কে হচ্ছেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের উত্তরসূরি?
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2020/04/26/tg.jpg)
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের শারীরিক অবস্থা ও মৃত্যুর আশঙ্কা নিয়ে যতই প্রশ্ন উঠছে, ততই কিম পরিবারের আরো একজন সদস্যের নাম বারবার সামনে চলে আসছে। তিনি হলেন কিমের প্রিয় ছোট বোন কিম ইও জং। কিম জং উনের পর উত্তর কোরিয়ার পরবর্তী নেতা হিসেবে উঠে আসছে তাঁর ছোট বোনের নামটাই।
২০১৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত অলিম্পিকের সময় আন্তর্জাতিক অঙ্গনের নজরে আসেন ইও জং। পরিবারের আরো অনেক সদস্যের মতোই কিম ইও জংও অনেকটাই রহস্যময় চরিত্র। আর উত্তর কোরিয়াও কিম পরিবারের সদস্যদের কোনো ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করে না। তাই তাঁর সম্বন্ধে অনেক তথ্য রয়ে গেছে অজানা। ধারণা করা হয়, কিমের বোনের বয়স ত্রিশের কোঠায়। ফোর্বস ম্যাগাজিন বিভিন্ন গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে কিম ইও জংয়ের বিষয়ে কিছু তথ্য প্রকাশ করেছে।
উত্তর কোরিয়ার সাবেক শাসক প্রয়াত কিম জং ইলের পছন্দের সন্তান কিম ইও জং। ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, সুইজারল্যান্ডে পড়াশোনা করেছেন ইও জং। সেখানে ব্যালে নৃত্যকলায়ও তালিম নিয়েছেন। তিনি ২০০০ সালের শুরুর দিকে উত্তর কোরিয়া ফিরে আসেন।
‘উত্তর কোরিয়ার ইভানকা ট্রাম্প’ ডাকনামের কিম ইও জং গত মাসে বলেছিলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তাঁর ভাইয়ের মধ্যে পরমাণু অস্ত্র নিয়ে চলমান বিরোধ সত্ত্বেও ‘বিশেষ ও এবং দৃঢ় ব্যক্তিগত সম্পর্ক’ রয়েছে।
সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়ার প্রচারণা চালিয়ে যাওয়া এবং নিজের ভাইয়ের সম্মান রক্ষার্থে ইও জং সম্প্রতি তাঁর দেশের সামরিক মহড়ার বিরোধিতা করায় দক্ষিণ কোরিয়াকে ‘ভীত কুকুর ঘেউ ঘেউ করছে’ বলে তাচ্ছিল্য করেন।
ইও জংকে চলতি মাসের শুরুর দিকে উত্তর কোরিয়ার পলিটব্যুরোর বিকল্প সদস্য হিসাবে মনোনীত করা হয়, যা তাঁর ক্রমবর্ধমান ক্ষমতার ইঙ্গিত বহন করে।
উত্তর কোরিয়াবিষয়ক বিশেষজ্ঞ ব্রুস বেনেট ডেইলি বিস্টকে বলেন, ‘তিনি (ইও জং) একজন চৌকস নারী। তিনি তাঁর আশপাশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ হিসাব কষছেন। আড়ালে থেকে কাজ করে তিনি কতটা ক্ষমতাধর হয়ে উঠেছেন, তা কে বলতে পারে?’
একজন বিশ্লেষকের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস জানিয়েছে, ‘উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতাধর অভিজাতদের মধ্যে কিম ইও জংয়ের ক্ষমতার উত্তরাধিকারী হওয়ার সুযোগ সবচেয়ে বেশি। আমি মনে করি, সে সম্ভাবনা ৯০ শতাংশেরও বেশি।’ তবে ক্ষমতা হাসিলের দৌড়ে ইও জং একা নন। এ ছাড়া উত্তর কোরিয়ার পুরুষতান্ত্রিক কাঠামো ইও জংয়ের ক্ষমতাসীন হওয়ার পথে প্রতিবন্ধক হয়ে দেখা দিতে পারে। কেউ কেউ ধারণা করছেন, কিম পরিবারের বংশানুক্রমিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে দেশটির আলংকারিক বা নামমাত্র রাষ্ট্রপ্রধান চোই রাঅং হাইয়ের নেতৃত্বে একটি সম্মিলিত শাসনব্যবস্থা বা রাষ্ট্র পরিচালনা পর্ষদ কার্যকর হলেও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে কিম ইও জং হয়তো কেবল অন্তর্বর্তীকালীন অস্থায়ী রাষ্ট্রনেতা হিসেবে দায়িত্ব করবেন। তবে বলা বাহুল্য, কিম জং উনের মৃত্যু বা দেশ পরিচালনায় অক্ষমতার ওপরই সবকিছু নির্ভরশীল। আর কিম জং উনের আসলে যে কী হয়েছে, তা এখনো অজানা।
কিমকে সর্বশেষ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ্যে দেখা গিয়েছিল গত ১১ এপ্রিল। উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ওদিন তিনি ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টির নীতিনির্ধারণী কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেন। তবে একটানা কয়েক সপ্তাহের জন্য কিমের লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যাওয়া মোটেই অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। এর আগেও শারীরিক সমস্যার কারণে জনসমক্ষে না আসার ইতিহাস কিমের রয়েছে। তবে এবার জল্পনার ডালপালা এতটাই ছড়িয়েছে যে ধারণা করা হচ্ছে, তিনি মারা গেছেন কিংবা মারাত্মক অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসাধীন।