মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর রোহিঙ্গা হত্যার স্বীকারোক্তি
রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর চালানো আগ্রাসনের কথা প্রথমবারের মতো স্বীকার করল মিয়ানমার সেনাবাহিনী।
মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক বিবৃতিতে এই স্বীকারোক্তি দেওয়া হয়েছে বলে বিবিসি জানিয়েছে।
এতে বলা হয়, মংডুর ঈন ডিন গ্রামে চালানো হত্যাযজ্ঞে নিযুক্ত ছিল চার সেনাসদস্য ও কিছু গ্রামবাসী, যারা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। সেখানে ওই চার সেনা গ্রামের একটি কবরের কাছে নিয়ে ১০ রোহিঙ্গাকে হত্যা করে।
বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, একদল রোহিঙ্গা সেনাবাহিনীর ওপর হামলা চালিয়েছিল। এর পর ওই ১০ জনকে আটক করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী তাদের পুলিশে হস্তান্তর করার কথা। কিন্তু সেনাবাহিনীর দলটি গ্রামবাসীকে প্রতিশোধ নেওয়ার ব্যাপারে উসকে দেয়।
এর আগ পর্যন্ত রাখাইনের সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিল নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।
গত ২৪ আগস্ট রাতে রাখাইন রাজ্যে একসঙ্গে ২৪টি পুলিশ ক্যাম্প ও একটি সেনা আবাসে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার পর মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী নিরস্ত্র রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশুদের ওপর নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালাতে থাকে।
আগস্ট থেকে এক বছরে রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ৪০০ রোহিঙ্গা মুসলিম নিহত হয়েছে বলে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ বারবার দাবি করলেও বেসরকারি আন্তর্জাতিক সংস্থা মেডিসিনস সানস ফ্রন্টিয়ার্সের (এমএসএফ) মতে এই সংখ্যাটি ছয় হাজার ৭০০।
এরপর রাখাইন থেকে সাড়ে ছয় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা মুসলিম বাস্তুচ্যুত হয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। রোহিঙ্গারা ভয়াবহতার বিবরণ দিতে গিয়ে বলেছেন, দেশটির সেনাবাহিনীর সদস্যরা পুরুষ সদস্যদের ধরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করছে, নারীরা প্রতিনিয়ত সেখানে ধর্ষণের শিকার হচ্ছে আর তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে।
রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতার এ ঘটনাকে জাতিসংঘ ‘জাতিগত নিধনের ধ্রুপদী উদাহরণ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। যদিও মিয়ানমারের সামরিক কর্তৃপক্ষ এবং দেশটির নেত্রী নোবেলজয়ী অং সান সু চির পক্ষ থেকে তা বরাবরই অস্বীকার করা হয়েছে।
এর আগে ২০১২ সালের জুনেও রাখাইন রাজ্য সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় আক্রান্ত হয়েছিল। তখন প্রায় ২০০ রোহিঙ্গা নিহত হন। ওই সময় দাঙ্গার কবলে পড়ে প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিল।