‘জাস্টিস ফর ভিক্টোরিয়া’ : যে শিশু ধর্ষণের ঘটনায় বিক্ষুব্ধ মিয়ানমার
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার ছবি ছাপা হয়নি। খবরের কাগজে আসেনি তার আসল নাম। কিন্তু যে নৃশংসতার শিকার হতে হয়েছে তাকে, তা নিয়ে কথা বলছে গোটা দেশ। মিয়ানমারকে নাড়িয়ে দিয়েছে ‘ভিক্টোরিয়া’ ধর্ষণ মামলা।
গত ১৬ মে সকালে মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোর একটি বেসরকারি নার্সারি স্কুলে পড়তে গিয়েছিল দুই বছরের এক শিশু। সেদিন সন্ধ্যায় স্কুল শেষে বাড়ি ফেরার আগে কোনো একটা সময়ে ধর্ষণের শিকার হয় শিশুটি। এমন দাবি শিশুটির পরিবার ও স্থানীয় পুলিশের।
আইন অনুযায়ী, শিশুটির পরিচয় প্রকাশ করা যাবে না। কিন্তু এ ঘটনায় ফুঁসে ওঠা মিয়ানমারের বিক্ষোভকারীরা শিশুটির নাম দিয়েছে ‘ভিক্টোরিয়া’।
‘ভিক্টোরিয়া’ কিছুদিন আগে তিন বছরে পা দিয়েছে। কিন্তু শিশুটি জানেও না, তার জীবনে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মিয়ানমারের শিশু নিরাপত্তা ও যৌন নির্যাতন ইস্যু নিয়ে কী তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে।
‘ভিক্টোরিয়া’ ধর্ষণ মামলার একমাত্র সন্দেহভাজনকে আজ বুধবার আদালতে হাজির করা হয়। আজ বিচারকের কাছে ‘ভিক্টোরিয়া’র পরিবার বক্তব্য তুলে ধরবে। কিন্তু এ মামলা শুরু থেকেই হোঁচট খাচ্ছে প্রমাণ সংকট ও পরস্পরবিরোধী বক্তব্যের ঘেরাটোপে।
পুলিশ জানিয়েছে, শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পেয়ে শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে যান তার মা। সেখানে ডাক্তারি পরীক্ষা শেষে চিকিৎসক জানান, যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে শিশুটি।
শিশুটির বাবার বরাত দিয়ে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, “‘ভিক্টোরিয়া’কে যখন তার বাবা স্কুলের বাইরের সিসিটিভি ফুটেজ দেখান, তখন সে এক ব্যক্তিকে দেখিয়ে বলে ওঠে, ‘কো কো (বার্মিজ ভাষায় তরুণ অর্থে) স্কুলে এ কাজ করেছে।’”
পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, শারীরিক অবস্থা ভালো না থাকায় প্রথমে শিশুটির সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে ‘ভিক্টোরিয়া’র বাবা জানিয়েছেন, পরে শিশুটির সঙ্গে কথা বলেছে পুলিশ।
এরপরই দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয় বলে দাবি করে পুলিশ।
গত ৩০ মে ‘ভিক্টোরিয়া’র স্কুলের গাড়িচালক অং কায়ো মায়ো (২৯) ওরফে অং গাইকে আটক করে পুলিশ। কিন্তু প্রমাণের অভাবে ছাড়া পেয়ে যায় অং গাই।
এরপর বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে জানাজানি হলে ধীরে ধীরে ‘ভিক্টোরিয়া’র পাশে দাঁড়ান অনেকে। ক্রমে ‘ভিক্টোরিয়া’ ধর্ষণ মামলা মিয়ানমারে আলোচিত বিষয় হয়ে ওঠে।
এরপর মিয়ানমারের স্বাস্থ্য ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা উইন কো কো ‘জাস্টিস ফর ভিক্টোরিয়া’ নামে ক্যাম্পেইন শুরু করেন। ‘ভিক্টোরিয়া’ ধর্ষণ মামলার খাপছাড়া বিষয়গুলো একে একে নজরে আনতে শুরু করেন কো কো।
এর পরিপ্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন কো কো। তাঁর বিরুদ্ধে আনা হয় বিচারব্যবস্থা অবমাননার অভিযোগ। কিন্তু উইন কো কোর পদক্ষেপ বৃথা যায়নি। ‘ভিক্টোরিয়া’ ধর্ষণ মামলা নিয়ে সোচ্চার হন তারকারা, সমর্থন দেন এ ঘটনা নিয়ে গড়ে ওঠা বিক্ষোভে। লাখো নাগরিক নিজেদের ফেসবুক প্রোফাইলে তোলেন বিক্ষোভের প্রতীকের ছবি। গাড়ির গায়ে সাঁটা হয় বিক্ষোভের নানান স্টিকার।
গণবিক্ষোভের মুখে গত ৩০ জুন অং সান সু চির সরকারের এক মুখপাত্র জানান, জনগণের ভাষা বুঝতে পেরেছেন তাঁরা এবং যতক্ষণ না পর্যন্ত সত্য বেরিয়ে আসছে, ভিক্টোরিয়া ধর্ষণ মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।