থাইল্যান্ডে নতুন গণকবরের সন্ধান
থাইল্যান্ডের জঙ্গলে আরেকটি গণকবরের সন্ধান পেয়েছেন দেশটির তদন্তকারীরা। এখানে মিয়ানমার ও বাংলাদেশি অভিবাসীদের মরদেহ থাকতে পারে বলে ধারণা করছে কর্তৃপক্ষ।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, মিয়ানমার ও বাংলাদেশ থেকে অবৈধ উপায়ে নিজেদের জীবন বিপন্ন করে সমুদ্র পথে পাড়ি দেয়। প্রতিবছর পাচারকারীদের সহায়তায় এভাবে হাজারো মানুষ থাইল্যান্ডে পৌঁছায়। এরপর অনেককে সড়ক পথে গহীন জঙ্গলের ভেতরে থাকা বন্দিশিবিরে নেওয়া হয়। এই বন্দিশিবিরে জিম্মি রেখে পাচারকারীরা মুক্তিপণ নিয়ে অভিবাসীদের সীমান্তবর্তী মালয়েশিয়ায় পাঠিয়ে দেয়। মুক্তিপণ না পেলে তাদের নির্যাতন করে, এমনকি হত্যা করা হয়।
থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ শংখলার পাদাং বেসার এলাকার নতুন গণকবরটি পাওয়া গেছে। এর আগেও এর পাশেই আরেকটি গণকবর পাওয়া যায়, যেখান থেকে অন্তত ১০ বাংলাদেশিসহ ২৬টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
এদিকে, মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এদের মধ্যে আছেন স্থানীয় পৌরসভার কাউন্সিলর আসান ইনতানু, বান তালো গ্রামের সহকারী হেডম্যান রর-আই সন্যালে, হেডম্যানের সহকারী আলি লামোহ এবং মিয়ানমারের নাগরিক স নিয়াং আনোয়ার (৪০)। এ ছাড়া স্থানীয় এক রাজনীতিক মানব পাচার চক্রের মূল হোতা বলে ধারণা করছে পুলিশ। তাঁর নাম প্রকাশ করা হয়নি।
রোহিঙ্গা ব্যক্তির জন্য মুক্তিপণ দাবির অভিযোগে আটক করা হয় আনোয়ারকে। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি দক্ষিণাঞ্চলে মানবপাচারের প্রধান দালাল।
এই চক্রের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে যে চারজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। তাঁরা হলেন পেদাং বাসার পৌরসভার ডেপুটি মেয়র প্রসিত লামলেহ, বান তালো গ্রামের প্রধান ইয়ালি ক্রেম, চারোয়েন থংটাডায়েং ও পাকাপল বেনলাতে।
পুলিশপ্রধান সম্যত পুমপানমুয়াং বলেন, মানবপাচারচক্রের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আরো যে চারজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হবে, এদের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। তিনি এই বন্দিশিবির পরিচালনা করতেন।
পুলিশপ্রধান বলেন, এই এলাকায় গত বছর দুই রোহিঙ্গাকে গুলি করে হত্যাকারীকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তদন্তকারীদের। মানবপাচারের সঙ্গে স্থানীয় পৌরপ্রধানের যোগাযোগের ব্যাপারে এই ব্যক্তি কর্তৃপক্ষকে তথ্য দিতে পারবে বলে মনে করা হচ্ছে। তিনি জানান, সুপারিনটেনডেন্ট পুলিশ কর্নেল ওরাসান থানপিয়ামসহ পেদাং বেসার থানার উচ্চ পর্যায়ের পাঁচ কর্মকর্তাকে বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সাতুন পুলিশের কমান্ডার পুলিশ মেজর জেনারেল সানথ্রন চালের্মকিয়ার্টের বদলির নির্দেশনামায় তিনি সই করেছেন। এই কমান্ডার সাতুনে একটি চক্রকে সহযোগিতা করেছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। আন্দামান সাগরের উপকূলবর্তী পাঁচটি প্রদেশের একটি হলো সাতুন। এই সাগর দিয়েই নৌযানে করে অবৈধভাবে রোহিঙ্গারা থাইল্যান্ডে প্রবেশ করে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মানব পাচার, আটক ও মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগ আনা হয়েছে। আরসানের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিনা অনুমতিতে আগ্নেয়াস্ত্র বহনের অভিযোগও আনা হয়েছে। গ্রেপ্তারের সময় আরসানের কাছ থেকে আটটি গুলিসহ একটি পিস্তল জব্দ করা হয়। তাঁরা তাঁদের বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
সম্যত বলেন, তিনি শংখলায় প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুত চান-ও-চা ও উপপ্রধানমন্ত্রী প্রাবিত উংসুবানকে এ মামলার দায়িত্ব দিয়েছেন। মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত যেকোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আবিষ্কৃত বন্দিশিবিরের পাশে টহল পুলিশ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই অবৈধচক্রের সঙ্গে কর্মকর্তারা জড়িত থাকলে তা প্রমাণিত হবে। তিনি বলেন, ‘যদি তাঁরা দোষী সাব্যস্ত হন তাহলে অবশ্যই তাঁদের শাস্তি পেতে হবে।’
পুলিশপ্রধান আরো বলেন, ‘বন্দিশিবির ও গণকবরের সঙ্গে মানবপাচার চক্রের যোগাযোগ রয়েছে এবং এর সঙ্গে বহুজাতি জড়িত, এই বিষয়টি এখন পরিষ্কার।’
বন্দিশিবিরের পাশে যেখানে গণকবর পাওয়া গেছে তার ২০০ মিটার দূরে গত সোমবার কর্মকর্তারা তিন থেকে পাঁচটি জায়গার সন্ধান পেয়েছেন, সেখানে আরো কবর রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই অবৈধ চক্রকে আটকে সহযোগিতার জন্য অন্য আরেক পুলিশ দলের নেতৃত্বদানকারী পুলিশ জেনারেল চাকথিপ মালয়েশিয়া ও মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। চাকথিপ বলেন, এই বহুজাতিক অপরাধ চক্রের সঙ্গে থাই, মিয়ানমার ও মালয়েশিয়ার নাগরিকরা জড়িত রয়েছে এবং এটি তিন থেকে চার বছর ধরে পরিচালিত হচ্ছে।