ছুটির দিনে
ঘুরে আসুন হজরত শাহজালালের (রহ.) মাজারে
৩৬০ আউলিয়ার সিলেট নগরী পুণ্যভূমি হিসেবে খ্যাত সিলেট। সিলেটের মাটিতে যেসব পীর-দরবেশ শায়িত আছেন, তাঁদের মধ্যে হজরত শাহজালাল (রহ.) অন্যতম। এর জন্য তাঁকে ওলিকুলের শিরোমণি বলা হয়। কথিত আছে, প্রাচ্যদেশে আসার আগে শাহজালালের (রহ.) মামা মুর্শিদ সৈয়দ আহমদ কবীর (রহ.) তাঁকে একমুঠো মাটি দিয়ে বলেছিলেন, ‘স্বাদে-বর্ণে-গন্ধে এই মাটির মতো মাটি যেখানে পাবে, সেখানে বসতি স্থাপন করে ইসলাম প্রচার করবে। ‘হজরত শাহজালাল (রহ.) বিশিষ্ট শিষ্য শেখ আলীকে এই মাটির সন্ধানের জন্য দায়িত্ব প্রদান করেন এবং নির্দেশ দেন যে যাত্রাপথে বিভিন্ন জনপদের মাটির সঙ্গে যেন এই জনপদের মাটির তুলনা করে তিনি দেখেন। সিলেটের মাটির সঙ্গে আরবের মাটির মিল পাওয়ায় হজরত শাহজালাল (রহ.) সিলেটে বসতি স্থাপন করে ইসলাম প্রচারে মনোনিবেশ করেন। সিলেট শহরের প্রাণকেন্দ্রেই অবস্থিত হজরত শাহজালালের (রহ.) মাজার।
যা দেখবেন
প্রধান রাস্তা থেকে কিছুটা পথ ভেতরে গেলে মূল মাজার কমপ্লেক্স। শুরুতেই সামনে দেখা যাবে দরগাহ মসজিদ। বিভিন্ন সময়ে সংস্কারের ফলে মসজিদটি বর্তমানে আধুনিক রূপ নিলেও প্রথম এটি তৈরি হয়েছিল ১৪০০ খ্রিস্টাব্দে। মসজিদের পাশেই রয়েছে মাজারে ওঠার সিঁড়ি। গম্বুজবিশিষ্ট একটি হলঘরের মধ্য দিয়ে মাজারে প্রবেশ করতে হয়। এই হলঘরের ঠিক পশ্চিমের ভবনটি ঘড়িঘর। ঘড়িঘরের আঙিনার পূর্ব দিকে যে তিনটি কবর রয়েছে, তা হজরত শাহজালালের (রহ.) ঘনিষ্ঠ তিনজন সঙ্গীর। এর দক্ষিণপাশে ছোট ঘরটি হজরত শাহজালালের (রহ.) চিল্লাখানা। কথিত আছে, দুই ফুট চওড়া এ জায়গায় তিনি জীবনের তেইশটি বছর ধ্যানমগ্ন কাটিয়েছেন। হজরত শাহজালালের (রহ.) মাজার চত্বরের উত্তর দিকে একটি পুকুর রয়েছে। এ পুকুরে রয়েছে অসংখ্য গজার মাছ। এসব মাছকে পবিত্র জ্ঞান করে দর্শনার্থীরা ছোট ছোট মাছ খেতে দেয়। পুকুরের পশ্চিম কোণে ছোট মাছ বিক্রির ব্যবস্থা রয়েছে। পুকুরে অজুর ব্যবস্থাও আছে। হজরত শাহজালালের (রহ.) আধ্যাত্মিক শক্তির পরিচয় পেয়ে হজরত নিজামুদ্দিন আউলিয়া (রা.) তাঁকে সাদরে গ্রহণ করেন। প্রীতির নিদর্শনস্বরূপ তিনি তাঁকে এক জোড়া সুরমা রঙের কবুতর বা জালালি কবুতর উপহার দেন। সিলেট ও আশপাশের অঞ্চলে বর্তমানে যে সুরমা রঙের কবুতর দেখা যায়, তা ওই কপোত যুগলের বংশধর এবং জালালি কবুতর নামে খ্যাত। মাজারের পূর্ব দিকে একতলা ঘরের ভেতরে বড় তিনটি ডেকচি রয়েছে। এগুলো ঢাকার মীর মুরাদ দান করেছেন বলে জানা যায়। মীর মুরাদ ঢাকার হোসেনী দালান তৈরি করেন। পুণ্যের উদ্দেশ্যে প্রতিদিন দর্শনার্থীরা ডেকচিগুলোতে প্রচুর টাকাপয়সা দান করেন। মাজারের দক্ষিণ দিকে গ্রিলঘেরা তারকাখচিত ছোট্ট যে ঘরটি রয়েছে, এটি হজরত শাহজালালের (রহ.) চিল্লাখানা। স্থানটি মাত্র দুই ফুট চওড়া। কথিত আছে, হজরত শাহজালাল (রহ.) এই চিল্লাখানায় জীবনের ২৩টি বছর আরাধনায় কাটিয়েছেন।
কীভাবে যাবেন
ঢাকার সায়েদাবাদ, ফকিরাপুল, রাজারবাগ ও মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে গ্রিনলাইন, শ্যামলী, এনা, হানিফ বা বিআরটিসি বাসে অথবা ট্রেনে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে সকালে আন্তনগর পারাবাত, দুপুরে জয়ন্তিকা ও কালনী এবং রাতে উপবন সিলেটের পথে ছোটে। ভাড়া ৩২০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকার মধ্যে। সেখান থেকে হজরত শাহজালালের (রহ.) মাজারের ভাড়া রিকশায় ৫০ টাকা, সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া ১০০ থেকে ১৫০ টাকা।