ধোঁয়ায় ‘দম আটকে’ যাচ্ছে সিডনিবাসীর
এমনিতে অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত সিডনি শহর বরাবরই ঝকঝকে তকতকে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ের ভয়াবহ দাবানলের জেরে ঘন ধোঁয়ায় নিশ্বাস নেওয়াই দায় সিডনিবাসীর। শহরের বাতাসের মান নেমে গেছে বিপজ্জনক পর্যায়ে। ধোঁয়ার তীব্রতায় শহরের নানা স্থানে বেজে উঠেছে সতর্কীকরণ অ্যালার্ম। ঠিকমতো দেখতেও সমস্যা হচ্ছে নগরবাসীর।
চলতি বছরের দাবানল সংকটে সাম্প্রতিক এই ধোঁয়ার চাদরকে সবচেয়ে ঘন বলছেন শহরের অনেক বাসিন্দা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
ঘন ধোঁয়ার তীব্রতায় বাতিল করা হয়েছে সিডনির ফেরি ও নৌ চলাচল। শহরের বিভিন্ন স্থানে ভবন-দালান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে মানুষকে।
এমন ‘মহাদুর্যোগময়’ পরিস্থিতিতে স্থানীয় বাসিন্দাদের ‘পাগল হওয়ার দশা’। অনলাইনে সিডনিবাসী জানাচ্ছেন, ধোঁয়ার কারণে শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হচ্ছে তাঁদের। ধোঁয়ায় তাঁদের ‘দমবন্ধ’ হয়ে আসছে।
অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের (এনএসডব্লিউ) রাজধানী এই সিডনি। এই অঙ্গরাজ্যে জ্বলছে প্রায় একশ দাবানল। এরই জেরে কয়েক সপ্তাহ ধরে সিডনির বাতাসের মান ‘ক্ষতিকর’ পর্যায়ে রয়েছে।
গ্রেটার সিডনি থেকে সবচেয়ে কাছের দাবানল রয়েছে এক ঘণ্টার গাড়ি চালানো দূরত্বে। গ্রেটার সিডনিতে ৫০ লাখ মানুষের বাস।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আজ মঙ্গলবারের ধোঁয়াচ্ছন্ন পরিস্থিতিকে ‘এখন পর্যন্ত সবচেয়ে খারাপ’ বলছেন সিডনিবাসী। চলতি সপ্তাহে আকাশ থেকে ছাই পড়েছে সিডনিবাসীর গায়ে।
এখন পর্যন্ত ‘ক্ষতিকর’ পর্যায়ের ১১ গুণ খারাপ অবস্থায় ছিল শহরের কেন্দ্রের বাতাসের মান। দাবানলের নিকটবর্তী উপশহর ও ছোট শহরগুলোতে বাতাসের মান আরো খারাপ।
এমন পরিস্থিতিতে জনসাধারণকে ঘর থেকে না বেরোনোর পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। রাস্তায় অনেকের মুখেই দেখা গেছে ফেস মাস্ক।
গত এক সপ্তাহে নগরের হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ২৫ শতাংশ। কর্তৃপক্ষ জানায়, শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন নগরবাসী।
মধ্যাহ্নভোজের বিরতির সময় স্কুলের শিশুদের বাইরে বেরোতে দেওয়া হচ্ছে না। ডে-কেয়ার সেন্টারগুলোর শিশুদের বাইরে খেলতে দেওয়া হচ্ছে না।
গত সেপ্টেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত দাবানলে সাতশর বেশি ঘরবাড়ি বিনষ্ট হয়েছে। মারা গেছেন ছয়জন। এনএসডব্লিউ অঙ্গরাজ্যের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দাবানলে পুড়ে গেছে ২০ লাখ হেক্টরের বেশি ভূমি।
অস্ট্রেলিয়ার ক্ষমতাসীন রক্ষণশীল দলের নেতৃত্বাধীন সরকারের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে অমনোযোগী মনোভাবের বিরুদ্ধে ফুঁসছেন সাধারণ জনগণ। দেশটিতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে খরা, পানি সংকট ও দাবানল লেগেই রয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সিডনিতে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন। তবে শহরে ধোঁয়ার প্রভাব নিয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি অসি প্রধানমন্ত্রী।