আগ্রাসনের জবাব দিতে প্রস্তুত, ভারতীয় সেনাপ্রধানের মন্তব্যের প্রতিবাদে জানাল পাকিস্তান

পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর উপত্যকায় সন্ত্রাসের উৎসস্থলে আঘাত করার অধিকার রয়েছে ভারতের। ভারতের নবনিযুক্ত সেনাপ্রধানের এই বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেছে পাকিস্তান। ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল মনোজ মুকুন্দ নারাভানের মন্তব্যকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ ও ‘প্ররোচণামূলক’ বলে বিবৃতি দিয়েছে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
পাকিস্তানের বালাকোটে ভারতের অভিযানের পর ভারতীয় বিমানবাহিনীর উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানের প্রসঙ্গ টেনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সরকারের পাল্টা হুঁশিয়ারি, ওই ঘটনার কথা ভারত যেন ভুলে না যায়। তা ছাড়া ভারতের পক্ষ থেকে এ ধরনের হামলা হলে পাকিস্তান যে তার যোগ্য জবাব দিতে প্রস্তুত, সে হুমকিও দিয়েছে ইসলামাবাদ। যদিও কূটনৈতিক মহল মনে করছে, ভারতের সেনাপ্রধানের মন্তব্যে চাপে পড়েই পাল্টা হুঁশিয়ারি-হুমকির কথা বলছে পাকিস্তান। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা এ খবর জানিয়েছে।
ভারতের সেনাপ্রধান হিসেবে গত মঙ্গলবার দায়িত্ব নিয়েছেন মনোজ মুকুন্দ নারাভানে। ওই দিনই ভারতীয় সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারতের সেনাপ্রধান বলেছিলেন, পাকিস্তান সন্ত্রাসে মদদ দেওয়া বন্ধ না করলে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে সন্ত্রাসের উৎসস্থলে পূর্বপরিকল্পিত আঘাত হানার অধিকার ভারতের রয়েছে। সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ও বালাকোটে অভিযানই তার প্রমাণ বলেও মন্তব্য করেন জেনারেল নারাভানে।
ভারতীয় সেনাপ্রধানের এমন মন্তব্যের পরের দিনই জবাব দেয় পাকিস্তান। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক বিবৃতি জারি করে বলা হয়েছে, ‘নিয়ন্ত্রণরেখায় পূর্বপরিকল্পিত হামলা সম্পর্কিত ভারতীয় সেনাপ্রধানের এই বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করছে পাকিস্তান। পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে বা পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ভারতের যেকোনো আগ্রাসনের জবাব দিতে পাকিস্তান যে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ও প্রস্তুত রয়েছে, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ থাকা উচিত নয়। বালাকোটে ভুল অভিযানের পর পাকিস্তান কী জবাব দিয়েছিল, সেটা যেন কেউ ভুলে না যায়।’
তবে এর সঙ্গেই শান্তির বার্তাও দেওয়া হয়েছে ইসলামাবাদের পক্ষ থেকে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ভারত যতই উসকানি দিক, গোটা অঞ্চলে শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পাকিস্তান কাজ করে যাবে।’
গত বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় আত্মঘাতী জঙ্গি হামলায় ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৪০ সদস্যের প্রাণহানির পর ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে নিয়ন্ত্রণরেখায় উত্তেজনা বাড়ে। তার পর গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ভোররাতে পাকিস্তানে ঢুকে বালাকোটে অভিযান চালিয়েছিল ভারতীয় বিমানবাহিনী। তার পরের দিন ভারতের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান ভারতে ঢুকে পড়লে তা তাড়া করতে গিয়ে ধরা পড়েন ভারতীয় বিমানবাহিনীর উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান। তার পর গত ১ মার্চ অভিনন্দনকে ভারতের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তান।
এর পর থেকে সীমান্তে উত্তেজনা কিছুটা কমলেও ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদের পর থেকে দুই দেশের সম্পর্কে আবারও উত্তেজনা তৈরি হয়। ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর থেকেই উপত্যকায় কড়া নিয়ন্ত্রণ জারি হয়। ধীরে ধীরে সে নিয়ন্ত্রণ তুলে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু গতকাল বুধবারের ওই বিবৃতিতে সে প্রসঙ্গ তুলে ইসলামাবাদের বক্তব্য, ‘কাশ্মীরে অমানবিক নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে কাশ্মীরের নাগরিকদের প্রতি পাকিস্তানের সমর্থন সব সময়ই থাকবে।’ এ ছাড়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভারতের কাশ্মীর নিয়ন্ত্রণের বিরোধিতায় পাকিস্তানের সমর্থন যে সব সময়ই থাকবে, তাও ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে।