মায়া সভ্যতার রহস্যময়ী ‘লাল রানি’ ও তাঁর বিষাক্ত সমাধি
ঘন জঙ্গলে ঘেরা পালেন্ককে বলা হয় মেক্সিকোর প্রাচীন মায়া সভ্যতার সবচেয়ে মনোহর ও রহস্যময় নগরগুলোর একটি। মায়া সভ্যতার সময়কার মানুষদের কাছে পালেন্কের নাম ছিল লাকামহা। একটা সময় মায়া সভ্যতার রাজধানী হয়ে ওঠে এই পালেন্ক। মেক্সিকোর দক্ষিণাঞ্চলীয় পালেন্ক শহরটি বর্তমানে জাতিসংঘের ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ স্থান হিসেবে তালিকাভুক্ত। লাকামহা আধুনিক মেক্সিকোর চিয়াপাস অঙ্গরাজ্যের মধ্যে পড়েছে। প্রাচীন এই শহরটির ধ্বংসাবশেষ পড়ে আছে উসুমাচিনতা নদীর অববাহিকায়।
খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দিতে পালেন্কের অবস্থা ছিল দারুণ রমরমা। সে সময় মায়া সভ্যতার শাসক ছিলেন প্রথম কিনিচ জানাব পাকাল (রাজা পাকাল দ্য গ্রেট)। তাঁর রাজত্বকালেই প্রায় অচেনা শহর থেকে পরাক্রমশালী রাজধানীতে রূপান্তরিত হয় পালেন্ক। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
মায়া সভ্যতার অন্য নগরগুলোর তুলনায় পালেন্ক ছিল অনেকটাই ভিন্ন। জমকালো প্রাসাদের বহর, একাধিক বিশালকায় প্রশাসনিক ভবন, মন্দিরগুলোর খোদাই করা মূর্তি—সব মিলিয়ে পালেন্কের ছিল আলাদা পরিচিতি। আধুনিক সময়কার গুয়াতেমালায় অবস্থিত মায়া সভ্যতার আরেক বিখ্যাত নগর তিকালের জাঁকজমকের চেয়ে কোনো অংশে কম ছিল পালেন্কের জৌলুস। প্রত্নতত্ত্ববিদরা ধীরে ধীরে পালেন্কের রহস্য উন্মোচন করছেন। রাজা পাকালের বিশ্রামাগারের খোঁজ পেয়েছেন তাঁরা। আর অতি সম্প্রতি খোঁজ মিলেছে মায়া সভ্যতার এক অভিজাত নারীর সমাধির। বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, ওই নারীর সমাধি মাখা ছিল বিষাক্ত পাউডারে। কেবল সমাধির বহির্ভাগই নয়, সমাধির ভেতর, দেহাবশেষ, মুখমণ্ডল ঢাকা মুখোশ, সমাধিতে থাকা মূল্যবান রত্নভাণ্ডার—সবকিছুতে বিষাক্ত লাল পাউডার মাখানো। পুরাতত্ত্ববিদরা ওই নারীর নাম দিয়েছেন ‘রেড কুইন’ বা ‘লাল রানি’। ‘রেড কুইন’ প্রত্নতাত্ত্বিক প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৭ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত মেক্সিকোর একটি গবেষকদলের করা গবেষণায় এসব তথ্য উঠে আসে।
ওই নারীর সমাধি ও পোশাক দেখে বোঝা যায়, তিনি পালেন্কের অভিজাত শ্রেণির ছিলেন। তাঁর মুখের পুনর্গঠনকে ম্যালাচিট মাস্কের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে।
ধারণা করা হচ্ছে, রাজা পাকালের সমসাময়িক ছিলেন ‘লাল রানি’। তবে ডিএনএ বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, ‘লাল রানি’র সঙ্গে পাকালের কোনো রক্তের সম্পর্ক নেই। তবে ওই নারীর দাঁত পরীক্ষা করে মনে করা হচ্ছে, ওই সময়ের জনগোষ্ঠীর কেউ ছিলেন তিনি। এসব বিশ্লেষণ থেকে তাঁকে পাকালের স্ত্রী তাজাকবু আজাও বলে মনে করা হচ্ছে, যিনি পাকালকে বিয়ে করার জন্য নিকটবর্তী শহর থেকে ৬২৬ সালে পালেন্কে এসেছিলেন।
এসব বিশ্লেষণ এখনো চূড়ান্ত না হলেও বিশেষজ্ঞ দলটি ‘রেড কুইন’ বা লাল রানিকে শনাক্তের জন্য বিশ্বাসযোগ্য বিশ্লেষণ তুলে ধরেছে।
তবে যদি রেড কুইনের সন্তানরা, যারা কি না পরবর্তী সময়ে পালেন্কের শাসক ছিলেন, তাঁদের সমাধি খুঁজে পাওয়া যায় এবং ডিএনএ টেস্ট মিলে যায়, তাহলে ওই নারী সম্পর্কে সব ধারণার সমাপ্তি ঘটবে।