গত সপ্তাহে সারা বিশ্বে যত মানুষ নতুন করে নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, তার প্রায় অর্ধেকই হয়েছে ভারত। কেবল তাই নয়, গত সপ্তাহে বিশ্বে করোনায় মোট মৃত্যুর চার ভাগের এক ভাগ ছিল ভারতে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এই তথ্য জানিয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

ডব্লিউএইচও গতকাল বুধবার করোনার মহামারি-সংক্রান্ত সাপ্তাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেই প্রতিবেদন বলছে, গত সপ্তাহে বিশ্বের মোট করোনায় আক্রান্তের ৪৬ শতাংশই এবং বিশ্বে করোনায় মোট মৃত্যুর ২৫ শতাংশ হয়েছে ভারতে।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রকোপ শুরুর পর গত মাসের শুরু থেকে ভারতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। কয়েক সপ্তাহে সে পরিস্থিতি চরমে পৌঁছেছে। গত ১৪ দিন ভারতের দৈনিক সংক্রমণ হয়েছে তিন লাখের বেশি। আর, গত ১০ দিন তা ছিল সাড়ে তিন লাখের বেশি। ভারতের পেছনে থাকা যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলে দৈনিক আক্রান্ত থাকছে এক লাখের কম।

করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভারতে স্বাস্থ্য পরিষেবার করুণ চিত্র ফুটে উঠছে। অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যুর পাশাপাশি কোভিড রোগীদের শয্যা না পাওয়া, করোনা পরীক্ষা করতে দীর্ঘ অপেক্ষার খবর বার বার উঠে এসেছে গত কয়েক সপ্তাহে। কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলার জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ও পরিকল্পনার অভাবের জন্য ভারত সরকারের সমালোচনা হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। ভারতের নানা রাজ্য কারফিউ ও লকডাউন জারি করে সংক্রমণের শৃঙ্খল ভাঙতে উদ্যোগী হলেও কেন্দ্রীয় সরকার পক্ষ থেকে এখনও সেই অর্থে কোনো পদক্ষেপ কেন নেওয়া হয়নি— তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। তার ওপর ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও রাজনৈতিক সভা নিয়ে নীরবতার জন্য দেশে-বিদেশে সমালোচিত হয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

করোনায় আক্রান্ত হয়ে যেমন মৃত্যু হচ্ছে, তেমনই করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসা পরিষেবা না পেয়ে মৃত্যুর ঘটনাও সামনে আসছে। যা ভারতের দৈনিক মৃত্যুকে লাগামছাড়া পর্যায়ে নিয়ে গেছে। আনন্দবাজার বলছে, এখন ভারতে প্রতিদিন মহামারির কারণে যত মৃত্যু হচ্ছে, গত বছর এর অর্ধেক মৃত্যুও হয়নি। এর মধ্যেই চলছে টিকাকরণ। কিন্তু ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে টিকার সরবরাহ পর্যাপ্ত না হওয়ারও অভিযোগ উঠছে। ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া পরিসংখ্যান বলছে, গত এক সপ্তাহে সে দেশে টিকাকরণ হয়েছে আগের তুলনায় অনেক কম।

তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা

ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের জেরে বহু হাসপাতালে শয্যার সংখ্যা অপ্রতুল বলে প্রতীয়মান হয়েছে। দেশটিতে কমতি রেয়েছে অক্সিজেন সরবরাহেও। এমন পরিস্থিতিতে ভারতে আবারও করোনার ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

টানা ১৪ দিন তিন লক্ষাধিক আক্রান্ত

ভারত এই মুহূর্তে এক কঠিন কোভিড পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। করোনার কারণে দেশটিতে ১৪ দিন ধরে টানা দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা তিন লক্ষাধিক হয়েছে। এদিকে, দেশটির একাধিক রাজ্যে করোনা সংক্রমণের হার বেড়েছে। এমন পরিস্থিত মোকাবিলা করতে বহু স্থানে লকডাউন ঘিরে নানা বিধি জারি হয়েছে।