বিশ্ব নিয়ে ১৫ বছর আগে সিআইএ যা বলেছিল
কত জ্যোতিষিই তো ভবিষ্যদ্বাণী দেয়—পৃথিবীর এই ঘটবে, সেই ঘটবে। তার কতটা আসলেই ঘটে তা প্রশ্নসাপেক্ষ। ঠিক ১৫ বছর আগে পৃথিবী সম্পর্কে এমনই এক ভবিষ্যদ্বাণী করে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিআইএ।
বিশ্বে সন্ত্রাসবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে ২০০১ সালে ৯/১১-এ যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ার হামলার মধ্য দিয়ে। এর মাত্র এক বছর আগে ২০০০ সালে তৎকালীন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের কাছে ২০১৫ সালের পৃথিবী সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করে একটি প্রতিবেদন জমা দেয় সিআইএ। ওই প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে মত দেওয়া হয়। ৭০ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনে সন্ত্রাসবাদ, মারণাস্ত্র ও বিশ্বের নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে।
এটি সবারই জানা ১৫ বছর আগের পৃথিবীর সঙ্গে বর্তমানের দূরত্ব যোজন যোজন। বিশ্বের ইতিহাস বদলে দেয় ২০০১ সালের ৯/১১। ওই দিন টুইন টাওয়ারসহ যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায় জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালায় আফগানিস্তানে। দুই বছর পরই ইরাকে আগ্রাসন চালায় যুক্তরাষ্ট্র। ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ এখনো বিতর্কিত। আবার যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মিত্র যুক্তরাজ্য নিজের দেশের জঙ্গিদের হামলার শিকার হয়েছে ২০০৫ সালে।
প্রযুক্তি খাতেও এসেছে অভাবনীয় পরিবর্তন। ২০০০ সালের প্রযুক্তি ১৫ বছর পর এসে যেন পূর্ণতা পেয়েছে। আইপড, আইপ্যাড ও আইফোনের শক্তিশালী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে অ্যাপল। ফেসবুক ও ইউটিউব বিশ্বকে আরো কাছাকাছি এনেছে।
আর গত ১৫ বছরে বিশ্ব দেখেছে কয়েকটি ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ যার মধ্যে ছিল ২০০৪ সালের সুনামি। আবার ২০১১ সালে জাপানে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে জাপান। দুটি দুর্যোগেই প্রাণ হারায় হাজার হাজার মানুষ।
তবে কী ছিল সিআইয়ের ভবিষ্যদ্বাণীতে
সংঘাত
সিআইএ আশঙ্কা করেছিল আনবিক বোমাবাহী ক্ষেপণাস্ত্রের কারণে রাশিয়া, চীন ও উত্তর কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের হুমকির কারণ হতে পারে। ইরাক ও ইরান যুক্তরাষ্ট্রে হামলার চালানোর মতো সক্ষমতা অর্জন করবে। প্রতিবেদনে ক্ষেপণাস্ত্রকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে হুমকি বলে দেখানো হয়। আর উত্তর কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম শত্রু হিসেবেই রয়ে যাবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, উন্নত দেশগুলোর মধ্যে যুদ্ধের শঙ্কা সীমিতই থাকবে। তবে বিশ্বব্যাপী সংঘাত একটি বড় বিষয় হিসেবেই রয়ে যাবে। ভারত-পাকিস্তান, চীন-তাইওয়ানসহ এশিয়ায় রেষারেষিপূর্ণ দেশ ও মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত বাড়বে।
সন্ত্রাসবাদ
৯/১১-এর এক বছর আগের প্রতিবেদনে সন্ত্রাসবাদকে অন্যতম বড় হুমকি হিসেবেই দেখানো হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর বড় কোনো হামলার ইঙ্গিত ওই প্রতিবেদনে ছিল না। ওই সময় থেকে ২০১৫ সালের সন্ত্রাসবাদ হবে অনেক শক্তিশালী। প্রতিবেদনে ইসলামিক স্টেটের কথা বলা না হলেও মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সন্ত্রাসী সংগঠন বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছিল।
রাশিয়া
সিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল রাশিয়ার ক্ষমতা আরো কমবে। এতে বলা হয়েছিল, ওই সময়ের চেয়ে খারাপ অবস্থায় পড়বে রাশিয়া। বিশ্বের ওপর এর ক্ষমতা নাটকীয়ভাবে হ্রাস পাবে। তবে এর পুরোপুরি সঠিক হয়েছে বলা যায় না। রাশিয়া এখনো জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্য। আর বিশ্বের রাজনীতিতেও বেশ প্রভাব রাখে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
জৈবপ্রযুক্তির বেশ উন্নয়ন ঘটবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল সিআইয়ের প্রতিবেদনে। আর ২০১৫ সালে প্রযুক্তির উন্নয়নের সুফল থেকে অনেক দেশই বঞ্চিত হবে বলা হয়েছিল। তবে বলা যায় এর পুরো উল্টোই ঘটেছে। গত ১৫ বছরে বিপ্লব ঘটেছে তথ্যপ্রযুক্তিতে। বিশ্বের প্রায় সব স্থানেই বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির সুফল পাওয়া যায়। আর প্রযুক্তি বিশ্ববাসীকে আরো কাছে এনেছে। তবে সিআইয়ের জৈব প্রযুক্তির উন্নয়ন অনেকটাই প্রশ্নবিদ্ধ। অনেক উন্নত দেশেই জিনগত পরিবর্তন করা খাদ্য নিয়ে এখনো বিতর্ক রয়েই গেছে। আরো ক্লোনিংয়ের গবেষণা এখনো প্রশ্নবিদ্ধ।
স্বাস্থ্য
সিআইয়ের প্রতিবেদনে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল, বিশ্বব্যাপী এইডস রোগীর সংখ্যা বাড়বে। এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকা মিলিয়ে এই রোগ ছড়াবে বেশি। চার কোটি শিশু এইডস আক্রান্ত হয়ে জন্ম নেবে। এই ভবিষ্যদ্বাণী যেন পুরোপুরি মিলে যায়। বর্তমানে বিশ্বে এইডস আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে তিন কোটি। আর ২০১৩ সালে এইডসে মারা গেছে ১৫ লাখ মানুষ।