দৃষ্টিহীন অভিবাসীর কাছে চাওয়া হলো অন্ধত্বের প্রমাণপত্র
ইংরেজিতে লেখা একটি বাক্য পড়তে না পারায় জন্মান্ধ ব্যক্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পাওয়ার পরীক্ষায় অনূত্তীর্ণ বলে দিল মার্কিন অভিবাসন কর্তৃপক্ষ। লুসিও ডেলগাডো নামের ২৩ বছরের ওই যুবককে লেখা পড়ার জন্য দেওয়া হয়নি ব্রেইল পদ্ধতি ব্যবহারের সুযোগ। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা যে পদ্ধতিতে লেখা পড়তে পারেন, তাকে বলা হয় ব্রেইল। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
ছয় বছর আগে মেক্সিকো থেকে বসবাসের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসেন লুসিও দেলগাডো। চলাফেরার জন্য লাঠি ব্যবহার করেন তিনি। দেলগাডো জানান, গত বছরের মে মাসে মার্কিন নাগরিকত্বপ্রাপ্তির জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নেওয়ার সময় অভিবাসন কর্তৃপক্ষ তাঁর হাতে একটি বড় কাগজ ধরিয়ে দিয়ে সেখানে লেখা একটি ইংরেজি বাক্য পড়তে বলে। কিন্তু পুরোপুরি দৃষ্টিহীন লুসিওর পক্ষে সেটি পড়া ছিল অসম্ভব।
ইলিনয়িস অঙ্গরাজ্যের আইন অনুযায়ী লুসিও দেলগাডোর অন্ধত্ব স্বীকৃত। কিন্তু মার্কিন অভিবাসন কর্তৃপক্ষ লুসিও দেলগাডোকে তাঁর অন্ধত্ব প্রমাণের জন্য একজন চিকিৎসকের প্রত্যয়নপত্র দাখিল করার নির্দেশ দেয়।
ইলিনয়িস অঙ্গরাজ্যের পেমব্রোক শহরের বাসিন্দা লুসিও দেলগাডো সংবাদমাধ্যম সিবিএসকে বলেন, ‘মেক্সিকোতে পড়াশোনা করার সুযোগ পাইনি, এখানে পড়ালেখা করার সুযোগ মিলতে যাচ্ছিল।’
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ও অভিবাসন কর্তৃপক্ষের (ইউএসসিআইএস) কাছ থেকে একটি চিঠি পান দেলগাডো। তাতে বলা হয়, নাগরিকত্ব পাচ্ছেন না তিনি।
চিঠিতে বলা হয়, ‘দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো, আপনি ইংরেজিতে লেখা একটি বাক্য পড়তে পারেননি। দুঃখজনক বলতে হয় যে আপনি রিডিং (পড়তে পারা) বিভাগের পরীক্ষায় পাস নম্বর পেতে ব্যর্থ হয়েছেন।’
এ বিষয়ে লুসিও দেলগাডো ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি ভাবতেও পারিনি যে আমাকে ন্যূনতম সুযোগও দেওয়া হবে না। সত্যি বলতে কী, ব্যাপারটা আমাকে বেশ নাড়া দিয়েছে।’
লুসিও আরো বলেন, ‘আমি জীবনে কিছু একটা অর্জন করার অপেক্ষা করছিলাম। ভেবেছিলাম আমার পরিবার আমাকে নিয়ে গর্ববোধ করবে।’
পরীক্ষা সময় লুসিওকে একজন চিকিৎসকের কাছ থেকে অন্ধত্বের প্রমাণপত্র নিয়ে আসার জন্য বলা হয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিক না হলে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা পান না কেউ। তাই লুসিওর পক্ষে অন্ধত্বের প্রমাণপত্র জোগাড় করা কোনোভাবেই সম্ভব ছিল না।
ইউএসসিআইএসের এক মুখপাত্র ওয়াশিংটন পোস্টকে জানান, লুসিওর ঘটনার পর গত বছরের নভেম্বর থেকে দৃষ্টিহীনদের জন্য ব্রেইল পদ্ধতিতে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
লুসিও দেলগাডোর আইনজীবী জানিয়েছেন, গত সপ্তাহে লুসিওর বিষয়টি গণমাধ্যমে আসার পর ইউএসসিআইএসের পক্ষ থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। চলতি মাসের শেষদিকে আবারও পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন লুসিও।