আমি আবার সোচ্চার হব : বন্যা
বাংলাদেশে মৌলবাদের শিকড় অনেক গভীরে বলে মন্তব্য করেছেন আততায়ীদের হামলায় নিহত লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়ের স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা। নিরাপদ স্থান থেকে বিবিসির ওয়ার্ল্ড সার্ভিস রেডিওর নিউজ আওয়ারে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেই হত্যাকাণ্ডের স্মৃতিচারণ করেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় হামলার পর এই প্রথমবারের মতো তিনি কোনো সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বললেন।
হামলায় গুরুতর আহত বন্যা জানান, এখন তিনি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন ও হামলার কিছু কিছু ঘটনা মনে করতে পারছেন। তিনি বলেন, ‘যে কারণেই হোক, হামলার পর ওই ঘটনার কথা মনে করতে পারছিলাম না। আমরা ভেবেছিলাম, বইমেলা থেকে বের হয়ে পরিবারের সবার সঙ্গে রাতের খাবার খাওয়ার জন্য বাড়ি ফিরে যাই। আমি তাঁর হাত ধরে ছিলাম এবং কথা বলা শুরু করেছিলাম। এর পর আর হামলার ঘটনার কথা মনে নেই। আবার যখন জ্ঞান ফেরে তখন মনে হলো, কেউ একজন আমাকে গাড়ি করে নিয়ে যাচ্ছে, আমার সারা শরীরে রক্ত।’
হাসপাতালে প্রথম জ্ঞান ফিরে রাফিদা বুঝতে পারেন, তাঁর হাতের একটি বুড়ো আঙুল নেই। তিনি বলেন, অভিজিৎ তখনো জীবিত ছিল, তাঁকে স্ট্রেচারে রাখা হয়েছিল। আমি চিকিৎসকদের বলি, তাঁকে আগে দেখেন, আমার অবস্থা ভালো। অভিজিৎ শুধু একটি শব্দ করছিল, তখন ওর জ্ঞান ছিল না।’ তিনি বলেন, তাঁর স্বামী বিজ্ঞান ও ধর্মনিরপেক্ষতা ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে সারা জীবন কাজ করেছেন। ‘আমি আবার সোচ্চার হবো। আমরা যা বিশ্বাস করি, তাই প্রকাশ করব। যে কারণে অভিজিৎ মারা গেছেন, সেটা নিয়ে আমি চুপ থাকব না,’ যোগ করেন বন্যা।
অভিজিতের পরিবার বলেছে, মুক্তমনা ব্লগে বিজ্ঞান, যুক্তিবাদ ও ধর্মীয় মৌলবাদ নিয়ে লেখা প্রকাশের পর থেকে বিভিন্ন সময় অভিজিৎকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। এসব হুমকি তাঁরা কতটুকু গুরুত্বের সঙ্গে দেখতেন—এমন প্রশ্নে তাঁর স্ত্রী বলছিলেন, হত্যার হুমকি মূলত ছিল ফারাবী (শফিউর রহমান ফারাবী, এ মুহূর্তে পুলিশ হেফাজতে আছে) নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে। নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই ব্যক্তিকে ‘ব্লক’ করার কথাও জানান বন্যা।
হত্যার হুমকি নিয়ে বাংলাদেশে এসে নিজেদের নিরাপত্তার বিষয়টিও ভেবেছিলেন বলে উল্লেখ করেন অভিজিৎ রায়ের স্ত্রী। কিন্তু বইমেলা থেকে টিএসসির মোড় পর্যন্ত—এটুকু পথে এত মানুষের মধ্যে এ রকম একটি হামলা হতে পারে বলে এটি তাঁদের কল্পনার বাইরে ছিল বলেই জানালেন রাফিদা আহমেদ বন্যা।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আততায়ীরা অভিজিৎ রায় ও তাঁর স্ত্রী বন্যাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করে। একজন আলোকচিত্রী তাঁদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালে নেওয়ার পর অভিজিৎকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
এ ঘটনার প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে শফিউর রহমান ফারাবীকে এরই মধ্যে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তদন্তকাজে সহায়তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো এফবিআইর একটি তদন্ত দল ঢাকা ঘুরে গেছে।