তিন হাজার বছর পর ‘কথা বলে উঠল’ মমি
তিন হাজার বছর আগে মিসরের প্রাচীন শহর থিবসের কারনাকের একটি উপাসনালয়ের পুরোহিত ছিলেন নেসিয়ামান। এর পরই তাঁর মরদেহ মমি করে একটি কফিনে রেখে দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে ১৮২৩ সালে মমিটি উদ্ধার করে ইংল্যান্ডের লিডস সিটি মিউজিয়ামে প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়। এই মমি নিয়ে বিজ্ঞানীরা অনেক পরীক্ষা চালিয়েছেন। সে সময়ের মিসর সম্পর্কে অনেক তথ্য এই মমি থেকে মিলেছে। আর শেষ পর্যন্ত তিন হাজার বছরের পুরোনো এই মমিটিই কথা বলে উঠল। গত বুধবার সায়েন্টিফিক রিপোর্টস নামের এক জার্নালে এ তথ্য প্রকাশ করা হয় বলে জানায় সংবাদমাধ্যম দি ইনডিপেনডেন্ট।
কীভাবে এই মমির কাছ থেকে কথা শোনা গেল, তাও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে ওই জার্নালে। বলা হয়েছে, থ্রিডি প্রিন্টার ভোকাল বক্সের মাধ্যমে মমিকে কথা বলিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। মানুষের ল্যারিংসে শব্দ তৈরি হয়। আর ভোকাল ট্র্যাকের প্যাসেজে সেই শব্দ ফিল্টার হয়ে অর্থপূর্ণ শব্দ তৈরি করে। এই পুরো বিষয়টিকে একসঙ্গে মানুষের ভয়েস বক্স বলা হয়।
তিন হাজার বছর আগে নেসিয়ামান শেষ যে কথাটি বলেছিলেন, তা জানার জন্য প্রথমে বিজ্ঞানীরা তাঁর ভোকাল ট্র্যাকের ডাইমেনশন থ্রিডি-প্রিন্টারে কপি করেন। তবে মৃত ব্যক্তির ভোকাল ট্র্যাকের নরম কোষগুলো অক্ষত থাকলেই এই পদ্ধতি সম্ভব। এমনভাবে ওই মিসরীয় পুরোহিতের দেহ সংরক্ষণ করা হয়েছিল যে, এত বছর পরও ভোকাল ট্র্যাকের কোষগুলো অক্ষত রয়েছে। সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে প্রথমেই সেটি পরীক্ষা করে জেনে নেন বিজ্ঞানীরা। তারপর থ্রিডি-প্রিন্টারে ওই মমির ভোকাল ট্র্যাকের কপি করে ল্যারিংসে কৃত্রিমভাবে তাঁর কণ্ঠস্বর তৈরি করেন। এর ফলে তাঁকে ক্ষীণ কণ্ঠে ‘বেড’ বা ‘ব্যাড’ জাতীয় কিছু শব্দ উচ্চারণ করতে শোনা যায়।
জানা গেছে, কারনাকে দেবতা আমানের মন্দিরে থাকতেন নেসিয়ামান। ওই মন্দিরেই মৃত্যু হয় তাঁর। ইতিহাসবিদরা জানিয়েছেন, শেষ জীবনে মুখে সংক্রমণ হয়েছিল তাঁর। সংক্রমণ এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, দাঁত ও মাড়ি ক্ষয়ে যেতে শুরু করেছিল। মুখের সংক্রমণের জন্য শেষ জীবনে তিনি কথা বলতে পারতেন না। খুব কষ্টে কিছু উচ্চারণ করতে পারতেন মাত্র। তাঁর দেহ মমি করে প্রথমে ওই মন্দিরের ভেতরের একটি ঘরে রাখা ছিল। এই সংক্রমণ থেকেই নেসিয়ামানের সারা দেহে মারাত্মক অ্যালার্জি হয়ে যায়। মাত্র ৫০ বছর বয়সে তিনি মারা যান।