ছুটির দিনে
দু-চাকায় দক্ষিণে যাত্রা
দু চাকায় পুরো দেশের আনাচে কানাচে দেখাটা আজকাল একটা নেশা হয়ে গেছে আমার কাছে। বাসা বা অফিসের চাপ না থাকলেই শুক্র-শনিবার বেরিয়ে যাই, সাইকেলে চেপে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের উদ্দেশে। একটি লেখায় যেহেতু বিস্তারিত অভিজ্ঞতা লেখা সম্ভব নয়, তাই এই লেখার আজ শুধু পদ্মা পেরিয়ে দক্ষিণে ঢুকে, দক্ষিণের শেষ মেঘনা পেরিয়ে দক্ষিণপূর্বাঞ্চলের জেলা দিয়ে সাইকেল চালাতে গিয়ে যেসব অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছি সেটুকু তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
বেদনাময় ছিল কুষ্টিয়ার রাজপথ
পাবনা জেলার রূপপুর থেকে পদ্মা নদীর উপর নির্মিত শাহ্ আমানত সেতু পার হতেই দক্ষিণে প্রবেশ করেছিলাম কুষ্টিয়া জেলা দিয়ে চালাতে শুরু করেই। দিনটি ছিল শুক্রবার। অবশ্য আমার প্রতিটা রাইড-ই শুক্রবারকে ঘিরেই শুরু হয় সাধারণত। তবে কুষ্টিয়া জেলায় যাত্রার শুরুটা উপভোগ্য ছিল না মোটেই। কারণ, রাজপথের বেহাল দশা। এবড়ো-থেবড়ো পথে যেখানে বড় গাড়িকেই চলতে হচ্ছিল খুব সাবধানে এবং হেলে দুলে, সেখানে সাইকেলে চলা রীতিমতো কঠিন একটা চ্যালেঞ্জের ব্যাপার।
অবসাদ, ক্লান্ত আর ঘুম ঘুমভাব নিয়ে যাত্রার প্রথম ৩০ কিলোমিটার রাজপথ পাড়ি দিয়েছিলাম। তবে কুষ্টিয়া শহরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট ভাইয়ের নিমন্ত্রণে সিক্ত হয়ে সকালের নাস্তা খেতে রাজবাড়ির পথে যাত্রার শুরুতেই চমৎকার রাজপথে চলার আনন্দ উপভোগ করতে শুরু করেছিলাম। ভালো রাস্তার সঙ্গে ইতিহাস আর ঐতিহ্যের সম্মেলনে একটা চমৎকার প্রাপ্তির দিন কাটাতে লাগলাম সাইকেলে ঘুরে ঘুরে। যার শুরুটা হয়েছিল লালনের আখড়ায় ঢু মেরে। যদিও আখড়ার সামনের চমৎকার নদীর বেদখল এবং তীরের অরাজকতা সুখকর কোনো অভিজ্ঞতা দেয়নি আমাকে। তাই খুব বেশি সময় অপেক্ষা না করে পথ চলতে শুরু করি।
লাহিনীপাড়া ও গড়াই নদী
দ্বিতীয় অপেক্ষার জায়গা ছিল, কয়েক কিলোমিটার দূরের গড়াই নদী পার হবার আগে হাতের ডানে কুমারখালির লাহিনীপাড়া গ্রামে ঢুকে পড়লাম বিষাদ সিন্ধু খ্যাত মীর মোশারফ হোসেনের জন্মস্থানে। আগের সেই আদল ধরে রেখে ইতিহাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাখতে না পারলেও, তার স্মৃতি, তার সৃষ্টি, তার আবাস আর একটা পাঠাগার কাম সংগ্রহশালা যে এখনও টিকে আছে, তাতেই আমি ভীষণ আনন্দিত হয়েছি। তাই বেশ কিছুটা সময় সেই লাহিনীপাড়ায় কাটালাম। সেখান থেকে বের হতেই জীবনে প্রথম মুখোমুখি হলাম সাইকেলের টোল দেয়ার মত অদ্ভুত অভিজ্ঞতার। হ্যাঁ, গড়াই নদী পার হতেই গড়াই ব্রিজে সাইকেলের জন্য দিতে হয়েছিল পাঁচ টাকা টোল! পরিমাণ খুব অল্প হলেও বেশ অদ্ভুত মনে হচ্ছিল।
তবে সকল নদীর মতই গড়াই আমার মন কেড়েছে বরাবরের মতই। অনেকটা সময় কাটিয়েছি গড়াই ব্রিজের উপরে প্রাণ ভরে নদী উপভোগ করে আবার দু চাকায় ভর করে চলতে শুরু করেছিলাম। নদী পার হতেই চড়া রোদের মাঝে পেলাম কুষ্টিয়ার খ্যাতনামা কুলফি। তাই এটি না খেলেই নয় বলে সাইকেল থামিয়ে কুলফি দেখার চেষ্টা করলাম। কিন্তু কুলফির দাম, আঁকার, মান আর স্বাদ কোনটাই আমাকে আনন্দ দিতে পারেনি। তবে আমার কাছে কুলফিকে বিশেষভাবে উপভোগের মত কিছু মনে হয়নি আদৌ।
কুলফির হতাশা ও শিলাদহের প্রাপ্তি
হতাশ হয়ে এগিয়ে যেতে শুরু করলাম। কুলফির হতাশা দূর হতে খুব বেশী সময় লাগল না, কিছুটা এগিয়ে হাতের বামে শিলাইদহ ঢুকে পড়লাম। কারণ এখানে রয়েছে বাংলা সাহিত্যের বিশ্বকবি কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি নিয়েই এখানে গড়ে উঠেছে শিলাইদহ রবীন্দ্র কুঠি বাড়ী। দেখেছি, হেঁটেছি, বসেছি আর অনুভব করার চেষ্টা করেছি সেই সময়কে নিজের মত করে। তারপর আবারও পথ চলার শুরু করেছি প্রিয় বাহন, সাইকেলে।
রাজবাড়ি পর্যন্ত পরের পথটুকু নিদারুণ রৌদ্রতাপে চালাতে হলেও পথটা তুলনামূলক মসৃণ হওয়ায় খুব বেশি কষ্ট করতে হয়নি। তবে সেদিনের অত্যাধিক গরম শেষ পথে এসে আমাকে একেবারে কাবু করে ফেলেছিল। রাজবাড়ি পৌঁছে ছোট ভাইয়ের পরিচিত ব্যাংকার ভাইয়ের নব্য নির্মিত বাড়ির পাঁচ তলায় সাইকেল তুলে সেদিনের মত ক্ষান্ত দিয়েছিলাম পথ চলার। ফিরেছিলাম ঢাকায় রাজবাড়ি থেকে গোয়ালন্দঘাট হয়ে পদ্মা ও যমুনা নদীর মিলনস্থল থেকে ফেরি পার হয়ে আপন আলয়ে ঢাকায় ফিরে এসেছিলাম।
রাজবাড়ি থেকে ফরিদপুর
পরের সপ্তাহের শুক্রবার খুব সকালে বের হলাম ঢাকা থেকে রাজবাড়ির উদ্দেশ্যে। রাজবাড়ি পৌঁছাতে সেদিন সকাল ১০টা বেজে গেলেও সেদিনের গন্তব্য মাদারিপুরের উদ্দেশে সকাল সাড়ে ১০টায় রওনা হয়েছিলাম। রাজবাড়ি শহর থেকে ফরিদপুর শহরের পথ খুব মসৃণ না হলেও সবুজের ছায়া ঘেরা ছিল বলে অনেকাটা উপভোগ করেই দু-চাকা চালাচ্ছিলাম। রাজপথের ব্যস্ততার ঝামেলা আড়াল হয়ে গিয়েছিল পুরো ৩০ কিলোমিটার চমৎকার সবুজে ছাওয়া পথে চালানোর কারণে। ফরিদপুরের ঠিক আগে আগে একটা পেট্রোল পাম্পের ঠিক উল্টো পাশের ছাপরা হোটেলে খেয়েছিলাম। পুরো যাত্রা পথের হোটেলে খাওয়া সবচেয়ে সুস্বাদু আর মনে রাখার মত খাবার ছিল। একদম নিখাদ গ্রামের মোটা চালের ভাতের সঙ্গে বিশুদ্ধ দেশি মুরগির ঝোল।
ফরিদপুরের দুঃসহ অভিজ্ঞতা
তবে এরপরের পথ চলা ছিলও ভীষণ কষ্টকর। রাস্তা ভাল হলেও, ফরিদপুর থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত পুরো পথের কোথাও এতটুকু ছায়া পাওয়া যায়নি। উন্নয়নের নামে রাস্তা বড় করার অযুহাতে পুরনো সকল বড় বড় গাছপালা কেটে ফেলার এই অপসংস্কৃতি কেন আর কিভাবে যে আমাদের দেশের রন্দ্রে রন্দ্রে প্রবেশ করছে জানা নেই। এটা নিয়ে আমার ব্যক্তিগতভাবে ভীষণ আক্ষেপ হয়। কেন রাস্তা বড় করতে হলো গাছগুলোকে কাটতেই বা হবে কেন? গাছ না কেটেও চাইলে, একটু সদিচ্ছা থাকলে রাস্তা বড় করা যায়, সম্ভব। যার প্রমাণ কেরালা আর তামিলনাড়ুর বিভিন্ন অঞ্চলে আমি দেখেছি।
মাদারীপুর ও ছাতিম ফুলের মাদকতা
সে যাই হোক, আক্ষেপ বাদ দিয়ে এখন পথ চলার গল্প বলি। ফরিদপুর থেকে সাইকেল নিয়ে ভাঙ্গা পৌঁছে, লিংক রোড পার হয়ে বরিশালের পথে ঢুকতেই সারাদিন পর মনে একটু প্রশান্তি পেলাম। কারণ এই পথ কিছুটা বড় হলেও, বেশ মিহি হওয়া স্বত্বেও চমৎকার সবুজে ছায়া ঘেরা ছিল, সেই সাথে ছিল দারুণ ঝিরিঝিরি হাওয়ার পরশ। বাড়তি আনন্দ হয়ে দেখা যাচ্ছিল ছোট ছোট খাল-বিল আর নানা রকম স্বচ্ছ জলের জলাশয়। সাইকেল চালানোর স্বস্তির যাত্রার পাশাপাশি চোখের আরাম ছিল বাড়তি পাওনা নিখাদ দক্ষিণের শুরুতেই। ভাঙ্গা থেকে মাদারিপুরের পথে যেতে যেতে সবচেয়ে মন মাতানো যে ব্যাপারটা পেয়েছিলাম সেটা হল- চলার পথের এখানে সেখানে মাতাল করে দেয়া ছাতিম ফুলের গন্ধ আর জলাশয়ে ঝুলে পরা হাজার হাজার ছাতিম ফুলের ঝাঁক বিশাল বিশাল গাছে। যা একইসঙ্গে মুগ্ধতা, মাদকতা আর নেশায় বুঁদ করে রেখেছিল।
সবুজ জড়ানো আর ছাতিম ফুলের গন্ধে মাখানো পথে আয়েশ করে চলতে চলতে সন্ধ্যা নামার মুখে পৌঁছে গিয়েছিলাম সেদিনের গন্তব্য মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলায়। প্রিয় শারাফাত ভাইয়ের জিম্মায় প্রিয় সাইকেল রেখে, ওনার বাসার আতিথিয়তায় সিক্ত হয়ে রাইড শেষ করে ঢাকার পথে বাসে উঠেছিলাম সেদিনের মত । আর অপেক্ষায় ছিলাম পরের কোনো এক সপ্তাহে নতুন করে দেশ দেখার অভিযানে নামার।
ঢাকা থেকে মাদারীপুর
মাঝে এক সপ্তাহ বাসা আর অফিসের নানা রকম কাজের ব্যস্ততায় বের হতে পারিনি। পরের সপ্তাহের বৃহস্পতিবার অফিস শেষ করেই বেরিয়ে পরেছিলাম দক্ষিণবঙ্গের শেষ অংশটুকু শেষ করে দক্ষিণপূর্বে পাড়ি দিতে। যেখানে মাদারীপুর হয়ে বরিশাল, বরিশালের কীর্তনখোলা নদী পার হয়ে ভোলা পৌঁছে যেতে। সেদিন রাতেও অতিথি হয়েছিলাম শারাফাত ভাইয়ের আস্তানায়। ভাইয়ের আতিথিয়তা, বাইকে করে রাতের কালকিনি ঘুরে দেখা, জ্যোৎস্না রাতের ফাঁকা গ্রামীণ পথের আলো আধারি উপভোগ করে সাইকেল ধুয়েমুছে ঠিকঠাক করে ঘুমিয়ে পরেছিলাম।
পরদিন শুক্রবার আবার দু-চাকায় দেশ দেখার নেশায় আমার নিয়মিত রাইডের আনন্দ দিন। পুরো দেশ দেখার অভিযানে এই দিনেই সবচেয়ে দ্রুত বা সকালে বের হতে পেরেছিলাম। ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ সেদিন বেরিয়েছিলাম কালকিনি থেকে। সেদিন প্রায় অর্ধেক পথই পাড়ি দিতে হয়েছে হাইওয়ে দিয়ে। আর নানা রকমের খাল বিলের উঁচু ব্রিজে উঠে দ্রুত নিচে নেমে যাওয়ার কারণে সম্ভাব্য সময়ের বেশ আগেই পৌঁছে গিয়েছিলাম বরিশাল শহরে। সেখানেই সকালের নাস্তা করেছিলাম এবং সেটা বন্ধুর শশুরবাড়ি বরিশাল শহরের প্রাণকেন্দ্রে। তবে বরিশাল ঢোকা আগের কিছুটা পথ পেয়েছিলাম জীবনানন্দের প্রিয় সন্ধ্যা নদীর তীর ধরে সাইকেল চালানোর দুর্লভ আনন্দ।
মাদারীপুর থেকে বরিশাল
মাদারীপুর থেকে বেশ কিছুটা এগিয়ে হাইওয়ে ছেড়ে হাতের বাঁয়ে ঢুকে গিয়েছিলাম। কারণ প্রায় ১০-১২ কিলোমিটার পথ ভিতর দিয়ে চালিয়ে আবারও হাইওয়ে ধরে বরিশাল শহর পর্যন্ত সাইকেল চালাতে হবে। তাই দুর্লভ সেই আনন্দের সুযোগ আমি নিয়েছিলাম। কি যে চমৎকার একটা পথ ছিল এটি, একদম সন্ধ্যা নদীর তীর ঘেঁষে চলে যাওয়া, শেরে বাংলা কলেজের চত্বরে গিয়ে বিশ্রাম নেওয়া, নিখাদ গ্রামের পাশের নদীর তীরে ঝিরঝিরি বাতাস খাওয়া, অলস বসে থেকে মোবাইলে কিছু সুখ স্মৃতি ধরে রাখা। এরপর আবারও পথ চলা শুরু করা। এবার বন্ধুর ডাকে সাড়া দিতে একটু দ্রুত গিয়ে ওর সঙ্গে দেখা করার জন্য এই প্রথম বেশ দ্রুত সাইকেল চালিয়েছি এবং প্রত্যাশার চেয়ে অনেক আগেই সন্ধ্যা, সুগন্ধা, কচা নদী পার হয়ে পৌঁছে গিয়েছিলাম কীর্তনখোলার তীরে জীবনানন্দের বরিশাল শহরে। বরিশাল শহরে প্রায় এক বেলা কাটিয়েছি । বন্ধু এবং আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে দেখা করে।
বরিশাল ও কীর্তনখোলা
এরপর নিয়েছিলাম এক দারুণ রোমাঞ্চকর পথে যাত্রার স্বাদ। কীর্তনখোলা নদীতে স্পিড বোটে করে বেশ কিছু চেনা অচেনা নদী পেরিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলাম দ্বীপ জেলা ভোলার লঞ্চ ঘাটে। ভোলা জেলায় পেয়েছিলাম সাইকেল চালানোর এক সুখ অনুভূতি আর জীবনের শ্রেষ্ঠ আতিথিয়তা, যা এই জীবনের একটা অন্যতম সুখ স্মৃতি হয়ে গেছে, আছে আর থাকবেও। তবে এই পুরো দক্ষিণের পথ চলায় সবচেয়ে সুন্দর, সবচেয়ে সবুজ আর সবচেয়ে নিরাপদ সাইকেল চালানোর স্থান পেয়েছি একমাত্র ভোলাতেই। তেমন কোনো যানবাহনের চাপ নেই, পুরো পথের সবটুকুই সবুজে মোড়া এবং ছায়ায় ঘেরা ছিল। এমনকি সন্ধ্যায় যখন মেঘনার পাড়ে গিয়েছিলাম সেই সময়টাও ছিল অদ্ভুত সুন্দর আলো আধারির এক অপূর্ব খেলা। বাড়তি পাওনা হয়েছিল মেঘনার তীরের চাঁদনী রাতের রুপালী আলোর রোশনাই।
ভোলা-নোয়াখালী
এরপর এলো রাত, আর সেই সাথে পেলাম জীবনের শ্রেষ্ঠ আতিথিয়তার সেই মুহূর্ত। যার পরে ছিল জীবনের অন্যতম সুখকর সাইকেল চালানোর সুখ স্মৃতি। ভরা জ্যোৎস্নায়, নিরব রাতের আলো আধারিতে এক অচেনা পথে এগিয়ে যাওয়া। মেঘনার তীরে গিয়ে আকণ্ঠ জ্যোৎস্না ভরা মেঘনার সুখ সুধা পান করা। গভীর রাতে মেঘনা পাড়ি দিয়েছিলাম একটি ট্রাকের পিছনে ঘুমিয়ে। যেটা আমাকে নিয়ে গিয়েছিল রামগঞ্জের দিকে। হঠাৎ ট্রাক থেমে পড়ায় ঘুম ভেঙে গিয়েছিল বলে নেমে যেতে পেরেছিলাম রামগঞ্জের কিছুটা আগে। এরপর রামগঞ্জ থেকে গ্রামীণ প্রকৃতি, প্রথম শীতের শিশির, কুয়াশা মাড়িয়ে, প্রথম সূর্যের উষ্ণতা মেখে, অফ রুট দিয়ে চালিয়ে চলে এসেছিলাম নোয়াখালীর মাইজদিতে। এখানে সহকর্মীর বাড়িতে বিশাল আতিথিয়তা শেষে, সাইকেলকে আবার দুই সপ্তাহের জন্য সেখানে রেখে ফিরে এসেছিলাম ঢাকার ব্যস্ততায়। পরে অন্য কোনো সপ্তাহে সুযোগ পেলে চালাতে যেতে।
বিদায় দক্ষিণ-পূর্ববঙ্গ
ফিরে এসেছিলাম ঠিক দুই সপ্তাহ পরে। এই দিনটি ছিল এখন পর্যন্ত দু-চাকায় দেশ দেখার সবচেয়ে প্রাপ্তির এবং অসীম আনন্দের দিন। কারণ এই দিন একই সঙ্গে দেখা পেয়েছিলাম দেশে বিদ্যামান সকল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের, একই সাথে! গ্রামীণ শীতের সকালের চমৎকার শিশির ভেজা মাঠের সঙ্গে, প্রথম শীতের উষ্ণতা বিলিয়ে দেওয়া সূর্য কিরণের, সোনালী ধানের দেখা যেমন পেয়েছিলাম, তেমনি পেয়েছিলাম উপকূলীয় পরিবেশের এক অদ্ভুত সুখের পরিবেশ, সমুদ্রের মাতাল হাওয়া, অগণিত মাছের ঘের, বেড়ি বাঁধের নির্জন পথে চালানোর আনন্দের পাশাপাশি ছিল রামগড়ের সবুজের সমুদ্র চা বাগানের মধ্য দিয়ে পথ চলার এক অপার্থিব আনন্দ আর ছিল পাহাড়ি পথে ওঠা নামার এক অদ্ভুত রোমাঞ্চকর রাইড। সবকিছু মিলে পুরো দক্ষিণবঙ্গ আর দক্ষিণ-পূর্ব মিলে উপভোগ করেছি এক অসাধারণ সাইকেল রাইডের স্মরণীয় কয়েকটা দিন।