেওয়া হতে পারে। দুপুরবেলার খাবারের জন্য ডাইনিংয়ে চলে আসতে পারেন আপনি। খাবার পরিবেশন করা হবে আপনার জন্য। খাবার কথা সব মিলিয়ে ১৯-২০ পদের। যার মধ্যে ভাত, পোলাও, মুরগি, মাছ, নোনা ইলিশের পাতুরি, সবজি চার-পাঁচ পদের, ভর্তা পাঁচ-ছয় পদ, ডাল তিন-চার পদের, সালাদ থাকবে। খাবারের স্বাদ অনন্য, রান্না খুবই ভালো। জল ও জঙ্গলের কাব্যতে ফুটবল, ভলিবল এবং ব্যাডমিন্টন খেলার জায়গা আছে। আস্তে আস্তে সূর্য পশ্চিম দিকে যেতে থাকলে আপনার বিদায় ঘণ্টা বাজতে শুরু করবে। এবার ফেরার জন্য তৈরি হতে পারেন। তখন হয়তো জানতে পারবেন ভাঁপা পিঠা তৈরি হচ্ছে আপনার জন্য। কিচেনে গিয়ে দেখতে পাবেন এলাহি ব্যাপার। ঢেঁকিতে চাল গুঁড়ো করে একসঙ্গে ৫০-৬০টি পিঠা বানানো হচ্ছে। একসঙ্গে চার-পাঁচটি ভাঁপা দেখতে পারেন কিন্তু ৫০-৬০টি একসঙ্গে— সে এক এলাহি কাণ্ড। এরপর বাউলের গান শুনতে শুনতে আর পিঠা খেতে খেতে সূর্য্যমামা আপনার কাছ থেকে বিদায় নিতে থাকবে। এরপর পিঠা খেয়ে আপনি প্রকৃতির এক সাজানো গোছানো জঙ্গল থেকে বের হয়ে ইটপাথর, সিমেন্টের ব্যস্ত শহরের দিকে ফিরে আসবেন। তবে আপনার মনে কিছু সুখকর স্মৃতি থাকবে।
যেভাবে যাবেন
মহাখালী বা আবদুল্লাহপুর থেকে নরসিংদী বা ভৈরবগামী যে কোনো বাস উঠে পুবাইল কলেজ গেট নেমে রিকশা বা ভ্যানগাড়িকে জল ও জঙ্গলের কাব্যের কথা বললে নিয়ে যাবে আপনাকে। মজার ব্যাপার হলো, স্থানীয়রা এটাকে পাইলটবাড়ি নামে চেনে। এ ছাড়া নিজেরা গাড়ি বা বড় বাস নিয়ে যেতে পারবেন।
এখানে যেতে হলে নিম্নে জনপ্রতি ১০ জনের গ্রুপ হতে হবে। ডে ট্রিপের জন্য ১৫০০ টাকা এবং রাতে থাকার জন্য জনপ্রতি ৪০০০ টাকা নেওয়া হয়ে থাকে। যাওয়ার আগে বুকিং করে যেতে হবে।