পূজায় ঘোরাঘুরি
চতুর্দশ দালাই লামার খাসতালুক ধরমশালায় একদিন
পূজার ঠিক আগেই হালকা শীতের এই সময়টাতে ঘুরে আসতেই পারেন চতুর্দশ দালাই লামা খাসতালুকে। সঙ্গে পাবেন চমড়ি গাইেয়র দুধ, সাক্ষী থাকতে পারবেন ঐতিহাসিক ব্রিটিশ উপনিবেশের। সেইসঙ্গে আপনার পায়ে পায়ে জড়িয়ে থাকবে প্রকৃতির অপরূপ রূপের ডালি। ভারতের উত্তরের হিমাচল প্রদেশের পর্যটনকেন্দ্রের অন্যতম হলো ধরমশালা। ধৌলাসার পর্বতমালার গায়ে লেপ্টে থাকা হিমাচল প্রদেশের কাংড়া উপত্যকার শৈলশহর হলো ধরমশালা।
ধরমশালার দুটো ভাগ রয়েছে। (১) লোয়ার ধরমশালা (২) আপার ধরমশালা। ধরমশালার উচ্চতা এক হাজার ২০০ মিটার থেকে দুই হাজার ২০০ মিটার। আপার ধরমশালার আবার দুটো ভাগ রয়েছে। একটি হলো ম্যাকলয়েটগঞ্জ অন্যটি হলো ফরসিকগঞ্জ।
ধরমশালার ইতিবৃত্ত
তৎকালীন ব্রিটিশ গভর্নর স্যার ইয়ান ম্যাকলয়েটের নাম অনুসারে জায়গাটির নাম ম্যাকলয়েটগঞ্জ। ১৯৪৯ সালের অক্টোবর মাসে চিনের তিব্বত দখলের সময় লাসা থেকে আসা ভারতে আশ্রয়প্রাপ্ত বৌদ্ধ ধর্মগুরু দালাই লামা এখানে বসবাস করতে শুরু করেন। এই ম্যাকলয়েটগঞ্জই হয়ে ওঠে তাঁর উপনিবেশ। ১৯৬০ সালের আশপাশে সময়ে ম্যাকলয়েটগঞ্জ ছোট্ট লাসার রূপ নিয়ে নেয়। বহু তিব্বতি মানুষের ভিড় এখানে প্রায় সারা বছর ধরেই দেখা যায়। প্রায় প্রতিদিন বিকেলে এখানে বিভিন্ন প্রার্থনাসভা, ধর্মীয় আলোচনা সভা বসে। চলে মেডিটেশনের ক্লাসও। সেখানে মাঝেমধ্যে অংশ নেন দালাই লামা। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে দেখাও মিলতে পারে খোদ দালাই লামার।
দর্শনীয় স্থান
ছোট্ট সাজানো শৈলশহর ধরমশালায় বেড়ানোর জন্য অভাব নেই গাড়ির। লোয়ার ধরমশালায় বাজারের কাছেই রয়েছে বিখ্যাত কাংড়া মিউজিয়াম। পৃথিবীর বিখ্যাত কাংড়া চিত্রকলার প্রচুর নিদর্শন রয়েছে এখানে। সোমবার ছাড়া মিউজিয়ামটি প্রতিদিনই খোলা থাকা সাধারণের জন্য। তবে আপার ধরমশালার ম্যাকলয়েটগঞ্জকে ঘিরেই ধরমশালার এত নামডাক। ম্যাকলয়েটগঞ্জের মনাষ্ট্রির ঠিক সামনেই রয়েছে দালাই লামার বাসভবন। বিভিন্ন ধাপে গড়ে ওঠা মনাষ্ট্রির ভিন্ন ভিন্ন রঙের পতাকা, আলো ও ধর্মীয় প্রতীক দিয়ে সাজানো। চারপাশের বাড়িঘরগুলিও নানা রংবেরঙের।
তিব্বতীয় প্রার্থনা পতাকা, থংকাস মণিলাখান অর্থাত প্রেয়ার হুইল মনাষ্ট্রি ঘিরে রেখেছে। এখানে আসার এক থেকে দেড় মাস আগে ম্যাকলেটগঞ্জে দলাই লামার প্রাইভেট সেক্রেটারিকে অথবা হোটেল টিবেটের অফিসারকে চিঠি লিখলে আপনি দলাই লামার দর্শনের অনুমতিও পেয়ে যেতে পারেন। মানষ্ট্রির উপর থেকে ঝাঊ, দেবদারু গাছ দিয়ে ঘেরা প্রাকৃতিক দৃশ্য আপনাকে মোহিত করবেই। এই স্থানেই মাঝে মাঝে ভোরবেলা দালাই লামা প্রাতভ্রমণ করেন। মনাষ্ট্রির ঘরে ঘরে চলে অসাধারণ সব তিব্বতি গালিচা তৈরির কাজ। দালাই লামার বাসস্থানের এলাকা থেকে দুই তিন মিনিট হাঁটলেই রয়েছে বাজার, হোটেল, রেস্তোরাঁ। দেশি-বিদেশি পর্যটকের ভিড় সারা বছরজুড়ে এখানে থাকার কারণে খুব কম দামি হোটেল বা রেস্তোরাঁ মেলে না এখানে।
বেশিরভাগ জিনিসের দামই একটু লাগামছাড়া। ম্যাকলয়েটগঞ্জে গেলে সেখানে ১০ থেকে ১২ কিলোমিটারের মধ্যে ছড়িয়ে রয়েছে চোকলিং গুম্ফা, নরবুসিংকা মনাষ্ট্রি, চিন্ময় তপোবন আশ্রম, চামুণ্ডাজি মন্দির, ব্রজেশ্বরী দেবীর মন্দির। এ ছাড়া রয়েছে কাংড়া দুর্গ। তার কিছুটা দূরে রয়েছে জ্বালামুখি মন্দির। কথিত আছে, এই মন্দিরের গর্ভগৃহে মন্দির নির্মাণের সময় থেকে জ্বলে থাকা আগুনের শিখায় দেবীপূজা সম্পন্ন হয়। আজও সেই ধারা অব্যাহত।
কীভাবে যাবেন
পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে হিমগিরি এক্সপ্রেস অথবা শিয়ালদহ স্টেশন থেকে জম্মু-তাওয়াই এক্সপ্রেস ধরে চলে আসুন সোজা পাঠানকোটে। তারপর পাঠানকোটে নেমে সেখান থেকে বাসে করে পৌঁছানো যায় ধরমশালায়। পাঠানকোট থেকে সাড়ে তিন বা চার ঘণ্টার বাস জার্নিতেই সহজে পৌঁছে যাওয়া যায় ধরমশালায়। প্রতি ১০ থেকে ১৫ মিনিট অন্তর অন্তর বাস ছাড়ে।
খরচ
শিয়ালদহ থেকে পাঠানকোট পৌঁছাতে ট্রেনভাড়া আনুমানিক ২০০০ থেকে ২৫০০ রুপির মধ্যে। সেখান থেকে ৫০০-৬০০ রুপিতে পৌঁছানো যায় ধরমশালা। ধরমশালা থেকে প্রতিটি জায়গা ঘোরার জন্য গাড়িভাড়া লাগে ১৫০০ থেকে ২০০০ রুপি। আপার ধরমশালা থেকে লোয়ার ধরমশালার দূরত্ব মাত্র ৯ থেকে ১০ কিলোমিটার। আপার ধরমশালা অর্থাৎ ম্যাকলেটগঞ্জে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা অবশ্য একটু দামি। তবে বুদ্ধি করে লোয়ার ধরমশালায় বাজেট অনুযায়ী হোটেলে থেকে উপভোগ করা যায় ম্যাকলয়েটগঞ্জকে।
থাকা-খাওয়া
লোয়ার ধরমশালায় প্রচুর মধ্যবিত্তের পকেট অনুযায়ী প্রাইভেট হোটেল রয়েছে। ম্যাকলয়েটগঞ্জে একটু খোঁজ-খবর করতে পারলে কিছুটা কম পয়সার হোটেলও পাওয়া যায়।