ভারতে ওমিক্রনের সংক্রমণ ভাবালেও মৃত্যুর সংখ্যায় স্বস্তি
করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন সারা বিশ্বে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরই মধ্যে ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে এ ধরনটি। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতেও ছড়াচ্ছে ওমিক্রন। প্রথম শনাক্তের পর ২৫ দিনে আড়াই হাজারের বেশি মানুষ নতুন এই ধরনে আক্রান্ত হলেও মৃত্যু হয়েছে একজনের। এতে কিছুটা হলেও মানসিক স্বস্তি ধরে রাখতে পেরেছে সে দেশ ও এদেশের জনগণ।
ভারতে গত ১২ ডিসেম্বর প্রথম ওমিক্রন শনাক্ত হয়। আর দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল বুধবার প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে। আজ বৃহস্পতিবারের তথ্যমতে শেষ ২৪ ঘণ্টায় এ ধরনে আক্রান্তের সংখ্যা নেহায়েত কম না। সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, এরই মধ্যে সেখানে দুই হাজার ৬৩০ জনের শরীরে এই ধরন শনাক্ত করা হয়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে করোনার নতুন ধরনসহ শনাক্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৯০ হাজার। আগের দিনের তুলনায় করোনা রোগী বেড়েছে প্রায় ৩৩ হাজার। এ ছাড়া করোনায় গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে ৩২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। করোনায় দেশটিতে মৃত্যুর সংখ্যা উদ্বেগজনক হলেও ওমিক্রনে মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে এখনও তেমন ঝুঁকির খবর পাওয়া যায়নি। তবে এটির বিস্তার নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছেন বিশেষজ্ঞেরা।
ভারতে ওমিক্রনে মারা যাওয়া ব্যক্তি হলেন পশ্চিমের রাজ্য রাজস্থানের উদয়পুরের বাসিন্দা লক্ষ্মীনারায়ণ নাগার (৭৩)। গত সপ্তাহে তিনি মারা যান।
ভারতের সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানায়, ওই ব্যক্তির দেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে সেটির জিনম সিকোয়েন্স করে জানা যায়, তিনি ওমিক্রন ধরনে আক্রান্ত ছিলেন। ৩১ ডিসেম্বর উদয়পুরের একটি হাসপাতালে তিনি মারা যান।
গত ১৫ ডিসেম্বর পরীক্ষায় লক্ষ্মীনারায়ণের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। তারপর থেকে তিনি হাসপাতালেই ছিলেন। তিনি ডায়াবেটিস এবং উচ্চরক্তচাপসহ নানা দীর্ঘমেয়াদী রোগে ভুগছিলেন। মৃত্যুর আগে দুই বার পরীক্ষায় তিনি করোনাভাইরাস ‘নেগিটিভ’ হয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যুর কারণ হিসেবে কোভিড পরবর্তী নিউমোনিয়ার কথা বলা হয়েছে।
উদয়পুরের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. দিনেশ খারাদি বলেন, ‘তাঁর শরীরে জ্বর, কাশি ও সর্দিসহ আরও কিছু উপসর্গ ছিল। তাঁর দেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে জিনম সিকোয়েন্সের জন্য পাঠানো হয় এবং গত ২৫ ডিসেম্বর আমরা পরীক্ষার ফল হাতে পাই।’
এদিকে, করোনার পূর্ণডোজ টিকা নেওয়া ব্যক্তির চেয়ে বুস্টার ডোজ নেওয়াদের মৃত্যুর হার ৯০ শতাংশ কম বলে জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এক গবেষণার বরাত দিয়ে দেশটির রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) পরিচালক ড. রচেলে ওয়ালেনস্কি এ খবর জানান। মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
স্থানীয় সময় বুধবার হোয়াইট হাউসে দৈনিক করোনা ব্রিফিংয়ে ইসরায়েলের একটি গবেষণায় পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বুস্টার ডোজের কার্যকারিতার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন ড. রচেলে। তিনি বলেন, ইসরায়েলে গবেষণাটি যখন চালানো হয় সেখানে করোনার ডেলটা ভ্যারিয়্যান্টের প্রাধান্য ছিল। আমরা আশা করছি, ওমিক্রনে আক্রান্তদের বেলায়ও যেন একই ধরনের সুরক্ষা মেলে।
ইসরায়েলের ওই গবেষণার বরাতে সিডিসির পরিচালক জানান, কোভিড-১৯ টিকার বুস্টার ডোজ দুই ডোজ বা পূর্ণডোজ টিকার তুলনায় দশগুণ সংক্রমণ কমিয়েছে। ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিদের গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ঘটনা ১৮ গুণ কমিয়েছে আর ৪০ থেকে ৫৯ বছর বয়সীদের বেলায় তা ২২ গুণ। এ ছাড়া যারা পূর্ণডোজ টিকাপ্রাপ্তের চেয়ে মৃত্যুহার ৯০ শতাংশ কমাতে পারে কোভিড টিকার বুস্টার ডোজ।