ছুটির দিনে
৭০০ টাকায় মালনীছড়া চা বাগানে

ঢেউখেলানো সবুজে চোখ আটকে দেওয়া ছবি বুঝি একটাই পৃথিবীতে। হ্যাঁ, পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর চা বাগান রয়েছে আমাদের দেশেও। সিলেটে ভ্রমণে গিয়ে মালনীছড়া চা বাগান গেলে আপনারও এমনটা মনে হতে বাধ্য। তাই আর দেরি না করে আসছে ছুটির দিনগুলোতে ঘুরে আসুন মালনীছড়া চা বাগানে। আর খরচের কথা ভাবছেন, মাত্র ৭০০ টাকা।
ইতিহাস
মালনীছড়া চা বাগান হলো বাংলাদেশের সিলেট জেলায় অবস্থিত একটি চা বাগান। এটি উপমহাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন চা বাগান। মালনীছড়া চা বাগান বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের বৃহত্তম এবং সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠিত চা বাগান। ১৮৪৯ সালে লর্ড হার্ডসন এক হাজার ৫০০ একর জায়গার ওপর এটি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৬৫০ সালে চীনে প্রথম চা উৎপাদন শুরু হয়। দেশটির বুদ্ধিজীবীদের প্রতিদিনকার জীবনের সাতটি কাজের একটি ছিল চা পান। তার প্রায় ২০০ বছর পরে ১৮৫৪ সালে পাক-ভারতীয় উপমহাদেশের সিলেটেই প্রথম চা উৎপাদন শুরু হয়। চায়ে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে ব্রিটিশ আর বাংলাদেশিরা। সিলেটের মালনীছড়া চা বাগান থেকেই উপমহাদেশে চা চাষের গোড়াপত্তন। এরপর মালনীছড়া বহু ইংরেজ, পাকিস্তানি ও বাংলাদেশি ব্যবস্থাপকের হাত ঘুরে ১৯৮৮ সাল থেকে এখনো ব্যক্তিগত মালিকানা রয়েছে।
যা দেখবেন
মেঘকন্যার আগমনে সবুজ চায়ের বাগান। দূর মেঘালয় থেকে হিম বাতাস বয়ে নিয়ে আসে অতিথি মেঘকন্যাকে। তার পর চা বাগানের আকাশ সাজে শুভ্র মেঘমালায়। একসময় মেঘকন্যা বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে কচি চা পাতার ওপর। বৃষ্টির পরশে চায়ের পাতা তার রং বদলায়। বর্ষায় দুটি পাতা ও একটি কুঁড়ি তোলার উপযুক্ত সময়। অর্থাৎ মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চায়ের মৌসুম। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি এ দুই মাসে চা প্লাকিং করা হয় না। কারণ, শীতকালে অতিরিক্ত ঠান্ডায় চা পাতার কুঁড়ি বৃদ্ধি পায় না। চা গাছের সব পাতায় কিন্তু চা হয় না। শুধু দুটি পাতা ও একটি কুঁড়ি হলো চায়ের মূল উৎস। দুটি পাতা থেকে আসে লিকার এবং কুঁড়ি থেকে আসে ফ্লেভার। চা বাগান মানেই দিগন্তপ্রসারী সবুজের মাঝে ছায়াবৃক্ষের মিলনমেলা। নির্ভীক যাত্রী আপনি, অপলক তাকিয়ে থাকবেন চা বাগানের পাশ দিয়ে বয়ে চলা স্বচ্ছ ছড়ার পানে। ছোট ছোট টিলায় ভুটান ফুলে হারিয়ে যাবে মন অনাবিল আনন্দে। হঠাৎ আপনি চমকে উঠবেন যখন ছড়ার জলে স্পর্শ পাবেন গাঢ় সবুজ শৈবালের। কখনো গভীর অরণ্যে উপলব্ধি করতে পারবেন আলোছায়ায় মায়াময় লুকোচুরি খেলা। প্রায় আড়াই হাজার একর ভূমিস্বত্ব সীমানায় উঁচু-নিচু টিলার পর টিলায় ভরা চা বাগানটি। রয়েছে এক হাজার দুইশ একর জমি, রাবার আবাদের জন্য সাতশ একর জমি এবং কারখানা, আবাসন, বৃক্ষ, বনজঙ্গলজুড়ে বাকি জমিটুকু। যাঁরা খুব অল্প সময়ে খুব সুন্দর কোনো সবুজের গালিচায় হারিয়ে যেতে চান, তাঁদের জন্য অনন্য মালনীছড়া চা বাগান।
যাবেন কীভাবে
ঢাকা থেকে বাস/ ট্রেন/ প্লেনযোগে প্রথমে আপনাকে আসতে হবে সিলেটে। ভাড়া নেবে ৩২০ থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকা। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে প্রতিদিন সকাল, দুপুর, রাতে ট্রেন ছাড়ে সিলেটের উদ্দেশে। আর মহাখালী, সায়েদাবাদ থেকে বাস আধা ঘণ্টা পর পর ছাড়ে সিলেটের উদ্দেশে। ট্রেন/ বাসস্টেশন থেকে মালনীছড়া চা বাগান যেতে রিকশা, সিএনজি ভাড়া নেবে ৪০ থেকে ১৫০ টাকা।