রোহিঙ্গা নারীর প্রেম ও বিয়ের গল্প
আগস্টের ২৫ তারিখ। মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে শুরু হয় দেশটির সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞ। প্রাণ বাঁচাতে নিজ পরিবার-ভিটেমাটি ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় লাখ লাখ রোহিঙ্গা। কক্সবাজারের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে শুরু হয় অনিশ্চিত এক জীবনের পথচলা। এমনই দুজন রোহিঙ্গা সাদ্দাম হোসেন ও শফিকা বেগম।
রাখাইনের মংডু শহরের ফয়রা বাজার এলাকায় বাস করতেন সাদ্দাম ও শফিকা। ভালোলাগা আর ভালোবাসার শুরুটা সেখান থেকেই। বর্তমানে কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে বাসিন্দা এই দুই রোহিঙ্গা শত বিপত্তির পরও ভুলে যাননি একে-অপরকে। ভালোবাসাকে বিয়ের পরিণতি দিয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎটা হাত ধরাধরি করে সামাল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। গত ১১ ডিসেম্বর শুরু হয়েছে তাঁদের বিবাহিত জীবন।
কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে ২৪ বছর বয়সী সাদ্দামের একটি ছোট্ট রকমারি দোকান রয়েছে। আর ১৮-তে পা দেওয়া শফিকা পুরোদস্তুর গৃহবধূ। সাদ্দাম-শফিকার বিয়ের বিভিন্ন ছবি ক্যামেরাবন্দি করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। ছবিগুলো দুজনের জীবনের গল্পের একঝলক তুলে ধরেছে সবার সামনে।
১১ ডিসেম্বর সাদ্দাম-শফিকার নতুন জীবনের শুরুকে বরণ করতে কুতুপালং শিবিরে শুরু হয় উৎসব। কারণ, সেদিন তাঁদের বিয়ে। সাদ্দাম-শফিকার মিলনকে কেন্দ্র করে একদিনের জন্য হলেও গ্লানি ভুলে থাকার চেষ্টায় মেতে ওঠে ক্যাম্পবাসী। সকাল থেকে বিয়ের অনুষ্ঠানে শুরু হয় অতিথি সমাগম।
বিয়ে আর ভোজের আয়োজন নেই, তাও কি হয়! দুপুর হতেই সারি বেঁধে খাবার খেতে বসে যায় সবাই। চলে গল্প-সল্প আর নতুন জুটির জন্য শুভকামনা।
আর কিছু সময় বাদেই বিয়ে। তাই বিয়ের পোশাক পরে তৈরি হয়ে নেন সাদ্দাম।
শরণার্থী শিবিরগুলোতে রোহিঙ্গাদের সহায়সম্বল বলতে গেলে কিছুই নেই। তারপরও কনেকে সাধ্যমতো সাজানোর চেষ্টা। হাতে মেহেদি আর ভালো পোশাক দিয়ে বিয়ের জন্য তৈরি করা হয় শফিকাকে।
সাজগোজ শেষে হাজির হন কাজি। মুরব্বিদের উপস্থিতিতে সাদ্দাম-শফিকার জীবনের খাতায় লিখে দেন দুজনের নাম।
বিয়ে পড়ানো শেষ। এর পর আনন্দ ফুর্তিতে মেতে ওঠেন ক্যাম্পবাসী। নাচ-গানের মধ্য দিয়ে খুশি ভাগবাটোয়ারা করে নেন সবাই।
বিয়ের পর সংসারের হাল ধরতে রকমারি দোকানে বসেছেন সাদ্দাম।
এদিকে নতুন ঘরকন্না সামলাতে সারা দিন ব্যস্ত শফিকা।
এভাবেই অচেনা এক দেশে, অচেনা মানুষের মাঝে কেটে যাচ্ছে নবদম্পতির জীবন।