সাগরে ভাসছে কয়েক হাজার বাংলাদেশি
জাতিসংঘের অভিবাসনবিষয়ক সংস্থা (আইওএম) জানিয়েছে, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের কয়েক হাজার অবৈধ অভিবাসী থাইল্যান্ড উপকূলের কাছে সাগরে ভাসছে। সাগরে কয়েকদিন ধরে ভাসতে থাকা অভিবাসীদের সংখ্যা আট হাজারের মতো হতে পারে বলে সংস্থাটির একজন মুখপাত্রের বরাতে জানিয়েছে বিবিসি।
ওই মুখপাত্র বিবিসিকে জানান, সাম্প্রতিক সময়ে থাই নিরাপত্তারক্ষীদের তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় অভিবাসীদের গভীর জঙ্গলে গোপন শিবিরে না রেখে পাচারকারীরা তাদের সাগরের বুকে ভাসিয়ে রাখছে। মানবপাচারের বিরুদ্ধে থাইল্যান্ডে ব্যাপক অভিযান শুরু হওয়ার পরই নতুন কৌশল অবলম্বন করেছে পাচারকারীরা।
এদিকে মালয়েশিয়ার পুলিশ এএফপিকে জানিয়েছে, সোমবার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের লাংকাউই দ্বীপে নৌকায় করে এক হাজারেরও বেশি অভিবাসী এসে নেমেছে। গভীর রাতে তিনটি নৌকায় এদের এনে তীরে নামিয়ে দেওয়া হয়।
লাংকাউইর পুলিশ কর্মকর্তা জামিল আহমেদের বরাতে এএফপি জানায়, মোট এক হাজার ১৮ জন অভিবাসীর মধ্যে ৫৫৫ জন বাংলাদেশি এবং ৪৬৩ জন মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম। অভিবাসীদের মধ্যে প্রায় একশর মতো মহিলা এবং ৫০টিরও বেশি শিশু রয়েছে।
শুধু থাইল্যান্ড ও মালেয়শিয়াতেই নয়, ভাসতে থাকা এসব অভিবাসীদের গত দুদিন ধরে পাচারকারীরা তীরের কাছাকাছি যেখানে পারছে নামিয়ে দিচ্ছে। আজ সোমবার সকালে ইন্দোনেশিয়ায় পুলিশের সূত্রে এএফপি জানায়, আচেহ প্রদেশের উপকূলের কাছে একটি নৌকা থেকে গতকাল রাতে চারশোর মতো অভিবাসীকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে গত দুদিনে ইন্দোনেশিয়ার উপকূল থেকেও এক হাজারের মতো বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করা হলো।
রোববার উদ্ধার হওয়া ৬০০ জনকে আচেহর একটি ফুটবল স্টেডিয়ামে নিয়ে রাখা হয়। উদ্ধার হওয়া অভিবাসীরা পুলিশকে জানিয়েছে, তীরে নামার আগে তাদের নৌকাগুলো সপ্তাহখানেক ধরে সাগরে ভাসছিল। খাবার ফুরিয়ে যাওয়ায় দুদিন ধরে না খেয়ে ছিলেন তাঁরা।
জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার হিসাবে, এ বছরের প্রথম তিন মাসে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে ২৫ হাজারের মতো অভিবাসী নৌকায় করে অবৈধভাবে প্রধানত মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে রওনা হয়।
ইয়াহু নিউজ জানায়, মিয়ানমারে প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গা বাস করে। এদের সবাইকে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী হিসেবে বিবেচনা করে দেশটির সরকার। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মাঝেমধ্যেই জাতিগত সহিংসতার শিকার হয়। এ কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় অনেক রোহিঙ্গা দেশটি ছেড়ে পালাচ্ছে।
রোহিঙ্গাদের অধিকারবিষয়ক সংগঠন আরাকান প্রকল্পের কর্মকর্তা ক্রিস লেওয়া এএফপিকে বলেন, থাইল্যান্ডে সম্প্রতি মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে তিনি ধারণা করছেন কয়েক হাজার অভিবাসী সমুদ্রে আটকা পড়েছে। তিনি বলেন, ‘মানবপাচারকারীদের ব্যবসা করতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে থাইল্যান্ড। এর ফলে তারা বাধ্য হয়ে অন্য কোথাও চলে যাচ্ছে। দালালরা বন্দিশিবির হিসেবে জাহাজ ব্যবহার করছে।’
ক্রিস লেওয়া বলেন, মরে যাওয়ার আগে তারা তীরে নামার চেষ্টা করছে। তিনি জানান, জাহাজে কোনো খাবার থাকে না। এ ধরনের আরো জাহাজ ইন্দোনেশিয়ার উপকূলে আসতে পারে বলেও তিনি আশঙ্কা করেন।
আগে পথ হারিয়ে বা জ্বালানির অভাবে নৌভর্তি রোহিঙ্গা আচেহ প্রদেশে আসত। তবে ইন্দোনেশিয়ার কর্মকর্তারা বলছেন, রোববার সকালে প্রথম গ্রুপটি আচেহ প্রদেশের উপকূলে নামে, কারণ তাদের মিথ্যা কথা বলা হয়েছিল। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থার কর্মকর্তা দারসা (অনেকের মতো তার এক শব্দের নাম) এএফপিকে বলেন, ‘মালয় ভাষা বলতে পারেন এমন একজন অভিবাসী আমাকে বলেছেন যে, তাঁদের এজেন্ট (দালাল) বলেছে তাঁরা মালয়েশিয়ায় চলে এসেছেন। এরপর সে সবাইকে সাঁতরে তীরে উঠতে বলে।’