কৃষ্ণা কোহলির সিন্ধু জয়
শৈশবটা অন্য শিশুদের মতো আনন্দে কাটেনি কৃষ্ণা কুমারী কোহলির। তিনি ও তাঁর পরিবার ছিলেন পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের এক ভূস্বামীর ব্যক্তিগত কারাগারে। বাধ্যতামূলক দাস হয়ে কাটাতে হয়েছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের। শিশু হলেও রেহাই পাননি তিনি।
হঠাৎই পুলিশের এক অভিযানে জীবনের মোড় ঘুরে যায় কৃষ্ণা কুমারীদের। পাকিস্তানের ইতিহাসে কৃষ্ণা কুমারী সৃষ্টি করেছেন নতুন অধ্যায়। প্রথমবারের মতো একজন হিন্দু নারী হিসেবে সিনেটর নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।
৩৯ বছর বয়সী কৃষ্ণা কুমারী দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজীর ভুট্টোর ছেলে বিলওয়াল ভুট্টোর নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) সদস্য।
গত শনিবার পাকিস্তানের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেট নির্বাচনে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের ১০৪টি আসনের মধ্যে ৫২ আসনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সিন্ধু প্রদেশ থেকে সংরক্ষিত নারী আসনে জয়ী হয়েছেন ৩৯ বছর বয়সী কৃষ্ণা কোহলি। পাকিস্তানের সংবাদ মাধ্যম ডন ও বার্তা সংস্থা এএফপি, দ্য টেলিগ্রাফ এসব তথ্য দিয়েছে।
সিন্ধু প্রদেশের থারের নগরপারকার জেলার একটি প্রত্যন্ত গ্রামে ১৯৭৯ সালে জন্ম কৃষ্ণা কোহলির। তাঁর বাবা একজন দরিদ্র কৃষক ছিলেন। তাঁর পরিবারের সদস্যরা উমরকোট জেলার কুনরির এক ভূস্বামীর মালিকানাধীন একটি জেলে প্রায় তিন বছর আটক ছিলেন এবং দাস হিসেবে কাজ করতেন।
নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় মাত্র ১৬ বছর বয়সে লালচাঁদ নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে হয় কৃষ্ণা কোহলির। তবে তিনি পড়াশোনা চালিয়ে যান এবং ২০১৩ সালে সিন্ধু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে তিনি পাকিস্তান পিপলস পার্টিতে যোগ দেন এবং থার ও অন্যান্য অঞ্চলে বসবাসকারী প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকারের জন্য কাজ করেন।
কৃষ্ণা বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘আমি গর্বিত। আমাকে মনোনীত করার জন্য আমি পাকিস্তান পিপলস পার্টিকে ধন্যবাদ জানাই।’
মানবাধিকার কর্মী জিবরান নাসির এক টুইটার বার্তায় বলেন, ‘আমাদের গণতান্ত্রিক প্রগতির জন্য সব ধর্ম, শ্রেণী ও বর্ণের প্রতিনিধির প্রতিনিধিত্ব থাকা উচিত।’
গত শনিবারের নির্বাচনে শীর্ষে আছে ক্ষমতাসীন পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)। ওই দল ১৫টি আসনে জয়লাভ করে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তান পিপলস পার্টি আর তৃতীয় স্থানে ইমরান খানের তেহরিক-ই-ইনসাফ।