সবচেয়ে ধনী রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে বিজেপি
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2019/11/11/maharashtra_shivsena.jpg)
ভারতের সবচেয়ে ধনী রাজ্য মহারাষ্ট্রে সরকার গঠন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। বিজেপির এমন সিদ্ধান্তের পর থেকে আজ সোমবার জোট গঠন করতে তড়িঘড়ি হুমড়ি খেয়ে পড়েছে ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্যটির বিরোধী দলগুলো।
মহারাষ্ট্রে গত মাসে অনুষ্ঠিত রাজ্যসভা নির্বাচনে সংখাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল বিজেপি। মিত্র দল শিবসেনার সহায়তায় রাজ্যে আরামসে ক্ষমতায় পুনর্বহাল হচ্ছে বিজেপি, এমনটাই ধরে নেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু ১৫ দিন ধরে বিজেপি ও শিবসেনার মধ্যে চলমান অন্তর্কোন্দলের জেরে দুই দলের সম্পর্কে ভাঙন ধরে।বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করে শিবসেনা। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল রোববার বিজেপির মহারাষ্ট্রের সভাপতি চন্দ্রকান্ত পাতিল রাজ্যপালকে জানান, তাঁরা সরকার গঠন করবেন না। এর পরই রাজ্যপাল ভগত সিং কোশিয়ারি রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে শিবসেনাকে সরকার গঠনের জন্য আহ্বান জানান। শিবসেনাকে আজ সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়। চলতি বছরের মে মাসে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে বিজেপির নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর মহারাষ্ট্রের ঘটনায় প্রথমবারের মতো রাজনৈতিকভাবে হোঁচট খেলো মোদি সরকার।
আজ সোমবার সকালে বিজেপি সরকারের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করার ঘোষণা দেন কেন্দ্রীয় ভারী শিল্পমন্ত্রী ও শিবসেনা সাংসদ অরবিন্দ সাওয়ান্ত। এক টুইটবার্তায় অরবিন্দ সাওয়ান্ত বলেন, ‘সত্যের সঙ্গে রয়েছে শিবসেনা। মহারাষ্ট্র রাজ্যের এই পরিস্থিতিতে দিল্লির সরকারে থাকার কোনো অর্থ হয় না। তাই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দিচ্ছি।’
গত রোববার বিকেলে বিজেপি মহারাষ্ট্রে সরকার গঠন না করার কথা ঘোষণা করার পর মহারাষ্ট্র রাজ্যে শিবসেনা সরকার গঠন করতে চায় কি না, তা শিবসেনার কাছে জানতে চান মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল। তার পরই মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আসে নাটকীয় পরিবর্তন। শিবসেনার ওপর একটি শর্ত চাপিয়ে দেয় এনসিপি। সেখানে বলা হয়, এনডিএ ছাড়লে তবেই শিবসেনাকে সরকার গঠনে সমর্থন করবে এনসিপি। এনসিপির ওই ঘোষণার পরই সাওয়ান্ত মোদির মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দেন।
রাজনৈতিক মহলের খবর, আজ সোমবারই রাজ্যপালের কাছে গিয়ে সরকার গঠনের কথা জানাতে পারে শিবসেনা। এ নিয়ে সেনাপ্রধান উদ্ধব বাল ঠাকরের সঙ্গে শরদ পাওয়ারের ফোনে কথা হয়েছে। দুজনের মধ্যে সরকার গঠন নিয়ে কথা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে কংগ্রেস বাইরে থেকে সমর্থন দিতে পারে বলে সূত্রের খবর।
গত অক্টোবরে মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি একক বৃহত্তম দল হিসেবে ১০৫টি আসন জিতেছিল। দেবেন্দ্র ফড়নবিশ ৩১ অক্টোবর দলের প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হন। কিন্তু তারপরই শরিকী দ্বন্দ্বে সরকার গঠন নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়। শিবসেনা বেঁকে বসায় বিজেপি সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আসন সংখ্যা থেকে দূরে থমকে যায়। অন্যদিকে শিবসেনাও জোটসঙ্গী খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়।
গত অক্টোবরে অনুষ্ঠিত মহারাষ্ট্র বিধানসভার নির্বাচনে ২৮৮ আসনের বিজেপিসঙ্গী শিবসেনা পেয়েছিল ৫৬টি আসন। বিরোধী জোটে এনসিপি ৫৪টি ও কংগ্রেস ৪৪টি আসন পেয়েছিল। মহারাষ্ট্রে সরকার গঠনের ক্ষেত্রে এনসিপির সমর্থন পেতে গেলে ছাড়তে হবে এনডিএর সঙ্গ, গতকাল রোববার এমনটাই শর্ত দেন শরদ পাওয়ারের দল।
এনসিপি নেতা নবাব মালিকও রোববারই জানিয়ে দেন, শিবসেনাকে প্রথমেই এনডিএ ছাড়তে হবে। নরেন্দ্র মোদি সরকারে শিবসেনার একজন মন্ত্রী রয়েছেন। যতক্ষণ পর্যন্ত শিবসেনা এনডিএ ছাড়ছে না, ততক্ষণ পরিস্থিতির ওপর নজর রাখবে এনসিপি। তার পরই শিবসেনা সাংসদ অরবিন্দ সাওয়ান্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দেন।
মহারাষ্ট্রে বিজেপি সরকার গঠনের দাবি ছাড়ার পর, বল এখন শিবসেনার কোর্টে। এখন সরকার গঠনের জন্য এনসিপির সঙ্গে কথা বলে গোটা প্রক্রিয়াটি কিছুটা এগিয়েও রেখেছে তারা। বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলে বর্তমানে তাদের হাতে রয়েছে ৫৬ আসন। এনসিপির ৫৪ বিধায়কের সমর্থন পেলে তাদের দলে হবেন ১০০ বিধায়ক। তার পরও তাদের কংগ্রেস বা অন্য কারো সমর্থন নিয়ে ১৪৫ আসনের শক্তি দেখাতে হবে।
তবে সরকার গঠন নিয়ে এনসিপি নেতা নবাব মালিক বলেন, ‘আমাদের কাছে প্রয়োজনীয় বিধায়ক নেই। তবে রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন হোক, তাও চায় না দল। তবে আমাদের দিক থেকেও কিছু শর্ত দেওয়া হয়েছে শিবসেনাকে। সরকার গড়তে গেলে তাতে সম্মত হতে হবে শিবসেনাকে।’