পেট্রোল বিতরণ নেটওয়ার্কে সাইবার হামলা, বিদেশি রাষ্ট্রকে দুষল ইরান
সাইবার হামলায় পেট্রোল বিতরণ নেটওয়ার্ক অচল হয়ে পড়ার ঘটনায় একটি বিদেশি রাষ্ট্রের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছে ইরান। সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
‘প্রিডেটরি স্প্যারো’ নামধারী একটি গ্রুপ দাবি করেছে, তারা গত মঙ্গলবার ইরানে সাইবার হামলা চালিয়েছে। কিন্তু ইরানের শীর্ষ ইন্টারনেট নীতি-নির্ধারণী সংস্থা হামলার পেছনে একটি বেনামী ‘স্টেট অ্যাক্টর’ (বিদেশি কোনো সরকার দ্বারা পরিচালিত কেউ) রয়েছে বলে অভিযোগ করেছে।
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি বলেছেন—হামলার লক্ষ্য ছিল ‘জনগণকে ক্ষুব্ধ করে তোলা’।
সাইবার আক্রমণের জেরে ইরানের জ্বালানি বিক্রয়কারী বিভিন্ন সংস্থার আন্তঃসংযুক্ত নেটওয়ার্ককে বিকল করে দেয়। এ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দেশটির মোটর গাড়িচালকেরা সরকারের ইস্যু করা স্মার্ট কার্ড দিয়ে হ্রাসকৃত মূল্যে ভর্তুকি দেওয়া জ্বালানি কিনতে পারেন। সাইবার হামলার কারণে দেশটির পেট্রওল স্টেশনগুলোতে দীর্ঘ লাইন দেখা যায়।
একই সঙ্গে হ্যাকারেরা ইরানের রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন শহরের হাইওয়েতে বসানো ডিজিটাল বিলবোর্ডেরও দখল নেয়। সেগুলোতে হ্যাকারেরা বার্তা দেয়—‘(ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি) খামেনি, আমাদের জ্বালানি কোথায়?’
ইরানের জ্বালানি তেল বিতরণ সংক্রান্ত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের একজন মুখপাত্র জানান, গতকাল বুধবার সকাল নাগাদ দেশটির মোট চার হাজার ৩০০ পেট্রোল স্টেশনের মাত্র পাঁচ শতাংশ হ্যাকারদের কবল থেকে মুক্ত করে চালু করা হয়েছে। যদিও তিনি জানিয়েছেন, প্রায় তিন হাজার স্টেশন ভর্তুকি-বিহীন দামে ‘অফলাইনে’ জ্বালানি বিক্রি করতে পেরেছে।
বিবিসি বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবরোধ, ইরান সরকারের অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কারণে দেশটির মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা ক্রমে খারাপ হয়েছে। সে কারণে ইরানে বেশির ভাগ মানুষ সরকারের ভর্তুকি দেওয়া দামে বিক্রি করা জ্বালানির ওপর নির্ভর করে।
এদিকে গতকাল বুধবার মন্ত্রীসভার বৈঠকে ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসি বলেন, ‘বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি এবং জনজীবনে বিঘ্ন ঘটিয়ে মানুষের মনে ক্ষোভের সঞ্চার করার জন্য কেউ এ কাজ করেছে।’
প্রেসিডেন্ট দাবি করেছেন—কর্তৃপক্ষের ‘সতর্কতা’র কারণে হ্যাকারেরা পরিস্থিতির সুযোগ নিতে পারেনি।
ইরানের সুপ্রিম কাউন্সিল অব সাইবারস্পেসের সেক্রেটারি আবুলহাসান ফিরুজাবাদী দাবি করেন, একটি বিদেশি রাষ্ট্র সাইবার হামলাটি চালিয়েছিল। কিন্তু, ‘কোন দেশ ও কীভাবে’ হামলা চালানো হয়েছিল, তা জানানোর সময় এখনও হয়নি।
এদিকে, ইরানের আধা-সরকারি সংবাদ সংস্থা ‘ফারস’ বলছে—হ্যাকিংয়ের ঘটনাটি দুই বছর আগে ইরানে পেট্রোলের দাম ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে দেওয়া হলে দেশজুড়ে যে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছিল, তার দ্বিতীয় বার্ষিকী উদ্যাপনের সঙ্গে সম্পর্কিত।
২০১৯ সালের ওই বিক্ষোভ দমনে ইরানের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যাপক শক্তি প্রয়োগ করে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দাবি অনুযায়ী, সে সময় ৩০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল। যদিও ইরানের কর্মকর্তারা সে দাবি নাকচ করে আসছেন।
বার্তা আদান-প্রদানের অ্যাপ টেলিগ্রামে এক পোস্ট দিয়ে প্রিডেটরি স্প্যারো বলছে, সাম্প্রতিক সাইবার হামলাটি আসলে ‘এ অঞ্চল ও বিশ্বের মানুষের বিরুদ্ধে তেহরানের সন্ত্রাসী সরকারের চালানো সাইবার কর্মকাণ্ডের প্রতি জবাব।’ একই সঙ্গে ইরানের জরুরি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের আগেই সতর্ক করা হয়েছিল বলে দাবি করেছে হ্যাকার গ্রুপটি।
প্রিডেটরি স্প্যারো আরও বলছে—ইরানের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে ‘খুব দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি’ হতে পারে এমন কিছু না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তারা। গ্রুপটি আরও দাবি করেছে, গত জুলাই মাসে ইরানের রেল নেটওয়ার্কে সাইবার আক্রমণের পেছনেও ছিল তারা। সে সময় স্টেশনের বোর্ডগুলোতে ট্রেন বিলম্বিত বা বাতিল বলে ভুল বার্তা প্রদর্শিত হয়।