ধর্ম-অবমাননার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র খুনের রায় কি হবে?
ধর্ম-অবমাননার অভিযোগ এনে শতাধিক ছাত্র মিলে ঘর থেকে টেনে এনে প্রকাশ্যে রাস্তায় পিটিয়ে পাকিস্তানের মুক্তমনা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র মাশাল খানকে (২৩) হত্যার পর তাঁর শরীর থেকে মাংস খুবলে নিয়েছিল।
প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ সাংবাদিকতা ও যোগাযোগ বিষয়ের ছাত্র মাশাল খানের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ধর্ম-অবমাননার অভিযোগ না পেয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। আজ পাকিস্তানের হরিপুরের সন্ত্রাসবিরোধী একটি বিশেষ আদালত কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে এই হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করবে।
মাশাল খান ছিলেন পাকিস্তানের আবদুল ওয়ালি খান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। গত বছরের ১৩ এপ্রিল তাঁকে হত্যা করা হয়। হরিপুর আদালতের বিচারক ফাজাল খান সুবহান এ রায় ঘোষণা করবেন।
মামলার গুরুত্ব বিবেচনা করে আদালত ও এর আশপাশে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কারাগারের পাশের রাস্তাটি বন্ধ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া কারাগারে আজ দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
পুলিশের একজন কর্মকর্তা ডন নিউজকে বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, বিপুল সংখ্যক আত্মীয়স্বজন, পরিবারের সদস্য এবং সমর্থকদের আগমন ঘটবে আদালতে। এ জন্য নিরবচ্ছিন্ন নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
নিহত মাশালের বাবা ইকবাল খান সুবিচার পাওয়ার আশা করছেন। তিনি বলেন, ‘মামলাটি খুবই জোরালো। ঘটনার ভিডিওসহ সব প্রমাণ পুলিশ পেশ করেছে।‘
মামলা চলাকালীন ৫০ জনের মতো প্রত্যক্ষদর্শী আদালতে তাঁদের বয়ান দেন। তাঁদের মধ্যে মাশালের বাবা, শিক্ষক এবং বন্ধুরাও ছিলেন। এ ছাড়া হত্যার সময় ধারণকৃত ভিডিও দেখানো হয় আদালতে।
মামলায় হত্যার সঙ্গে জড়িত ৫৭ সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মাশাল খান বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এমনকি তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন, যাতে করে তাঁর স্বাক্ষর ছাড়াই শিক্ষার্থীদের ডিগ্রি লাভ নিশ্চিত হয়। উগ্র মতাদর্শে বিশ্বাসী শিক্ষার্থীদের হাতে প্রতিষ্ঠানটির হোস্টেলে থাকা শিক্ষার্থী ও নারীরা নানাভাবে নিপীড়নের শিকার হচ্ছিলেন। মাশাল খান এসবের বিরুদ্ধেও সব সময় সরব ছিলেন।
মাশাল এবং তাঁর আরেক রুমমেট সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে মুক্তচিন্তাধারার প্রচার করতেন। এ ছাড়া তাঁদের থাকার ঘরের দেয়ালে কার্ল মার্কস ও বিপ্লবী চে গুয়েভারার ছবি টানানো থাকত। দেয়ালে পেনসিল দিয়ে বিভিন্ন দার্শনিকের মুক্তচিন্তার কথা লিখে রাখতেন। এসব কারণেই তিনি উগ্র মতাদর্শীদের চক্ষুশূলে পরিণত হন এবং তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ম-অবমাননার অভিযোগ এনে মানুষকে ক্ষেপিয়ে তোলা হয়।
শুধু তাই নয়, হত্যার পর তাঁর মরদেহ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে ফেলে উগ্রবাদীরা। একপর্যায়ে লাশটি পুড়িয়ে ফেলতে চেয়েছিল বলেও পুলিশ অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছে। আর এই পুরো হত্যাকাণ্ডটি ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েও দেওয়া হয়।
মামলা তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ এবং সেই কক্ষের ওয়ার্ডেন জানান, বিশাল সংখ্যক ছাত্র ও কর্মচারী এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল।
মাশালের এক শিক্ষক বলেন, ‘সে খুবই মেধাবী এবং অনুসন্ধিৎসু শিক্ষার্থী ছিল। সব সময় দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে সমালোচনা করত। কিন্তু আমি তাঁকে কখনোই ধর্মবিরোধী কিছু বলতে শুনিনি।’