জর্জিয়ায় দুটি সিনেট আসনের পুনর্নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের সিনেট নির্বাচনের ভোট গণনা চলছে। এই অঙ্গরাজ্যে দুটি আসনে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট—যে দলের সিনেটরেরা বিজয়ী হবেন, সিনেটে সে দলেরই নিয়ন্ত্রণ থাকবে। জর্জিয়ার নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী কেলি লফলার ও ডেভিড পের্ডু এবং ডেমোক্র্যাট প্রার্থী রাফায়েল ওয়ার্নক ও জন অসফের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে। সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
বার্তা সংস্থা এপির তথ্য অনুযায়ী, এরই মধ্যে ৯৫ শতাংশ ভোটগণনা শেষ হয়েছে। এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, দুটি আসনেই আসনেও চলছে তুমুল লড়াই। দুটি আসনে এখন পর্যন্ত কোনো প্রার্থীই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাননি।
এর আগে গত নভেম্বরের নির্বাচনেও জর্জিয়ায় চারজন প্রার্থীর কেউই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাননি। এ কারণে এই অঙ্গরাজ্যে পুনরায় নির্বাচনের প্রয়োজন পড়ে। জর্জিয়ার দুটি সিনেট আসনের জন্য গতকাল মঙ্গলবার ফিরতি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে এবং ভোটগণনা শুরু হয়েছে। এই নির্বাচনেই নির্ধারিত হবে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রথম দুবছর সিনেটে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ কাদের হাতে থাকবে।
কংগ্রেসে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পেতে নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দল ডেমোক্র্যাটদের জর্জিয়ার দুটি আসনেই জয় প্রয়োজন।
অন্যদিকে, সিনেটের নিয়ন্ত্রণ হাতে রাখতে বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দল রিপাবলিকানদের জর্জিয়ায় কেবল একটি আসনে জয় হলেই চলবে।
সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকার খবরে বলা হয়েছে, নির্বাচনের আগের দিনের জরিপে দেখা গেছে দুজন ডেমক্র্যাট প্রার্থী কিছুটা এগিয়ে আছেন ।
জর্জিয়ায় রিপাবলিকান সিনেটার ডেভিড পের্ডু টেলিভিশনের প্রামাণ্যচিত্র প্রযোজক ডেমক্র্যাট জন অসফের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ধনী রিপাবলিকান সিনেটর কেলি লফলারের সঙ্গে ব্যাপটিস্ট চার্চের যাজক ডেমক্র্যাট রেভারেন্ড রাফায়েল ওয়ার্নকেরপ্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে।
এই মুহূর্তে ১০০ আসন বিশিষ্ট সিনেটে রিপাবলিকানদের ৫০টি এবং ডেমক্র্যাটদের ৪৮টি আসন রয়েছে। রিপাবলিকানরা একটি আসন পেলে সিনেটে সংখ্যগরিষ্ঠতা পেয়ে যাবে। আর সেটি হলে ২০ জানুয়ারি জো বাইডেন তাঁর দায়িত্ব গ্রহণের পর তাঁর প্রস্তাবের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারবে রিপাবলিকানরা।
অন্যদিকে যদি ডেমোক্র্যাটরা দুটি আসনেই জয়লাভ করে, তা হলে উভয় দলের ৫০টি করে সমান আসন থাকবে এবং সেক্ষেত্রে সিনেটে সভাপতিত্ব করা নবনির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিস নিজের ভোট দিয়ে বাইডেনের প্রস্তাবকে বৈধতা দিতে পারবেন।
বার্তা সংস্থা বাসসের খবরে বলা হয়েছে, গত ৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এখনো পরাজয় মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তিনি জর্জিয়া নিবাচনের আগে গত সোমবার ভোটারদের উদ্দেশে বলেন, ‘দেশের ভবিষ্যত নির্ভর করছে আপনাদের ওপর। কাল (মঙ্গলবার) জর্জিয়ায় যা ঘটবে, তার দিকে পুরো বিশ্ব তাকিয়ে আছে।’ ট্রাম্প আরো বলেন, ‘আমেরিকাকে রক্ষার শেষ সুযোগ মঙ্গলবারের নির্বাচনে দুজন সিনেটরকে নির্বাচিত করা। আপনারা যদি তা না পারেন, তাহলে র্যাডিক্যাল ডেমোক্রেটরা জয়ী হবে।’
জর্জিয়ায় গত ২০ বছরে ডেমোক্র্যাট দল থেকে কোনো সিনেটর নির্বাচিত হননি। ট্রাম্প গত সোমবার তাঁর ৮১ মিনিটের ভাষণে ভোটে বড়ো ধরনের অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধরেন। জর্জিয়ার মতো অন্যান্য সুইং স্টেটগুলোতে ভোট জালিয়াতি হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এদিকে বসে ছিলেন না নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও। তিনিও গত সোমবার জর্জিয়ায় এসে নির্বাচনি প্রচার চালান।
আগামী ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিতে যাওয়া বাইডেন উৎফুল্ল সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, ‘এটি নতুন বছর। আগামীকাল (গতকাল মঙ্গলবার) আটলান্টার জন্যে নতুন দিন বয়ে আনবে।’ ভোট নিয়ে ট্রাম্পের অব্যাহত অভিযোগেরও সমালোচনা করেন তিনি।
জর্জিয়া রিপাবলিকানদের শক্ত ঘাঁটি হলেও এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাইডেন এই অঙ্গরাজ্যে ট্রাম্পকে প্রায় ১২ হাজার ভোটে হারিয়েছেন।