ছুটির দিনে
চলুন যাই ঘিওর হাটে
নগর জীবনের ব্যস্ততার মাঝে মন চায় একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে। তাইতো নগরীর আশপাশে প্রকৃতি বা কোনো ঐতিহ্যবাহী স্থান খুঁজি, যেখানে পাওয়া যাবে মাটির স্বাদ আর একটু ঐতিহ্যের ছোঁয়া। যা আমাদের একঘেয়েমি ব্যস্ত জীবনের ক্লান্তি দূর করে দেবে। ঠিক এমনি একটি জায়গা মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর থানায় অবস্থিত ঘিওর হাট। রাজধানীর গুলিস্তানের জিরো (০) পয়েন্ট থেকে ঘিওর হাটের দূরত্ব মাত্র ৮০ কিলোমিটার ।আর যেতে আপনার সময় লাগবে দুই ঘণ্টার মতো্।
ঘিওর হাটের ইতিহাস
২০০ বছরের বেশি সময় ধরে চলে আসছে মানিকগঞ্জ জেলার ঐতিহ্যবাহী ঘিওর হাট। প্রতি সপ্তাহের বুধবার হাটটি বসে। সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চলে হাটের বেচাকেনা।
এক সময় এই হাটের ছিল ভরা যৌবন। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষের পদচারণা আর কোলাহলের আওয়াজ মাইল কে মাইল দূর থেকে শোনা যেত। লোকজন তাদের সারা সপ্তাহের নিত্য প্রয়োজনীয় বাজার সদাই এই হাট থেকেই করে নিত।
কলকাতার মহাজন দাদা বাবুরা এই হাট থেকে এই এলাকার বিখ্যাত হরেক রকমের ডাল পাইকারি কিনে নিয়ে গিয়ে সেখানকার বাজারে বিক্রি করত। বুধবার হাটের দিন এত বিপুল পরিমাণ মিষ্টি দোকানে বানানো হতো যে তা দেখে সবার চোখ কপালে উঠে যেত,আর এসব মিষ্টি হাটের দিনই সাবাড় হয়ে যেত যা ছিল অবিশ্বাসযোগ্য। মুরব্বিদের থেকে কথিত আছে, এত পরিমাণ মিষ্টি খাওয়ার জন্য হাটে মানুষের বেশে জিন পরী নামত। তা ছাড়া এই হাটে নানা রকমের আঞ্চলিক মুখোরোচক খাবার পাওয়া যায়, চানাচুর, নিমকি মিষ্টি জাতীয় খাবার ইত্যাদি তা ছাড়া সবচেয়ে মজার খাবার বাদাম।
যেভাবে যাবেন
গাবতলী থেকে যেকোনো বাস অথবা পদ্মা লাইন,নীলাচল বাসে মানিকগঞ্জ জেলার বরংগাইল বাসস্ট্যান্ড নেমে সিএনজি যোগে ঘিওর হাটে যেতে পারেন। অথবা গাবতলী থেকে ভিলেজ লাইন বাসে সরাসরি ঘিওর হাটে আসতে পারেন। জনপ্রতি ঢাকা থেকে আসা এবং যাওয়ার সর্বোচ্চ খরচ ২৫০ টাকা।
খাবার
দুপুর বেলা খাবারের জন্য ঘিওরে হোটেল পাবেন, দেশীয় মাছ, সবজি। এলাকার সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং সুস্বাদু মজার খাবার নিজামের মিষ্টি। যার স্বাদ এক কথায় অতুলনীয়। নিজামের মিষ্টির মধ্যে সবচেয়ে চাহিদা হচ্ছে মাওয়া মিষ্টি। এ ছাড়া মিনিকেট,শাহী চমচম,মালাই চপ,আফলাতুন ছানা,সন্দেশ চকলেটসহ নানা ধরনের মিষ্টি রয়েছে। যার দাম প্রকারভেদে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি এবং প্রতি পিচ ৩০ টাকা করে।
আরো পাবেন নইমুদ্দিনের বিখ্যাত শাহী মিষ্টি পান, যার স্বাদ হৃদয় কেড়ে নেয়। এ ছাড়া এই এলাকার গরুর খাঁটি দুধের চায়ের রয়েছে বেশ সুনাম, সন্ধ্যায় পাবেন ঘিওর বাসস্ট্যান্ডে চটপটি, যা এক ধরনের বিশেষ সালাদ দিয়ে পরিবেশন করা হয় এবং আরো পাবেন মাংস দিয়ে তৈরি তেলে ভাজা মচমচা গরম চপ। যার স্বাদ জিভে লেগে থাকবে বহুদিন।