পাকিস্তানের সাম্প্রতিক বন্যায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কতটা
পাকিস্তানের সাম্প্রতিক প্রলয়ঙ্কারী বন্যাকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের পরিবেশের প্রতি ‘সতর্ক বার্তা’ হিসেবেই দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টিপাত শুধুমাত্র দরিদ্র দেশগুলোতেই নয়, যে কোনো দেশের জন্যই বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে, এমন ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা।
এবারের বন্যায় পাকিস্তানের অর্ধেকেরও বেশি জমির ফসল তলিয়ে যাওয়ায় দেশজুড়ে দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট। বিশ্বে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণ গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণে পাকিস্তানের ১ শতাংশেরও কম অবদান থাকলেও ভৌগলিক অবস্থানের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির মুখে পড়েছে দেশটি।
এ সপ্তাহে দেশটির জলবায়ুবিষয়ক মন্ত্রী শেরী রেহমান জানিয়েছিলেন যে, পাকিস্তানের এক-তৃতীয়াংশ এই মুহূর্তে বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে যা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বিপর্যয়কর।
ভৌগলিক অবস্থানের কারণে পাকিস্তান দুটি আবহাওয়া ব্যবস্থার শিকার হচ্ছে, যার একটি হচ্ছে দেশজুড়ে খরা আর প্রচণ্ড গরম আর অন্যটি হচ্ছে মৌসুমি বৃষ্টিপাত। দেশটির বেশিরভাগ মানুষের বসবাস ইন্দু নদীর তীর ঘেঁষে যা মৌসুমি বৃষ্টিপাতে ফুলেফেঁপে ওঠে।
বিজ্ঞান এখানে জলবায়ু পরিবর্তন ও মৌসুমি জলবায়ুর সম্পর্ককে খুব সাধারণভাবেই আলোকপাত করছে। পৃথিবী গরম হয়ে যাওয়ার কারণে বাতাস ও সাগরের তাপমাত্রা বাড়ছে যার কারণে বাড়ছে পানির বাস্পে পরিণত হওয়ার প্রবণতা। আর গরম বাতাসে থাকে বেশি পরিমাণ বাষ্প যার পরিণতি আরও বেশি বৃষ্টিপাত।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভারতীয় উপমহাদেশে গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি বায়ুর প্রভাব দীর্ঘায়িত হচ্ছে। তবে পাকিস্তানে অসংখ্য হিমবাহের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আরো নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। কেননা দেশটির উত্তরাঞ্চলের হিমবাহগুলোতে যে পরিমাণ বরফ আছে তা মেরু অঞ্চলের বাইরে পৃথিবীর যে কোনো অঞ্চলের চেয়ে অনেক বেশি যাকে ‘তৃতীয় মেরু অঞ্চল’ হিসেবে মনে করা হয়।
ইউএনডিপির সূত্র বিবিসিকে জানায়, বিশ্ব গরম হওয়ায় গলছে হিমবাহের বরফ। আর পাকিস্তানের গিলগিট-বাল্টিস্তান ও খাইবার পাখতুনওয়ালা অঞ্চলের হিমবাহগুলোতে আরও বেশি গলছে বরফ যার কারণে ৩ হাজারেরও বেশি লেক সৃষ্টি হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ৩৩টি রয়েছে এমন অবস্থায় যা কোনো মুহূর্তে কয়েক মিলিয়ন ঘন মিটার পানি ও ধ্বংসাবশেষ নিয়ে বিস্ফোরিত হতে পারে, ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে ৭০ লাখ মানুষকে।
এবিষয়ে জাতিসংঘ ও পাকিস্তান সরকার ঝুঁকি কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে প্রতিরোধমূলক অবকাঠামো নির্মাণ ও আগাম সতর্কতা জারির ব্যবস্থার মাধ্যমে।
আগে দরিদ্র দেশগুলোর দুর্বল অবকাঠামোর কারণে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি বেশি হলেও এই গ্রীষ্মে উন্নত দেশগুলোও বন্যার মতো দুর্যোগের শিকার হতে পারে বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন জলবায়ুর প্রভাব বিষয়ক বিজ্ঞানী ফাহাদ সায়িদ। ইসলামাবাদে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটা এক অন্যরকম জন্তুর মতো- বন্যার তোড় এতটাই উঁচু আর বৃষ্টিপাত এতোটাই তীব্র যে, যে কোনো শক্তিশালী প্রতিরোধ ব্যবস্থাই অকার্যকর হয়ে যাবে’। তিনি এ ব্যাপারে জার্মানি ও বেলজিয়ামের বন্যার উদাহরণ টেনে আনেন যার কারণে ২০২১ সালে অনেক প্রাণহানি ঘটে।
পাকিস্তানে গত ৩০ বছরের গড় বৃষ্টিপাতের চেয়ে গত জুন থেকে আগষ্ট মাস পর্যন্ত ১৯০ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে যার পরিমাণ ৩৯০.৭০ মি.মি.।