দীর্ঘদিন যুদ্ধ না করায় ভারতীয় সেনার মর্যাদা কমে গেছে
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পরিকার বলেছেন, গত কয়েক দশকে ভারতের সেনাবাহিনী কোনো যুদ্ধ করেনি। এর ফলে সেনাবাহিনীর মর্যাদা কমে গেছে। গত সোমবার ভারতের রাজস্থান রাজ্যের জয়পুরে এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
মনোহর আরো বলেন, ‘আগে ভারতীয় সেনাবাহিনীর কোনো কমান্ডিং অফিসার একজন আইএএস (ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস) বা অন্য কোনো সেক্টরের কর্তাব্যক্তিকে চিঠি দিলে সেই চিঠিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হতো। কিন্তু এখন সেই গুরুত্ব আর দেওয়া হয় না। তার একটা কারণ হয়তো, গত ৪০-৫০ বছর আমরা কোনো যুদ্ধ করিনি। যার ফলে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে এখন আর কেউ গুরুত্ব দেয় না।’
পাশাপাশি মন্ত্রী এটাও বলেন, ‘তার মানে আমি এটা বলছি না যে, আমাদের যুদ্ধে যাওয়া উচিত। আমি এটাই বোঝাতে চাইছি, যেহেতু আমরা কোনো যুদ্ধ করিনি, তাই দেশের বিভিন্ন মহলে ভারতীয় সেনাবাহিনী সম্পর্কে শ্রদ্ধা ও গুরুত্বের মাত্রা হ্রাস পেয়েছে।’
পরিকারের এ মন্তব্যের পর দেশজুড়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। ভারতের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এ মন্তব্যের কঠোর বিরোধিতায় নেমেছে। অবশ্য এ ধরনের মন্তব্য পরিকারের এটাই প্রথম নয়।
সম্প্রতি ভারতীয় সেনাবাহিনী মিয়ানমারে অভিযান চালিয়ে জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস করে দিয়ে আসার পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বাগযুদ্ধের একপর্যায়ে পরিকার পাকিস্তানকে কটাক্ষ করে বলেন, যারা ভারতের নতুন চেহারা দেখে ভয় পেয়েছে, তারাই প্রতিক্রিয়া দেওয়া শুরু করেছে।
সোমবার প্রতিরক্ষামন্ত্রীর মন্তব্যে কংগ্রেস নেতা প্রমোদ তিওয়ারি জানান, ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য প্রতিটি ভারতবাসী গর্ববোধ করে। সেখানে দাঁড়িয়ে এই সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এ ধরনের মন্তব্যের জন্য গোটা দেশবাসীকে অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে। কংগ্রেসের পাশাপাশি জেডিইউ নেতা কে সি ত্যাগি জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এ মন্তব্য রাষ্ট্রবিরোধী। পরিকারের এ মন্তব্যের জেরে শুধু বিরোধী মহলই নয়, অসন্তোষ ধরা পড়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একাংশেও।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল পি এন হুন বলেন, ‘কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এ ধরনের মন্তব্য করা ঠিক হয়নি বলেই আমি মনে করি।’
তবে কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এ মন্তব্যের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন বিজেপির মুখপাত্র জিভিএল নরসিমা রাও। তিনি পরিকারের পক্ষ নিয়ে বলেন, ‘উনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রতি সাধারণ মানুষ যাতে আরো শ্রদ্ধাশীল হয়, সেনাবাহিনীকে মানুষ যাতে আরো বেশি মর্যাদা দেয়, সে কথা ভেবেই এ মন্তব্য করেছেন।’ রাও আরো বলেন, ‘এ কথা আমাদের মনে রাখা উচিত, একজন প্রতিরক্ষামন্ত্রী যখন কোনো মন্তব্য করেন, তখন তিনি সেটা অনেক ভাবনা-চিন্তা করেই বলেন।
তাই আমি নিশ্চিত, উনি সেনাবাহিনীর প্রতি দেশবাসীর সম্মান বাড়ানোর লক্ষ্যেই এ কথা বলেছেন।’