জেনে নিন
ইলিশ খেতে মাওয়া কখন যাবেন
হরেক রকম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর প্রাণীবৈচিত্র্য ঘেরা আমাদের এই ভূখণ্ড। নদীমাতৃক এই বাংলাদেশে অনেক প্রজাতির মাছ রয়েছে। তবে মাছের রাজা’র প্রসঙ্গ ভিন্ন। মাছ খেতে ভালোবাসেন অথচ ইলিশ খান না এমন লোক প্রায় বিরল বলা যায়। আর সেই ইলিশ যদি হয় পদ্মার তবে তো সোনায় সোহাগা।
পদ্মার টাটকা মচমচে ইলিশ ভাজার কথা কল্পনা করলে সব বয়সী লোকের জিভে পানি আসবে। দৈনন্দিন জীবনে যখন হাঁপিয়ে উঠছেন, ঠিক তখনই মাত্র একদিনের একটি ভ্রমণে জুড়িয়ে নিতে পারেন প্রাণ। একইসঙ্গে টাটকা ইলিশের মজা পেতে পারেন। শহরের কোলাহল পেরিয়ে, কর্মচঞ্চল জীবনকে একটু শান্তি দিতে ঘুরেই আসা যায় ঢাকা থেকে মাত্র ৩৫ কিলোমিটার দূরে মাওয়া’তে। গ্রামীণ পরিবেশ, পদ্মার ঘ্রাণসহ অনেক কিছু পাবেন মাওয়াতে। আর মাছের রাজার দেখা তো মিলছেই। পাবেন পদ্মা তীরের জীবনযাত্রা যা আপনাকে করবে মুগ্ধ। নিবিড় তাকিয়ে থেকে দেখবেন পদ্মার চোখ জুড়ানো দৃশ্য।
দেখতে পাবেন আপনার সামনে দিয়েই নৌকা থেকে নামানো হচ্ছে সদ্য ধরে আনা পদ্মার হরেকরকম টাটকা মাছ আর সেইসঙ্গে মাছের রাজা রূপালী ইলিশ। ইচ্ছে করলে একটু দামাদামি করে কিনতে পারেন আপনাদের পছন্দের মাছ। কিনে নিতে পারেন তাজা গোটা চারেক বা ইচ্ছেমতো রুপালী ইলিশও। দাম অবশ্য ঋতুর উপর নির্ভর করে এবং ছুটির দিন ব্যতীত। দূর থেকে আসা ভোজনরসিকরা মাছ বাসায় নেওয়ার জন্য পাবেন বরফের ব্যবস্থা। এ ব্যাপারে পদ্মাপাড়ের জেলেরাই সাহায্য করবে।
এসব কিছু দেখে আপনার যখন ক্ষুধা লাগবে ঠিক তখনই ফেরিঘাটে পেয়ে যাবেন অসংখ্য রেস্টুরেন্ট যারা ভাতের হোটেল নামেই বেশি পরিচিত। উপরে টিনের চালা আর তিনদিকে টিনের দেয়াল দেয়া এই সব হোটেল দেখতে যেমনই মনে হোকনা কেন, এখানকার গরম ভাত আর গরম গরম ভাজা পদ্মার টাটকা ইলিশের স্বাদই আলাদা। রয়েছে ঝোল মাখানো ইলিশের তরকারিও।
ফেরিঘাটের শুরুতেই যেই দোকানগুলো সেগুলো মোটামুটি। তবে সারির মাঝামাঝি ‘আলাউদ্দিন ভাতের হোটেল’-এর বেশ নামডাক। টিনের চাল, বড় জানালার মতো করে একপাশে খোলা টিন। বর্ষার দিনে পদ্মার পানি দেখা যায় ক্ষেতগুলোতে। পরিবেশটি যেমন আলাদা তেমনি এখানে ভোজনের আনন্দ আর স্বাদও অবশ্যই আলাদা। নিজের অজান্তে কখন দুই-চারটা ভাজা মাছ খেয়ে ফেলবেন টেরই পাবেন না।
এ ছাড়া চিংড়ি, রুই, শুটকি ভর্তা আর সব ধরনের মাংস তো আছেই। এ ছাড়া আস্ত ইলিশ ভাজাও পাবেন। এখান ইলিশের ডিম ভাজাও পাবেন; যা মুখে দিলে তৃপ্তির ঢেকুর তোলা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। গরম ভাতের সঙ্গে ইলিশের ডিম ভাজা আর তেলে ভাজা শুকনো মরিচ খেয়ে পেয়ে যাবেন অতুলনীয় স্বাদ। এ ছাড়াও ফেরিঘাটে পেয়ে যাবেন অসংখ্য জেলে যারা হাতে প্লেট নিয়ে বিক্রি করছে ইলিশ ভাজা। তবে এদের সঙ্গে দরদাম করে নেয়াই ভালো।
কীভাবে যাবেন
গুলিস্তান থেকে সরাসরি মাওয়াগামী বাস আছে। ইলিশ, আনন্দ, গোধুলিসহ রয়েছে বিআরটিসি’র বাস সার্ভিসও। বিআরটিসি’র এসি বাস সার্ভিসও রয়েছে। এ ছাড়াও মিরপুর থেকে ‘স্বাধীন’ গুলিস্তান হয়ে মাওয়া যায়।
কোথায় বিশ্রাম নেবেন
ঘুরোঘুরি করে ক্লান্ত হয়ে গেলে সাময়িক বিশ্রাম নিতে পারেন চায়ের দোকানগুলোতে। চড়ে যেতে পারেন ফেরিতেও। তবে খেয়াল রাখতে হবে ফেরি ছাড়ার আগে নেমে যাওয়াই ভালো।