লাদাখ সীমান্তে ভারত ও চীনের পাল্টাপাল্টি যুদ্ধাস্ত্র মোতায়েন
লাদাখে ভারত ও চীনের সেনাবাহিনীর মধ্যে ক্রমেই বাড়ছে উত্তেজনা। দুপক্ষই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সামরিক সরঞ্জাম মজুদ করছে। চীনের লাল ফৌজের পাশাপাশি সীমান্তে পাল্টা প্রস্তুতি শুরু করেছে ভারতও। ইতোমধ্যে লাদাখ সীমান্তে অত্যাধুনিক মিসাইল সিস্টেম, ট্যাঙ্ক ও কামান মজুদ করেছে ভারত। সীমান্তে দুপক্ষই বিপুল সংখ্যক সেনা মোতায়েন করে রেখেছে। একে অপরের ওপর রাখছে কড়া নজর।
জানা গেছে, লাদাখ সীমান্তে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ছে চীনের শত শত ড্রোন। ভারতীয় সেনাবাহিনীর গতিবিধির ওপর নজর রাখার জন্য কৌশলগতভাবে চীনের সেনাবাহিনী ওসব ড্রোন ওড়াচ্ছে বলে ভারতের দাবি। ভারতের আরো দাবি, চীনা ড্রোন অনেক সময় সীমান্ত রেখা পেরিয়ে ভারত ভূখণ্ডেও ঢুকে পড়ছে। গত কয়েক সপ্তাহে ভারতের অন্তত চারটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকার ওপর ওই ড্রোনগুলো উড়েছে বলে ভারতের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।
তবে ড্রোন নজরদারিতে পিছিয়ে নেই ভারতও। লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল (এলএসি) বরাবর কড়া নজরদারি শুরু করেছে ভারত। সূত্রের খবর, ইসরায়েলে তৈরি বিশেষ ড্রোন ‘হেরন’ মোতায়েন করেছে ভারত। লাদাখ সীমান্তে বিপুল সংখ্যক সেনা এবং সামরিক সরঞ্জাম পাঠিয়েছে দুদেশই।
গত মাস থেকেই লাদাখ সীমান্তে চীন ‘এআর ৫০০ সি’ নামের হেলিকপ্টার আকৃতির বিশাল ড্রোন মোতায়েন করে বলে সংবাদ সূত্রে জানা গিয়েছিল। এ ড্রোনগুলো পাঁচ হাজার মিটার উঁচুতে উড়তে পারে। এসব ড্রোন ৫০০ কেজি পর্যন্ত রসদ নিয়ে ১৭০ কিলোমিটার গতিতে টানা পাঁচ ঘণ্টা আকাশে থাকতে পারে। এদিকে চলতি সপ্তাহেই ভারতীয় সেনার ১৪ নম্বর কর্পস মোতায়েন করেছে হেরন মিডিয়াম অলটিটিউড লং এনডুরেন্স ড্রোন। সে ড্রোন থেকে সীমান্তে নজর রাখা হচ্ছে। এ ড্রোন অন্তত ১০ কিলোমিটার উঁচুতে উড়তে পারে। টানা ২৪ ঘণ্টটটা চক্কর কাটতে পারে আকাশে।
এ ছাড়া সীমান্তে দাঁড়িয়ে থাকা ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে রয়েছে পোর্টেবল ড্রোন। একাধিক স্পাইলাইট মিনি ড্রোন মজুদ রাখা হয়েছে। যা দিয়ে সহজেই ভারতীয় সেনাবাহিনী পার্বত্য এলাকায় শত্রুদের অবস্থান দেখে নিতে পারবে। ইজসরায়েলের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এ ড্রোনগুলো তৈরি করা হয় ২০১৮ সালে। যেকোনো আবহাওয়াতেই এ ড্রোন ওড়ানো সম্ভব। ১০ হাজার মিটার থেকে ৩০ হাজার ফুট উঁচু পর্যন্ত উড়তে সক্ষম এ ড্রোন তুলে আনতে পারে রিয়েল টাইম ভিডিও ফুটেজ।
পাশাপাশি, ভারত ইতোমধ্যে সুখোই জঙ্গি বিমান এবং বোমারু বিমানগুলো মোতায়েন করেছে। সুখোই যোদ্ধারা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণের রেখার নিকটে আকাশে টহল দিচ্ছে। ক্ষেপণাস্ত্র মজুদ রাখা হয়েছে। ভারতীয় বিমানবাহিনী সব ধরনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রস্তুত করে রেখেছে। চীন যদি হামলা চালায়, ভারত তা যাতে রুখতে পারে, তার পুরোদস্তুর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা বা ডিআরডিওর তৈরি ক্ষেপণাস্ত্রগুলো একটি ট্যাঙ্ক বা চাকাযুক্ত ট্রাক থেকে নিক্ষেপ করা যেতে পারে। সব সুরক্ষা ব্যবস্থা মজুদ রেখেই দুদেশ কূটনৈতিক ও সামরিক আলোচনা চালাচ্ছে। যদি পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে, তাহলে এসবের কোনো প্রয়োজন হবে না।
অন্যদিকে, ভারত ও চীন সীমান্ত সংঘাতকে কেন্দ্র করে, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বেধে যাওয়া বিচিত্র নয় বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। চীন ও ভারতের অনমনীয় নীতি থাকলে পরিস্থিতি ক্রমে সেদিকেই যাচ্ছে বলে মত ওয়াকিবহাল মহলের। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এমতাবস্থায় ভারতের পাশে যুক্তরাষ্ট্র দাঁড়ালে অবশ্যম্ভাবীভাবে যুদ্ধ বেধে যেতেই পারে। তখন পাকিস্তান ও উত্তর কোরিয়া হয়তো দাঁড়াবে চীনের পেছনে। তখন জাপান ও অস্ট্রেলিয়াও হয়তো ভারতের পক্ষ নিয়ে যুদ্ধের ময়দানে নেমে পড়তে পারে বলে সমর বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।