নেতার আশ্রয়ে মিল্কী হত্যার আসামি, বিব্রত যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগ
যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক খান মিল্কী হত্যা মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি শাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল যুক্তরাষ্ট্রে যুবলীগেরই এক নেতার আশ্রয়ে আছেন। এ নিয়ে সম্প্রতি এনটিভি অনলাইনেও একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এবার যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগ সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছে, তাদের একটি অংশের নেতা তারিকুল হায়দার চৌধুরীর আশ্রয়েই রয়েছেন চঞ্চল।
চঞ্চল সরকারের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন যুবলীগের নেতারা।
গত মঙ্গলবার নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের পালকি সেন্টারে আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে বলা হয়, ‘যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগের আশ্রয়ে মিল্কী হত্যার আসামি’ শিরোনামে বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর খবর প্রকাশিত হচ্ছে। এ বিষয়টি পরিষ্কার করার জন্যই আজকের সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রকাশিত ওই সংবাদে মিসবাহ-ফরিদের নেতৃত্বাধীন যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগের নেতাকর্মীসহ যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী পরিবারের সকল নেতা বিব্রত ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এতে আরো বলা হয়, ‘ঢাকা মহানগর যুবলীগ (উত্তর) থেকে বহিষ্কৃত শাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল সরকারের বিরুদ্ধে বক্তব্য পেশ করে ভিন্ন নামে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ার চেষ্টা করছেন।’
চঞ্চলকে বৈধতা দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় যুবলীগের কিছু নেতা তাঁদের ব্যক্তিগত স্বার্থে টেলিকনফারেন্সে বক্তব্য দিচ্ছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, ‘যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেওয়া শাখাওয়াত গত ২৫ এপ্রিল নিউইয়র্কের একটি মদের দোকানে (বার) মারামারি করে নিউইয়র্ক পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। সে সময় সাখাওয়াতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক তারিকুল হায়দার চৌধুরী ওরফে মো. ইলিয়াস উপস্থিত ছিলেন।’
চঞ্চল বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার করে যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য করার চেষ্টা করছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। দ্রুত তারিকুল হায়দার চৌধুরী ও মিল্কী হত্যার আসামি চঞ্চলের সব অপকর্মের ভিডিওসহ প্রমাণ জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে বলেও উল্লেখ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগের একটিই কমিটি। যার সভাপতি মিসবাহ আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক মো. ফরিদ আলম। মিসবাহ ও ফরিদের স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আরেকটি আহ্বায়ক কমিটি সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু মিসবাহ-ফরিদের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগের প্রতিটি নেতাকর্মীর নজিরবিহীন ঐক্যের কারণে সেই তথাকথিত আহ্বায়ক কমিটির অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যায়।’ এ বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান কেন্দ্রীয় কমিটিকে জানিয়েছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়।
ওই আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক তারিকুল হায়দার চৌধুরী। সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, তারিকুলকে যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। মিল্কী হত্যার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি শাখাওয়াত তারিকুলের সঙ্গেই আছে। এ দুজনই যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি করছেন বলে দাবি করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদুর রব খান জামাল, যুগ্ম সম্পাদক মো. ওয়াহেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক সাদেকুর রহমান, নিউইয়র্ক স্টেট যুবলীগের সভাপতি জামাল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সেবুল মিয়া, যুগ্ম সম্পাদক রহিমুজ্জামান সুমন ও সাংগঠনিক সম্পাদক ইফজাল হোসেন।
গত ১৫ জুন এনটিভি অনলাইনে ‘যুক্তরাষ্ট্রে যুবলীগের আশ্রয়ে মিল্কী হত্যার আসামি’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অন্যান্য নেতাকর্মীর সঙ্গে শাখাওয়াতের ছবিও প্রকাশিত হয়।
২০১৩ সালের ২৯ জুলাই দিবাগত রাতে রাজধানীর গুলশান শপার্স ওয়ার্ল্ডের সামনে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন মিল্কী। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ১২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরো চার-পাঁচজনকে আসামি করে গুলশান থানায় মামলা করেন মিল্কীর ভাই মেজর রাশেদুল হক খান। মিল্কী হত্যাকাণ্ডের পর তারেক ও সাখাওয়াতকে আওয়ামী যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়।