এবারের ভ্রমণ গন্তব্য পাম বাগান
নাগরিক সভ্যতায় যাচ্ছে দিন, কমছে আয়ু। আর এর মাঝেই সবুজ পরিবেশে নিজেকে একাত্ম করলে মনের যেমন খোরাক মেটায়, ঠিক সেভাবে বিশুদ্ধ অক্সিজেন গ্রহণের ফলে শরীরও সুস্থ থাকে। বেশ কিছুদিন ধরে সিলেটের নতুন স্থান ভ্রমণ পিপাসীদের জন্য পাম বাগানের নাম শুনছিলাম, কিন্তু সময়ের অভাবে কাছের দূরত্ব হবার পরেও পাম বাগানে পা বাড়ানো সম্ভব হয় নাই। দিনান্তে সূর্য দেবের প্রখরতায় বেশ কাবু করে ফেলেছে জনজীবনকে। এরপরেও জীবিকার টানে ক্লান্তি বিহীন পথ সবাই এগিয়ে চলছে।
আমরা এসে পৌঁছালাম খাদিম পাড়ার মুখে। এবারে কোন দিকে যাবো পথের ঠিকানা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। পরে নিরুপায় হয়ে এলাকাবাসীর কাছে জানতে চাইলাম পাম বাগানটা কোন দিকে। প্রত্যুতরে বলা হলো–সামনের পথ ধরে কিছুদূর এগিয়ে গেলেই দেখা পাবো পাম বাগানের। তবে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করতে হবে তা না হলে প্রবেশ করা সম্ভম নয়। যাইহোক, আমরা চললাম এগিয়ে। এসে পৌঁছালাম গন্তব্য স্থানে কিন্তু প্রবেশ দ্বার তো বন্ধ।
আমাদের মতো অনেকেই এসেছেন এই নতুন স্থান ঘুরে দেখার জন্য সবাই দাঁড়িয়ে আছেন অনুমতি নেবার জন্য। মানুষের আধিক্য দেখে প্রথমে ঢুকতে দিতে চাইছিলেন না দারোয়ান সাহেব। পরে সবাই অনুরোধ করার পর একটি শর্তে প্রবেশ করেতে দিলেন সবাইকে। সবাই খুশি মনে সম্মুখ পানে এগিয়ে যেতে লাগলেন। তবে দারোয়ান সাহেবের একটাই শর্ত ছিল, তা হলো কোনভাবেই পরিবেশ দূষিত করা যাবে না। চিপসের প্যাকেট , পানির বোতল , বাদামের খোসা যত্রতত্র ফেলা যাবে না এবং উচ্চ স্বরে কথা বলা যাবে না।
আমরা এগিয়ে চললাম পদব্রজে। সামনে ছোট একটি ব্রিজের দেখা পেলাম। এর নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে জলধারা। এই জলধারাগুলোকে সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় ছরা বলে। বেশ ভালোই লাগলো অনেক দিন পর ছরার দেখা পেলাম। আমরা এগিয়ে চললাম পাম বাগানের দিকে। দুটি পথ আছে সামনে দিকে যাবার জন্য একটি সমতল ভূমি। আরেকটি হচ্ছে– অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় মানুষদের জন্য টিলা বেয়ে যাওয়া। আমি ভাবলাম সমতল ভূমি দিয়ে ফেরার পথে যাবো এখন কিছু অ্যাডভেঞ্চারের ছোঁয়া পেয়ে নেই। মাকে বললাম তুমি সমতল ভূমি দিয়ে যাও, আমি ওই দিকটার পথ দিয়ে যাই। মা প্রথমে ওই পথে দিয়ে যেতেই দিবেন না, শেষ পর্যন্ত মাকে অনেক কষ্টে রাজি করিয়ে এগিয়ে চললাম পাম বাগানে ভেতরে প্রবেশের লক্ষে। আমার সাথে আরেকটি গ্রুপ ও টিলা বেয়ে যেতে শুরু করল পাম বাগানের পথে। বেশ ভালোই লাগছিল পথে বেয়ে চলতে । দূর থেকেই পাম বাগানের দৃশ্য দেখা যাচ্ছিল। টিলা থেকে অসাধারণ লাগছিল পাম বাগানকে। বিশাল বিস্তৃত পাম বাগানটির যতদূর চোখ যায়, শুধু পাম গাছের সারি। আমরা এসে পৌঁছালাম বাগানের পথে। পাশেই দেখা পেলাম একটি চা বাগানের। চা গাছে নতুন পাতা গজিয়েছে, আর সজীব পাতা আলোকিত করছে চারপাশ। উপরে চমৎকার নীল আকাশ আর নীচে বিশাল সবুজ এই বাগান দেখলে মনে হয় যেন হাতে কোনো ছবি। কথায় কথায় জানতে পারলাম এই পাম বাগানটি ব্যক্তি মালিকানাধীন। আরেকটু সামনে এগিয়েই দেখা পেলাম জলাশয়ের। সেই জলাশয়ের আবদ্ধ জলে পাম বাগানের প্রতিচ্ছবি এক কথায় অপূর্ব। আমরা এগিয়ে যেতে লাগলাম বাগানের ভেতর পানে। সারি সারি পাম গাছের ফাঁকে সূর্যদেবের লুকোচুরি খেলা। গাছে গাছে পাম ফল ধরেছে। আমরা বাগানের এক মাথা থেকে অন্যমাথায় ঘুরে দেখতে লাগলাম। পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে এক অন্যরকম পরিবেশ তৈরি করেছে। মুগ্ধতার শেষ এখানেই নয়। আরেকটু সামনে এগোতেই দেখতে পেলাম বালির পাহাড়। নানান রঙের বালির একটি টিলা এটি। গোলাপী, হলুদ, বাদামি, কমলা ও সাদাসহ নানান রঙের বালি স্তরে স্তরে সেজে জন্ম দিয়েছে এই টিলার। আমরা একের পর এক আমরা ছবি তুলতে লাগলাম। দেখতে দেখতে গোধূলি বেলা চলে এলো এবার আমাদের বাড়ি ফেরার পালা। আমরা ফিরে চললাম আমাদের ডেরার পানে।
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সিলেট যাওয়ার সরাসরি বাস রয়েছে। কিছুক্ষণ পর পরই ছাড়ে এই বাসগুলো। ফকিরাপুল, সায়েদাবাদ ও মহাখালী থেকে বাস পাবেন। ট্রেনে আসতে চাইলে কমলাপুর থেকে আসতে পারেন। সিলেটে আসার পর সিএনজি করে চলে যান খাদিম নগরে। খাদিম নগরের দুই নাম্বার গেইটের ভেতর দিয়ে প্রবেশ করে ৪-৫ মিনিট হাঁটলেই পাম বাগান পেয়ে যাবেন। এ ছাড়া সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ পেরিয়ে টিলাগড় ইকোপার্কের মধ্য দিয়ে এগিয়ে গেলেই পাম বাগান যাওয়ার রাস্তা পেয়ে যাবেন।