ধনরত্নবোঝাই নাৎসি ট্রেনের সন্ধান!
ধনরত্নবোঝাই নাৎসি বাহিনীর ট্রেনটি হারিয়ে গিয়েছিল ৭০ বছর আগে। তারপর ট্রেনটিকে নিয়ে তৈরি হয়েছে হাজারো গল্পগাঁথা। গত বুধবার সেই হারিয়ে যাওয়া রহস্যময় ট্রেনের সন্ধান পাওয়ার দাবি করেছে দুই অনুসন্ধানকারী। তাঁদের দাবি, ট্রেনটির কামরাগুলো স্বর্ণ ও রত্নরাজিতে পরিপূর্ণ। পোলিশ পত্রিকার সূত্রে এই তথ্য জানিয়েছে সিএনএন।
ইতিহাস বলে, ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে হারিয়ে গিয়েছিল ট্রেনটি। সোভিয়েত নেতৃত্বাধীন মিত্র বাহিনী পোল্যান্ডের দিকে অগ্রসর হলে নিশ্চিত পরাজয় জেনে জার্মানি থেকে একটি ট্রেনে করে মূল্যবান ধনরত্ন সরিয়ে ফেলেছিল নাৎসিরা। ঐতিহাসিক পুরোনো অস্ত্র, বিভিন্ন সামগ্রী, অলংকার, তৈজস, চিত্রকর্ম, বিভিন্ন ধনরত্ন, জার্মানির বিভিন্ন জাদুঘরের সংগ্রহ-সবই ছিল সেই ট্রেনে।
তখনকার সংবাদপত্রে আসা কিছু প্রতিবেদন অনুযায়ী ট্রেনটিতে ধনরাজি ওঠানোর কিছু ছবিও প্রকাশ করেছে সিএনএন। সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, ট্রেনটিতে ওঠানো হয়েছিল তৎকালীন দরে কমপক্ষে ২০ কোটি ডলার মূল্যের সামগ্রী। জার্মানি থেকে হাঙ্গেরি যাওয়ার পথে হঠাৎই রহস্যময়ভাবে নিখোঁজ হয়ে যায় ট্রেনটি। কারণ এরপর ট্রেনটির ভাগ্যে আসলে কী ঘটেছিল তার কোনো হদিস কেউ দিতে পারেনি এতদিন। কালক্রমে ট্রেনটির নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটি পোলিশ রূপকথায় স্থান পায়।
এ কাহিনী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই পোল্যান্ডের সাধারণের মধ্যে প্রচলিত ছিল। সে দেশের সরকারও বিষয়টি কখনো অস্বীকার করেনি। তারা কয়েকবার অনুসন্ধানও চালিয়েছিল। অবশ্য দেশটির ইতিহাসবিদরা বলেছেন, এর অস্তিত্ব সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
গতকাল বৃহস্পতিবার পোল্যান্ডের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা বাব্রিশের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মারিকা তোকারস্কা সিএনএনকে বলেন, ‘গতকাল (বুধবার) একটি আইনজীবী প্রতিষ্ঠান থেকে আমাদের কাছে একটি চিঠি আসে। এক পোলিশ ও একজন জার্মান নাগরিক আইনজীবীদের মাধ্যমে চিঠিটি পাঠিয়েছেন। তাঁরা দাবি করেছেন, গল্পগাঁথায় থাকা ট্রেনটির সন্ধান পেয়েছেন তাঁরা।’
তোকারস্কা আরো জানান, ‘ট্রেনের সন্ধান পাওয়া নিয়ে আমাদের বিশ্বাস রয়েছে। বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছি।’
আইনজীবী প্রতিষ্ঠানটিও তাদের পক্ষ থেকে চিঠিটি পাঠানোর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তবে চিঠির প্রেরকদের নাম উল্লেখ করেনি প্রতিষ্ঠানটি।
আইনজীবী প্রতিষ্ঠানটির সূত্রে ওই দুই গুপ্তধন সন্ধানীর দাবি, পূর্ব জার্মানির ব্রেসলাও শহর থেকেই হাঙ্গেরি যাওয়ার পথে ট্রেনটি নিখোঁজ হয়। ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ট্রেনটি নাৎসিরা একসময় ব্যবহার করত বিভিন্ন পণ্য আমদানি-রপ্তানির কাজে। কিছুদিন আগে তাঁরা ওই ট্রেনটির সন্ধান পেয়েছেন। ব্রেসলাও শহরটি বর্তমানে পোল্যান্ডের রকলো শহর নামে পরিচিত।
তোকারস্কা জানান, ‘ওই স্থানটির প্রাথমিক একটি ম্যাপ আমাদের কাছে দেওয়া হয়েছে। ওই স্থানে কীভাবে অনুসন্ধান করা যায়, সে বিষয়ে দমকল বাহিনী, পুলিশ ও অন্য কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে। তবে এটির উদ্ধার প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের ঝুঁকির বিষয়টিও মাথায় রয়েছে। ট্রেনটির মধ্যে অস্ত্রশস্ত্র, বিস্ফোরক দ্রব্য ছাড়াও মাটির ভেতরে থাকা মিথেন গ্যাসের কারণে বড় ধরনের বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। এ ছাড়া সামরিক ট্রেন হিসেবে এটিতে শুধু স্বর্ণই নয়, অস্ত্র ও তাজা বোমা এমনকি নাৎসিদের পরমাণু গবেষণার নথিপত্র থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।