কাশ্মীরে গণহত্যা ও মুসলিম নিধনের আশঙ্কা ইমরান খানের
স্রেব্রেনিকার মতো ভারত অধিকৃত কাশ্মীরেও আরেকটি গণহত্যা ও জাতিগত নিধনের আশঙ্কা জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। গত সপ্তাহে নয়াদিল্লি জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিলোপের পরিপ্রেক্ষিতে আজ বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন মন্তব্য করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় গণহত্যার ঘটনা হলো বসনিয়ার স্রেব্রেনিকা গণহত্যা। ১৯৯৫ সালের জুলাই মাসে সার্ব সেনারা হামলা চালিয়ে আট হাজারের বেশি মুসলিম পুরুষ ও বালককে হত্যা করে। এ গণহত্যার বিশেষ দিক হলো জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর দায়িত্বে থাকা ডাচ সেনাদের উপস্থিতিতে জাতিগত সার্বরা এই গণহত্যা চালায়।
বসনীয় মুসলিম ও ক্রোয়াটদের তাদের নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ করে স্রেব্রেনিকা দখল করে নেয় সার্বরা।
ভারতের স্বাধীনতা দিবসের দিন আজ বৃহস্পতিবার কালো দিবস পালন করছে পাকিস্তান। এরই অংশ হিসেবে নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টের প্রোফাইলে কালো ছবি ঝুলিয়েছেন ইমরান খান। আজ বৃহস্পতিবার করা টুইটে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আক্রমণ করে ইমরান খান দাবি করেন, ২০০২ সালে গুজরাটের নৃশংস দাঙ্গার মতো কাশ্মীর উপত্যকাতেও দাঙ্গা লাগাতে চান মোদি।
গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে এক হাজারের বেশি মানুষ, যাদের বেশির ভাগই ছিল ইসলাম ধর্মাবলম্বী, হত্যার বিষয়ে ইঙ্গিত করে ইমরান খান টুইটে লেখেন, ‘ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে ১২ দিন ধরে কারফিউ জারি রয়েছে। আগে থেকেই সেনাদের দখলে থাকা এ অঞ্চলে বাড়তি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের গুণ্ডাদের পাঠানো হয়েছে। ওই অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। এর আগে গুজরাটে মুসলিম নিধনের মতোই অবস্থা এখানকার।’
In IOK, 12 days of curfew, presence of extra troops in an already heavily militarized occupied territory, sending in of RSS goons, complete communication blackout; with the example of Modi's earlier ethnic cleansing of Muslims in Gujarat
— Imran Khan (@ImranKhanPTI) August 15, 2019
ইমরান খান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘বিশ্ব কি স্রেব্রেনিকার মতো ভারত অধিকৃত কাশ্মীরেও আরেকটি গণহত্যা ও মুসলিম নিধনের নীরব প্রত্যক্ষদর্শী হবে? আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সতর্ক করে বলতে চাই, যদি এখানে এমন কিছু ঘটে, তাহলে মুসলিম বিশ্ব সহিংসভাবে এর তীব্র জবাব ও প্রতিক্রিয়া দেখাবে।’
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের এক বিতর্কিত সিদ্ধান্তে নৈসর্গিক সৌন্দর্যমণ্ডিত কাশ্মীর উপত্যকার বিশেষ স্বায়ত্তশাসনের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হওয়ার পর থেকেই পারমাণবিক শক্তিধর দুই চিরশত্রু দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।
কাশ্মীরিরা আশঙ্কা করছেন, মুসলিম-অধ্যুষিত অঞ্চলের জনসংখ্যা ও এখানকার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বদলে দেওয়ার লক্ষ্যেই মোদি সরকারের এমন পদক্ষেপ। অন্যদিকে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি, সংবিধানের বিশেষ মর্যাদা কাশ্মীরিদের জঙ্গিবাদ ও মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন করা ছাড়া আর কিছুই দেয়নি।
এ ছাড়া বিতর্কিত এ ভূখণ্ডের সঙ্গে ভারতের বাকি অংশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা, ধরপাকড় ও প্রচুর সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়নের পেছনে নয়াদিল্লির যুক্তি, সম্ভাব্য সহিংসতা এড়াতেই কেন্দ্রের এমন সিদ্ধান্ত। ১২ দিন ধরে কাশ্মীর উপত্যকায় কারফিউ জারি রয়েছে।